‘লাখ লাখ বস্তিবাসী এখনও স্যানিটেশন সুবিধার বাইরে’

দেশের বড় বড় শহরে বসবাসকারী লাখ লাখ বস্তিবাসী এখনও স্যানিটেশন সুবিধার বাইরে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। মন্ত্রী এসময় সিটি করপোরেশনগুলোকে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থার দিকে নজর দেয়ার আহ্বান জানান।

রাজধানীর কাকরাইলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে রবিবার ‘জাতীয় স্যানিটেশন মাস অক্টোবর-২০১৬’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে বস্তিগুলোতে বহু লোক বসবাস করে এবং এদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা করতে না পারলে আমরা কোনোভাবেই নিরাপদ নই।

দ্রুত নগরায়নের ফলে দিন দিন বস্তিবাসীর সংখ্যা বাড়ছে-উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, নগর পরিকল্পনাবিদ, বিশেষ করে এনজি এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসহ সকলের কাছে অনুরোধ এখন থেকেই আপনারা পরিকল্পনা গ্রহণ করে সঠিকভাবে তা বাস্তবায়ন করুন, যাতে ২০৩০ সালের মধ্যে সকলের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ স্যানিটেশন নিশ্চিত এবং খোলা জায়গায় মলত্যাগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।’

স্যানিটেশন বিষয়ে সচেতনা বৃদ্ধি করতে না পারলে অন্যান্য ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্য কাঙ্ক্ষিত সুফল বয়ে আনবে না জানিয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন স্থাপন পূর্বশর্ত হলেও ল্যাট্রিন নির্মাণ, ব্যবহার, হাত ধোয়ার অভ্যাসসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যাভ্যাস নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

স্যানিটেশনে সার্বিক উন্নয়নে গণমাধ্যমের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘স্যানিটেশন বিষয়ে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে পারে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক বন্ধুরা। আমি তাদেরকে মিডিয়ার মাধ্যমে স্যানিটেশন ও ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচর্যার বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে ভূমিকা রাখতে অনুরোধ করবো।’

অনগ্রসর দরিদ্র মানুষগুলোকে স্যানিটেশন বিষয়ে সচেতন করে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তাদেরকে স্যানিটেশনের আওতায় আনা দরকার। আত্মতৃপ্তি নিয়ে বসে থাকলে স্যানিটেশন কার্যক্রমে অর্জিত সাফল্য ধরে রাখা এবং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করা যাবে না। স্যানিটেশন পরিস্থিতি আরও উন্নত করতে নতুনভাবে জরিপ করে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এ উদ্দেশ্যে মাঠ পর্যায়ে সমম্বিতভাবে উদ্ধুদ্ধকরণ কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে বাস্তবসম্মত কর্র্মসূচি কৌশল গ্রহণ করতে হবে।’

সুস্থভাবে বাঁচার জন্য নির্মল পরিবেশের কোনো বিকল্প নেই-উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘সুন্দর পরিবেশ গড়তে যত না অর্থের প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা। স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহারের বিষয়ে সকলের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা গেলে পরিবেশ দূষণ অনেকাংশে কমে যাবে। এর ফলে জনগণের স্যানিটেশনের অভাবজনিত কারণে সংক্রামক রোগজীবানু থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, পেটের পীড়া, জন্ডিস, টাইফয়েডের মতো শতকরা ৮০ ভাগ সংক্রামক রোগ স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিনের অভাব ও সঠিক স্বাস্থ্যবিধি পালন না করার কারণে হয়ে থাকে। উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে প্রায় সব ধরনের মারাত্মক সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।’

দেশে ২০০৩ সালে যেখানে দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৩৩ ভাগ স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহারে অভ্যস্ত ছিল সেখানে বর্তমানে শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষ তা ব্যবহার করছে এবং এটা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী।

সারাদেশে শতভাগ স্যানিটেশন অর্জনের পথে আমাদের সামনে এখনো অনেক অন্তরায় রয়েছে উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ‘এলাকাভেদে স্বাতন্ত্র থাকায় বাংলাদেশে প্রতিটি অঞ্চলের মানুষকে স্যানিটেশনের আওতায় আনার লক্ষ্যে এলাকার ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, বন্যা, জলাবদ্ধতার প্রকোপ, স্থানীয় মূল্যবোধ, সংস্কৃতি ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে লাগসই, টেকসই ও সাশ্রয়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও প্রসার ঘটানো প্রয়োজন। তাছাড়া বাংলাদেশ প্রতিবছর নানা দুর্যোগের কবলে পড়ে। এতে অন্যান্য স্থাপনার মতো স্বল্পমূল্যের ল্যাট্রিনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্যানিটেশন ব্যবস্থা টেকসই করার জন্য অন্যান্য স্থাপনার সঙ্গে ল্যাট্রিন পুনঃনির্মাণেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে।”

এবারের ‘জাতীয় স্যানিটেশন মাস অক্টোবর-২০১৬’ এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘উন্নত স্যানিটেশন সুস্থ জীবন’।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার গুলশানে অনেক বিত্তশালীরা ফুটপাত দখল করে আছে। অবিলম্বে তারা ফুটপাত থেকে সরে না গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সিটি করপোরেশন।”

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে দুইজায়গা থেকে ফুটপাত সরানোর জন্য বুলডোজার ব্যবহার করা হয়েছে। অনেকেই ফুটপাত ছেড়ে দিয়েছে। যেসব বিত্তশালী এখনো সরেননি। তারা দ্রুত না সরলে বুলডোজার দিয়ে সরানো হবে।’

ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদে খোকন বলেন, “সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা ঢাকা সিটিকে তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তুলবো। এজন্য দরকার সকল সংস্থা এবং নাগরিকদের সহযোগিতা। আশা করি খুব শিগগিরই আমরা ঢাকাকে পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে ঘোষণা করবো।”

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আব্দুল মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা।



মন্তব্য চালু নেই