লতিফ পেরেছেন, তসলিমা পারেননি!

ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (সাঃ) কে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। শত চেষ্টা করেও তিনি দেশে ফিরতে পারেননি। কিন্তু ঠিক একই কাজ করে দিব্বি দেশে ফিরে এসেছেন সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। গ্রেফতারী পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দেশে ফিরলেও তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। উল্টো বিমানবন্দরে পুলিশকে ধমকিয়েছেন তিনি।

লতিফ সিদ্দিকীকে নিয়ে যখন দেশব্যাপী তোলপাড় চলছিলো তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ছিলেন না। দেশে ফিরে তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, লতিফ সিদ্দিকী গর্হিত কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা। এরপর গত ১২ অক্টোবর তাকে মন্ত্রী ও দলীয় সভাপতিমন্ডলীর সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

সর্বশেষ ২৪ অক্টোবর দলের সদস্যপদ থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়। এখন যেকোন সময় বির্তকিত ওই সাবেক মন্ত্রীকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় এনে সরকার তার স্বচ্ছতার প্রমাণ দেবেন। যাতে করে দেশের মধ্যে বির্তকিত ব্যক্তিকে নিয়ে কোন রাজনৈতিক গোষ্ঠী আন্দোলনের নামে নতুন কোন খেলা খেলতে না পারে সেদিকে প্রধানমন্ত্রী কঠোর নজর দেবেন বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থক থেকে শুরু করে ইসলাম প্রিয় জনগন।

সূত্রমতে, বিভিন্ন সময় ইসলাম ধর্ম নিয়ে নানা মন্তব্য করায় প্রায় ২০বছর ধরে নির্বাসনে রয়েছেন নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন। ইসলামপ্রিয় জনতার কঠোর আন্দোলন-কর্মসূচীর মুখে ১৯৯৪ সালে তিনি দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এরপর থেকে তিনি বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মাতৃভূমি বাংলাদেশে আসার জন্য তিনি অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।

সম্প্রতি নিউইয়র্কে হজ্ব, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাবলিগ জামাত নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব ও আওয়ামী লীগের দলীয় পদ হারিয়েছেন আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। এরপর তার বিরুদ্ধে দেশের ১৮ জেলায় ২২টি মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয়। এতোগুলো গ্রেফতারী পরোয়ানা মাথায় নিয়েও বুক ফুলিয়ে দেশে ফিরেছেন লতিফ সিদ্দিকী। এমনকি বিমানবন্দর থেকে পুলিশি নিরাপত্তায় তিনি অজ্ঞাতস্থানে আত্মগোপনও করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

অপরদিকে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের খবরে দাবি করা হয়েছে, বিমানবন্দরের বিশ্রামাগারে পুলিশকে দেখে ধমকও দিয়েছেন সাবেক এই মন্ত্রী। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে ওই অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্রামাগারে অবস্থানকালে যখন পুলিশ তার কাছে আসে তখন তিনি পুলিশকে লক্ষ্য করে বলেন, তোমরা এখানে কেন? আমি কি আসামি? এদিকে বিমানবন্দরে লতিফ সিদ্দিকী আরো দুই যুবককে ধমক দিয়েছেন বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছেন।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর একই বিমানে আসা এক নারী যাত্রীর প্রশ্নের মুখে লতিফ সিদ্দিকী জানিয়েছেন, তিনি নির্ভয়ে দেশে ফিরেছেন। ওই নারী যাত্রী বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে মিডিয়াকর্মীদের বলেছেন, ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষ করার আগে লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন।

এসময় তিনি লতিফ সিদ্দিকীর উদ্দেশে বলেন, দেশের মানুষ আপনার প্রতি ক্ষুব্ধ। তারপরও আপনি দেশে ফিরেছেন কেন। আপনার কি কোন ভয় নেই। জবাবে লতিফ সিদ্দিকী ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, কিসের ভয়। আমি ভয় করি না। এসময় দুই যুবক তার দিকে অবাক হয়ে তাকালে লতিফ সিদ্দিকী ‘কি দেখছো’ বলে তাদের ধমক দেন।

উল্লেখ্য, গত ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি হোটেলে সেখানকার টাঙ্গাইল সমিতির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি কিন্তু হজ্ব আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী। তবে তার চেয়েও হজ্ব ও তাবলিগ জামাতের বেশি বিরোধী। এ হজ্বে যে কত ম্যানপাওয়ার (জনশক্তি) নষ্ট হয়। হজ্বের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গিয়েছে। এদের কোনো কাম নাই। এদের কোনো প্রডাকশন নাই। শুধু রিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা দিয়ে আসছে। এছাড়াও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে নিয়ে তিনি আপত্তিকর মন্তব্য করেন।’

লতিফ সিদ্দিকীর এই বক্তব্যের পর সারাদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এ কারণে তিনি নিউইয়র্ক থেকে আর দেশে ফেরেননি। তিনি ভারতের কলকাতায় অবস্থান করছিলেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমকে টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বারবারই বলেছিলেন, তিনি দেশে ফিরবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঘটনার প্রায় দুই মাস পর বিতর্কিত এই সাবেক মন্ত্রী দেশে ফিরলেন।



মন্তব্য চালু নেই