রাজধানীতে বেড়েছে মশার উপদ্রব, ভোগান্তিতে নগরবাসী

রাজধানীতে বেড়ে গেছে মশার উপদ্রব। এতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। সাধারণ মানুষ এ জন্য সিটি করপোরেশনকে দায়ী করলেও কর্মকর্তারা বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়নই মশা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তবে মশার উপদ্রব কমাতে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তাঁরা।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, সন্ধ্যা নামতেই পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ যেন চলে যায় মশার কাছে। অপেক্ষমাণ লোকজন তখন নিরুপায়।
মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে তাদের আপ্রাণ চেষ্টা। তারপরও রক্ষা নেই। আর নিরাপত্তার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁরাও মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ।
বিমানবন্দরে অপেক্ষায় থাকা কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখানে অনেক মশা। সন্ধ্যা হলে আরো বেড়ে যায়। এখানে দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছে না। বসা যাচ্ছে না।
সেখানে মাঝবয়সী এক নারী জানালেন, ‘দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছে না। প্রচণ্ড মশা।’
একই ভোগান্তির কথা জানালেন বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মী আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, মশার জ্বালায় তো এখানে দাঁড়িয়ে থাকাই অসম্ভব।
এ তো গেল বিমানবন্দরের অবস্থা। কিন্তু কেমন আছেন রাজধানীর আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা? রামপুরা-বনশ্রী আবাসিক এলাকায় দিন-দুপুরেই মশার যন্ত্রণায় বাসায় থাকা দায়। মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারির ভেতরে বসেই পড়াশোনা করছে শিক্ষার্থীরা। মশারির ভেতরেও শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না শিশুরা।
ওই এলাকার একজন গৃহকর্ত্রী (৩০) জানালেন, মশা অনেক আছে। বাইরে তো আছেই। মশারির ভেতরেও ঢোকে।
মশারির ভেতর থেকেই এক খুদে শিক্ষার্থী বলল, মশার উৎপাতের কারণেই এই অবস্থা।
রাজধানীর দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই ছাত্রী জানাল, মশার কয়েল দিলেও কোনো কাজ হয় না। প্রচুর মশা। পড়াশোনায় সমস্যা হয়। রাতে তো আরো বেশি দেখা যায় মশা।
এখানেই শেষ নয়, দিনের বেলায় বাসায় বসে টিভি দেখাতেও শান্তি নেই। আবার মসজিদে নামাজ আদায় করবেন মুসল্লিরা- সেখানেও মশার উৎপাত।
রাজধানীর মধ্যবয়সী এক দম্পতি বলেন, কয়েল জ্বালিয়ে এভাবেই তাঁরা দিন পার করছেন। নামাজ পড়তে গেলে নাক-মুখ দিয়ে মশা ঢুকে পড়ে।
আরেক বৃদ্ধা বললেন, ‘মশার যন্ত্রণায় আমরা ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না, খেতে পারি না, নামাজও পড়তে পারি না।’
একই অবস্থা রাজধানীর অন্যান্য এলাকারও। বিশেষ করে বস্তি এলাকার পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। মশার ভোগান্তি নিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই ক্ষোভের কথা জানান তাঁরা।
বস্তিবাসী কয়েকজন নারী বলেন, মশায় কামড়ায় সারা দিন। আমরা গরিব মানুষ বলেই এখানে থাকি। কিন্তু দেখেন, দিন-দুপুরে ঘুমাচ্ছে, তারপরও মশারি টাঙ্গাতে হচ্ছে।
সিটি করপোরেশনের মশা নিধনের ওষুধ দেওয়া নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে বস্তিবাসীর। একজন বললেন, মাঝে মাঝে লোকজন আসে। তবে তারা বস্তির ভেতরে ঢোকে না। রাস্তা থেকেই তারা চলে যায়।
তবে নগরীতে মাঝেমধ্যে মশার ওষুধ দিতে দেখা গেলেও তা অপ্রতুল বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা। জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চ মাস, এই সময়টা মশার উপদ্রব বেশি থাকে জানিয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে কাজ করছেন তাঁরা।
এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এস এম এম সালেহ ভূঁইয়া বলেন, ‘যত দ্রুত অপরিকল্পিত নগরায়ণ হবে, তত দ্রুতই কিন্তু বিভ্ন্নি ধরনের স্ল্যাম তৈরি হচ্ছে, আনহাইজিনিক সিচ্যুয়েশন তৈরি হচ্ছে, ডোবা-নালা তৈরি হচ্ছে। এই কারণে কিন্তু কতগুলো চ্যালেঞ্জ সামনে আসছে। তারপরও আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করি। মশক নিধনের জন্য আমরা ক্রাশ প্রোগ্রাম নিয়েছি। আশা করি, এর মাধ্যমে মশাকে আরো কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এতে নগরবাসী কিছুটা স্বস্তিতে থাকতে পারবে।’
শুধু মশার ওষুধ দিয়েই মশা নির্মূল সম্ভব নয়। এ জন্য যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা না ফেলতে নগরবাসীকে অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি সিটি করপোরেশন কর্মকর্তারা ড্রেন, ঝিল ও ডোবা পরিষ্কার রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
মন্তব্য চালু নেই