রোজায় মক্কায় হোটেল ব্যবসায় রমরমা

এবার রোজায় মক্কা নগরীতে হোটেলের কক্ষ ও স্যুট ভাড়া হওয়ার হার নতুন রেকর্ড গড়েছে। মাসের শেষ ১০ দিনের জন্য এরইমধ্যে শতভাগ কামরা বুকিং হয়েছে, যার মোট মূল্য একশ কোটি রিয়াল ছুয়েছে।
হোটেল ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিতদের বরাত দিয়ে সৌদি গেজেটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোজার শেষ দশ দিনের জন্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি ও এজেন্সিগুলো মক্কার হোটেলগুলোর এক লাখ ৬২ হাজার কক্ষের মধ্যে এক লাখ ২৪ হাজারের জন্য এরইমধ্যে অর্থ দিয়েছে।
এ সময়ে এসব কক্ষের ভাড়াও বেড়েছে প্রায় ১৫ গুণ। রোজার প্রথমদিকে যেসব কক্ষের ভাড়া ছিল দুই থেকে আড়াই হাজার রিয়াল, শেষ দশ দিনে সেগুলো বিকোচ্ছে ২৭ থেকে ৩৬ হাজার রিয়ালে।
“আমাদের হোটেলের কক্ষগুলো পবিত্র এ মাসের অনেক আগেই বুকিং হয়ে গেছে। কয়েকটি কক্ষ অবশ্য ব্যবসায়ী নারী-পুরুষরা সেমি-বুকিং দিয়ে রেখেছেন,” বলেন মক্কার একটি হোটেলের রিজার্ভেশন ও বিপণন ব্যবস্থাপক রিদা চেলবি।
হোটেলের ৮১০টি কক্ষ পুরো রোজাতেই ‘ভরা’ ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথম ১০ দিন ইফতারসহ প্রতিটি ‘সিঙ্গেল’ রুমের ভাড়া হয় ১৯৫০ থেকে ২৫০০ রিয়ালের মধ্যে।
এ সময় দুই বেডের কক্ষের ভাড়া ১৯৫০ রিয়াল, তিন বেডের কক্ষ ২২০০ এবং চার বেডের কক্ষের ভাড়া ছিল আড়াই হাজার রিয়াল।
সেখানে রোজার শেষ ১০ দিনের জন্য ইফতারসহ দুই বেডের কক্ষ ২৭ হাজার রিয়াল, তিন বেডের কক্ষ ৩২ হাজার এবং চার বেডের কক্ষ ৩৬ হাজার রিয়ালে উঠেছে।
অন্য একটি হোটেলের অভ্যর্থনাকর্মী আবদুল্লাহ আল-সুহাইমি বলেন, এবার রোজার মত চাহিদা আগে দেখেননি তিনি। গত বছর যেখানে ৮০ শতাংশ কক্ষ ভাড়া হয়েছিল এবার সেখানে এ হার ৯৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
তাদের হোটেলে রোজার শুরুতে দুই বেডের কামরার ভাড়া ১৭০০ রিয়াল এবং তিন বেডের কামরার ভাড়া ছিল ২৪০০ রিয়াল। এই ভাড়াতেই প্রতিদিন ইফতার এবং হোটেল ও হারেম শরীফে যাতায়াতের সুবিধা দেওয়া হয়।
“শেষ ১০ দিন সব কামরা বুকিং হয়েছে শতভাগ। ভাড়াও বেড়েছে, এখন ২৫ থেকে ৩১ হাজার রিয়াল ছাড়িয়েছে; তারপরও প্রতিদিন বুকিংয়ের অনুরোধ আসছে,” সৌদি গেজেটকে বলেন তিনি।
মক্কায় সৌদি কমিশন ফর ট্যুরিজম অ্যান্ড ন্যাশনাল হেরিটেজের মহাপরিচালক ফয়সাল আল-শরীফ জানান, বর্তমানে এই নগরীতে পূণ্যার্থী ও পর্যটকদের থাকার জন্য এক লাখ ৬২ হাজারের বেশি হোটেল কক্ষ রয়েছে।
“আমরা মক্কায় ৯৪৭টি হোটেল ও অ্যাপার্টমেন্টকে লাইসেন্স দিয়েছি। সেগুলোর মধ্যে ৪৮০টি হোটেল ও ১০৭টি অ্যাপার্টমেন্ট এখন কার্যক্রমে আছে।”
মক্কায় ৩০টি পাঁচ তারকা, ২৮টি চার তারকা, ১২৫টি তিন তারকা ও ১০৫টি দুই তারকা হোটেল রয়েছে।
ফয়সাল আল-শরীফ জানান, মক্কার হোটেলগুলোতে মোট কক্ষ এক লাখ ৬২ হাজার ৪৯৩টি এবং সেগুলোতে ১৮ লাখ ৯০ হাজার মানুষের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। অন্যদিকে আবাসিক অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে আছে ১৩ হাজার ৬৯১টি কক্ষ, যেখানে মাসে এক লাখ ৬৪ হাজার জনকে রাখার বন্দোবস্ত আছে।
দুইয়ে মিলে প্রতিমাসে মক্কায় ২০ লাখ মানুষের থাকার সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।
অর্থনৈতিক পরিকল্পনা পুনর্বিন্যাসের অংশ হিসেবে চলতি বছরের শুরুতে হজ থেকে আয় বাড়ানোর সৌদি সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল বিবিসি।
পরিকল্পনা অনুযায়ী তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে হজ ও ‘ধর্মীয় পর্যটন’ ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজানোর কথা বলেছেন তারা। এর মধ্যে আছে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা, ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন শহরের মধ্যে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি এবং শিল্প-সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন নতুন স্থাপনা নির্মাণ।
দেশটির মোট জিডিপি’র ২.৭ শতাংশ নির্ভর করে পর্যটনের উপর। এর মধ্যে ইসলামি পঞ্জিকার দ্বাদশ মাসে হওয়া হজ এবং রমজানসহ বছরের অন্যান্য সময়ে চলা ওমরাহর মাধ্যমে দেশটি প্রতিবছর ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে।
এ আয়কে আগামী চার বছরের মধ্যে বছরপ্রতি ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে চায় দেশটির অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিষয়ক কাউন্সিল। সেজন্য ওমরাহকারীদের সংখ্যা চার বছরের মধ্যে আরও বাড়িয়ে ১৫ মিলিয়ন এবং ২০৩০ এর মধ্যে ৩০ মিলিয়ন করার পরিকল্পনা আছে তাদের।
মন্তব্য চালু নেই