শর্তের বেড়াজালে নায়েক রাজ্জাক

শর্তের বেড়াজালে আটকা পড়েছেন বিজিবির নায়েক আব্দুর রাজ্জাক। এই শর্ত মিয়ানমারের পক্ষ থেকে দেওয়া হলেও বাংলাদেশ তা মানতে রাজি হচ্ছে না।

এর আগে সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, কোন শর্ত নয়, মিয়ানমারের প্রচলিত আইনে বিচারের মাধ্যমে রাজ্জাককে ফেরত দেওয়া হবে।

সোমবার রাতে চীনে অবস্থানরত বিজিবির মহাপরিচালকের বরাত দিয়ে সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মহসীন আলী এক বার্তায় বলেন, ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অপহৃত নায়েক আবদুর রাজ্জাককে নিঃশর্তভাবে সসম্মানে ফেরত দেওয়ার কথা জানিয়েছে মিয়ানমার।’

সংবাদমাধ্যমে রাতে পাঠানো ওই বার্তায় বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ জানান, মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা অ্যাটাশে (ডিএ) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহাবুরের সঙ্গে সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় কথা হয়েছে তার। তিনি তাকে জানিয়েছেন, তিনি মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। মিয়ানমারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিঃশর্তে রাজ্জাককে তার অস্ত্রসহ সসম্মানে ফেরত দেওয়া হবে।

এতদিন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বৈঠকের অনুমতি না পাওয়ার অজুহাত দিয়ে আসছিল মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। তবে মঙ্গলবার তারা নতুন সুর তুলেছে। তারা বলেছে, শর্ত সাপেক্ষে ফিরিয়ে দেওয়া হবে রাজ্জাককে। আর শর্ত হলো সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় উদ্ধার হওয়া ৫৫৫ জনকে ফেরত নিলে তবেই রাজ্জাককে ফেরত দেওয়া হবে।

সোমবার বিজিবির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে বিজিপির ২ নম্বর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. তিন কো কো বিশেষ কিছু শর্তে রাজ্জাককে মুক্তির আশ্বাস দেন। বিকেল ৪টার দিকে কো কো’কে ফোন করেন ৪২ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু জার আল জাহিদ। কো কো এ সময় রাজ্জাককে ফেরত দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন। তবে বৈঠক মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান। কখন, কোথায় বৈঠক হবে জানতে চাইলে কো কো বলেন, ‘রাজ্জাককে ফেরত নিতে হলে বঙ্গোপসাগর থেকে উদ্ধার হওয়া ৫৫৫ জনকে ফেরত নিতে হবে। এই ৫৫৫ জন বাংলাদেশি।’ এর জবাবে লে. কর্নেল জাহিদ বলেন, ‘রাজ্জাক আর অভিবাসীদের বিষয় তো এক নয়।’

এদিকে বিজিবির নায়েক আবদুর রাজ্জাককে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের শর্ত জুড়ে দেওয়াকে ‘অতিরিক্ত’বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার রাজ্জাককে ফেরত দিতে শর্ত হিসাবে দেশটিতে আটক পাঁচ শতাধিক মানুষকে বাংলাদেশে আনার শর্ত জুড়ে দিয়েছে। এটা কাম্য নয়। আমরা তাদের বলেছি, আটক লোকদের নাম-ঠিকানা সম্বলিত তালিকা পাঠান, তারা বাংলাদেশি হলে আমরা অবশ্যই ফেরত নেবো।’

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘রাজ্জাককে বিজিপির ধরে নিয়ে যাওয়া এবং দেশটিতে আটক লোকদের বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। ওই লোকজনের বিষয়টি তদারকি করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আর রাজ্জাকের ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখছে।’

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, ‘বিজিবির মহাপরিচালক আশ্বাস দিচ্ছেন কোনো শর্ত ছাড়াই নায়েক রাজ্জাককে ফেরত দেবে মিয়ানমার। আর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে শোনা যায় নতুন শর্তের কথা। এই শর্তের বেড়াজালে রাজ্জাক কী আটকে থাকবেন ওই দেশে?’ কূটনৈতিক পর্যায়ে জোর তৎপরতা চালানো উচিত বলে মনে করেন তিনি। তাছাড়া ভারত এবং চীনের সঙ্গে আলোচনা করে মিয়ানমারের ওপর একটা চাপ সৃষ্টি করার কথাও বলেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, ‘সাগরে উদ্ধার হওয়া ৫৫৫ জন যদি বাংলাদেশের না হয় তবে তারা কি রাজ্জাকের বিনিময়ে কৌশলে এদেশে রোহিঙ্গাদের ঢুকিয়ে দিতে চাইছে? এরকমই যদি না হয় তবে কেন রাজ্জাকের মুক্তির ব্যাপারে উল্টা-পাল্টা শর্ত দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকলের গভীরভাবে ভাবা প্রয়োজন।’



মন্তব্য চালু নেই