রাতে আর্জেন্টিনার ইরান পরীক্ষা

আজ শনিবার রাত ১০টায় আর্জেন্টিনার ইরান পরীক্ষা। এবারের বিশ্বকাপে হটফেবারিটরা যেভাবে নাস্তানাবুদ হচ্ছে তাতে ইরানের আর্জেন্টিনা পরীক্ষা না বলে বরং আর্জেন্টিার ইরান পরীক্ষা বলাটা একেবারে অনুচিত হবে না। ঠিক ১৬ বছর আগে ১৯৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপে এই শনিবারই একটা মধুর স্মৃতি আছে ইরানের। প্রথমবার বিশ্বকাপে এসেই ইরানিরা যুক্তরাষ্ট্রকে হারায় ২-১ গোলে। রাজনৈতিক কারণে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে এই জয়কে প্রতিশোধ হিসেবেও দেখেন। অবশ্য আর্জেন্টিনার সঙ্গে রাজনৈতিক টানাপোড়েন নেই ইরানের।

শনিবার রাত ১০ টায় ইরান যখন আর্জেন্টিনার সামনে পড়বে তখন ফ্রান্স বিশ্বকাপের সুখস্মৃতি না এসেই পারে না। ইরান অনুপ্রেরণাও খুঁজে নিতে পারে ওই ম্যাচ থেকে। আর নাইজেরিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ অভিযানও খারাপ হয়নি। প্রথমার্ধে সমানে সমান লড়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে গোলবার সামলানোর দিকেই বেশি নজর ছিল ইরানিদের। তাতেই ম্যাচটি গোলশুন্য ড্র হয়ে যায়।

আর্জেন্টিনা তো নাইজেরিয়া নয়। আক্রমণাত্মক না খেলে রক্ষণাত্মক খেললেও রক্ষণ দেয়াল ভাঙার জন্য তেঁতে আছেন খুদে জাদুকর লিওনেল মেসি।

যিনি নিজের মুখেই বলেছিলেন, আগের ম্যাচে বসনিয়া হার্জেগভেনিয়ার সঙ্গে খেলে তার মন ভরেনি। ওই ম্যাচের শুরুতে ৫-৩-২ ফরম্যাটটাও পছন্দ হয়নি ডিয়েগো ম্যারাডোনার উত্তরসুরির। যদিও দ্বিতীয়ার্ধে ফরম্যাট পরিবর্তন করে আর্জেন্টিনা ৪-৩-৩ খেলে ছন্দ ফিরে পেয়েছে। মেসিও চান অনভ্যস্ত ফরম্যাটে না খেলে এই ফরম্যাটেই খেলতে। যেখানে গঞ্জালো হিগুয়েইন- সার্জিও আগুয়েরোকে সামনে রেখে আর ঠিক পেছনে থেকে একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে তছনছ করে দিতে চান প্রতিপক্ষের রক্ষণ দেয়াল।

‘আক্রমণে হিগুয়েইন-আগুয়েরোকে সামনে রেখে খেলতেই আমি পছন্দ করি। আর তাতে গোল পাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।’-মন্তব্য মেসির।

বোঝাই যাচ্ছে গোল পেতে কতটা মরিয়া এই বার্সেলোনা মহাতারকা। বার্সার মেসি নিজেকে স্বরূপে ফিরে পেলে ইরানকে যে বড় বিপদে পড়তে হবে সেটা বুঝতে বিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই। মেসির কথাবার্তায়ও সেই ঝাঁঝ।

বসনিয়ার সঙ্গে এক গোল যে তাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি তিনি বুঝিয়েছেন তাও। ‘প্রথমার্ধে বল ধরে রাখাটা কঠিন ছিল। সত্যি বলতে পেছনে থাকার কারণে বারবার বল হারিয়ে ফেলছিলাম। পরিকল্পনা মতো খেলতেও পারিনি।’ মেসির এই কথা থেকেই পরিষ্কার ইরানের রক্ষণের একরকম পরীক্ষাই নিতে যাচ্ছেন তিনি।

তিনটি বিশ্বকাপ খেলে অর্জন বলতে দুটি গোল। বার্সায় যেখানে গোল বন্যা বইয়ে দেন সেখানে মেসির এই অর্জন সামান্যই। কে জানে ইরানকে না নিজের ‘খাদ্য’ বানিয়ে ফেলেন!

এটাও ঠিক যে ইরান হেলাফেলার দল নয় সেটা তো নাইজেরিয়া ম্যাচে বুঝিয়ে দিয়েছে। আর বড় দলের সঙ্গে মাঠে নামার সময় ছোট দলের অতটা চাপ থাকে না। যেমনটা থাকে বড় দলের। কারণ তাদের জিততেই হবে আর হারলে গেল গেল রব উঠে যাবে চারদিকে।
এমন বাস্তবতা বুঝেই কি না ইরানি ফরোয়ার্ড ঘুচানেজহাদ বলেছেন, ‘আর্জেন্টিনার বিপক্ষে আমাদের হারানোর কিছুই নেই। আমরা এটা উপভোগ করছি এবং কোচের নির্দেশনা অনুসরণ করছি। অবশ্যই এই ম্যাচে আমাদের হারানোর কিছু নেই। সব চাপ থাকবে আর্জেন্টিনার ওপর। আমরা নাইজেরিয়া ম্যাচের খেলাটাই ধরে রাখার চেষ্টা করবো।’

এর আগে ইরান একবারই আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। ম্যাচটি ড্র হয়েছিল ১-১ গোলে। এখান থেকেও প্রেরণার রসদ পেতে পারে এশিয়ার দলটি। আর বিশ্বকাপে কখনোই এশিয়ার দলগুলোর কাছে হারেনি আর্জেন্টিনা। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে তারা দক্ষিণ কোরিয়াকে ৩-১, গত বিশ্বকাপে ৪-১ ও ১৯৯৮ বিশ্বকাপে জাপানকে ১-০ গোলে হারায়।



মন্তব্য চালু নেই