যে পুলে সাঁতার কাটতে বুক কাঁপে
যারা সাঁতার জানেন তারাই শুধু বোঝেন, পানিতে মৃত্যু নয়, বরং কত আনন্দ লুকোন থাকে। শরীরকে একটা বয়ার মতো ভাসিয়ে রাখা, বা সুদক্ষ কোন জলসাপের মতো এঁকে বেঁকে পানি কেটে চলা এক দারুণ অভিজ্ঞতা। বিশ্বের প্রায় সবকয়টি অভিজাত হোটেলে আছে সুদৃশ্য সুইমিং পুল। মেঝে পর্যন্ত স্বচ্ছ কাচের মতো পানি সেখানে আগতকে প্রলুব্ধ করে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্যে। কিন্তু ইতালির তেরেমে মিল্লেপিনি হোটেলের সুইমিং পুলটি বোধয় সে দিক থেকে একটু অন্যরকম। এখানে ঝাঁপ দিতে গিয়ে অতিবড় সাঁতারুরও বুকের ভেতর মেঘ ডাকতে শুরু করতে পারে।
এই একটি মাত্র সুইমিং পুল বানিয়েই রাতারাতি গিনেস বুকে নাম লিখিয়ে ফেলেছে উত্তর ইতালির সুদৃশ্য শহর পদুয়ার হোটেল তেরেমে মিল্লেপিনি। সে দেশের প্রতিভাবান স্থপতি ইমানুয়েল বোরেত্তো বানিয়েছেন এটি, যা তার ৪০ মিটার (১৩১ ফুট) গভীর বক্ষে ধারণ করতে সক্ষম ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৯৩৯ গ্যালন কুসুম গরম আরামদায়ক পানি। পানি যতই আরামদায়ক হয়ে থাকুক, কী যতই অন্তর্ভেদী স্বচ্ছ হয়ে থাকুক, পুলটিকে দেখামাত্রই বুকে একটা কিছু এসে লাগে। সে দিক থেকে বলা যায়, এখানে দাঁড়িয়ে গেছে এক ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য। যার সামনে দাঁড়ালে ভয় হতে থাকে, আবার না তাকিয়েও পারা যায় না।
চরিত্রকে ধরে রেখেই সুইমিং পুলটির নামকরণ হয়েছে Y-40 (ওয়াই ফোর্টি)। মনের ভয়কে যেন যেন কিছুটা পাশ কাটানো যায় সেজন্যে পুলের সম্মুখে লেখা- The Deep joy; গভীর আনন্দ। হোটেল তেরমে মিল্লেপিনি তাদের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করেছে, বোরেত্তোর লক্ষ্য ছিল পৃথিবীর উৎকৃষ্টতম সুইমিং পুল বানানো। হয়ত তিনি তা পেরেছেন।
যারা সাঁতার কাটতে পারেন না, তারা যেন এর ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য অনুধাবন থেকে বঞ্চিত না হন, সে জন্যে পুলের অংশ হিসেবে জলের ভেতর তৈরি হয়েছে হেঁটে যাওয়ার জন্যে অপূর্ব টানেল। সেখানে হালকা খাবার খেতে খেতে কিংবা সুস্বাদু পানীয়ে চুমুক দিতে দিতে চোখ রাখতে পারেন নীল জলের দিকে। কিংবা, সাঁতারুদের জলস্থ অপূর্ব অ্যারোবিক্সের দিকে।
সাঁতার কাটা ছাড়াও পানিতে নিখুঁত ডাইভ শেখানোসহ পানির নিচের শারীরিক ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়ার ওপর বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে সুদৃশ এই ‘উৎকৃষ্টতম’ সাঁতারের পুলকে। তোবুকে যথেষ্ট সাহস সঞ্চয় কেরে অবশেষে তেরেমে মিল্লেপিনিতে গিয়েই যদি এ পুলে ঝাঁপিয়ে পড়তে যান, সেখানকার সুসভ্য স্টাফরা ছুটে এসে বিনয়ের সঙ্গে আপনাকে নিরস্ত করবে প্রথমে। তারপর জানতে চাইবে, ‘স্যার, আপনি কি রুম বুকিং করেছেন?’ উত্তর যদি হয়, ‘না, করিনি’, তাহলে কিন্তু সাহস সঞ্চয় করেও লাভ হবে না। রুম বুকিং করা না থাকলে পুলটিকে শুধু দেখেই চলে আসতে হবে আপনাকে।
মন্তব্য চালু নেই