রয়টার্সকে যা বললেন অভিজিতের স্ত্রী

একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের আঘাতে প্রাণ হারানো যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ও ব্লগার অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনা করেছেন।

রাফিদা বলেন, ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পিত ও সাজানো ঘটনা ছিল এটি (অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড)। কিন্তু যা আমাকে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগে ফেলেছে তা হলো, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কেউ-ই আমার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে আসেনি। এতে মনে হয়েছে, আমি যেন বেঁচেই নেই এবং উগ্রপন্থিদের নিয়ে তারা ভীত। বাংলাদেশ কি আরেকটি আফগানিস্তান বা পাকিস্তান হতে যাচ্ছে?’

একুশে বইমেলা চলাকালে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের কাছে অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদের ওপর হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এতে নিহত হন অভিজিৎ। রাফিদার মাথায় চারটি আঘাত লাগে এবং তার বাঁ হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল কাটা পড়ে। ৩ মে এই হামলার দায় স্বীকার করে ভারতীয় উপমহাদেশীয় আল-কায়েদার শাখা প্রধান ভারতীয় বংশোদ্ভূত জঙ্গি নেতা। পাকিস্তানেও এ ধরনের হামলার দায় স্বীকার করেন তিনি।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, সৃষ্টিকর্তায় অবিশ্বাসী অভিজিৎ বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে ব্লকে লিখতেন। বাংলাদেশ সরকারের জঙ্গিবিরোধী কর্মকাণ্ডও তার ব্লগে স্থান পায়। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ও দরিদ্র গণতন্ত্রের দেশে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, যেখানে ধর্মীয় মৌলবাদের হুমকি মোকাবিলা করতে হয় সরকারি কর্মকর্তাদের।

রয়টার্সকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় স্বামীর হত্যার বিরুদ্ধে যথেষ্ট তৎপরতা গ্রহণ না করায় বাংলাদেশ সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন রাফিদা আহমেদ।

‘সবকিছু ঠিকঠাক এগোচ্ছে’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় একই ইস্যুতে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমার মা ব্যক্তিগতভাবে অভিজিতের বাবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এতটাই অস্থির যে তিনি প্রকাশ্যে এ নিয়ে মন্তব্য করতে পারেন না। অভিজিৎ একজন আত্মস্বীকৃত নাস্তিক। তিনি মৃত্যুর আগে যে বইটি প্রকাশ করেন, তার নাম ছিল বিশ্বাসের ভাইরাস।

জয় বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হচ্ছে। সবকিছু ঠিকঠাকভাবেই এগোচ্ছে। আমরা নিজেদের নাস্তিক হিসেবে দেখতে চাইছি না। এ নিয়ে আমাদের মৌলিক বিশ্বাসে কোনো পরিবর্তন আসবে না। আমরা অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করি। কিন্তু বিষয়টি বিরোধী দল ন্যক্কারজনকভাবে আমাদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় কার্ড হিসেবে ব্যবহার করে।’

ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের মুখপাত্র শামিম আহমেদ রয়টার্সকে বলেন, ‘কেন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কেউ রাফিদা আহমেদের সঙ্গে দেখা করেননি, তা আমি জানি না। তবে অভিজিৎ হত্যায় আমরা মর্মাহত এবং এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে সব ধরনের ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে বাংলাদেশ সব সময়ই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’



মন্তব্য চালু নেই