যে কারনে হানিমুনের পরপরই ডিভোর্সের সংখ্যা বাড়ছে ভারতে
এই তো গত মাসেরই ঘটনা। বিয়ের পরপর হানিমুন সারতে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে যায় দম্পতি। থাকার কথা ছিল ১০দিন, কিন্তু, তিন দিন কাটতে না কাটতেই, ব্যাগপত্তর গুটিয়ে সোজা ব্যাক টু দ্য হোম। যাওয়ার সময় যতটা উদ্দীপনা ছিল, ফেরার পর ততটাই বিমর্ষ লাগে নবদম্পতিকে। শুধু তাই নয়, বাসরের ফুল শুকনো হওয়ার আগেই, অনেক দূর এগিয়ে, তাঁরা বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।
কারণ, আর কিছুই নয়। যৌনমিলনের জন্য স্বামীকে প্রলুব্ধই করতে পারেননি নববিবাহিত স্ত্রী। কেন স্বামী তাঁর আহ্বানে সাড়া দিলেন না, তা নিয়ে অনেক চিন্তাই তাঁর মাথায় ঘুরপাক খায়। তিন দিন ধরে এমন আলগোছ সহবাসের পর, হতাশ হয়ে পড়েন সদ্য বিয়ে করা ওই যুবতী।
কেন, নিজেকে এ ভাবে গুটিয়ে রাখলেন এই যুবক? ঘনিষ্ঠমহলে ছেলেটি জানান, যাঁর প্রতি মনে ভালোবাসার জায়গাটাই এখনও তৈরি হল না, এত তাড়াতাড়ি তাঁর সঙ্গে যৌনতা সম্ভব কী করে? মনের দিক থেকে সাড়া না-মেলায়, তিনি স্ত্রীর আবেদনে সাড়া দিতে পারেননি।
এটা একটা ঘটনা মাত্র। কিন্তু, ব্যতিক্রমী ঘটনা নয় কখনোই। শহুরে জীবনে এমনটাই ঘটছে আকছার। বিশিষ্ট মনোবিদ সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় দাবি করলেন, শহরে হানিমুনের পরপরেই ডিভোর্সের সংখ্যা দ্রুত হারে বাড়ছে। বিশেষত, গত তিন বছরে এমন ডিভোর্স অনেকটাই বেড়েছে। শারীরিক ঘনিষ্ঠতায় কোনও একজনের অনীহা বিবাহবিচ্ছেদের একটা বড় কারণ হলেও, মানসিক সামঞ্জস্যের অভাবও পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া যায় না।
সঞ্জয় জানান, একজন যদি ঠিকমতো সাড়া না দেন, অন্যের কাছে যৌনতা তখন যান্ত্রিক হয়ে দাঁড়ায়। যৌনতার মজা উপভোগ করা যায় না। এসব ভেবেই, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে, আর কোনও সমাধানসূত্রে মাথা না ঘামিয়ে, আগেভাগেই ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছেন নবদম্পতিরা।
শুধু যে পাত্রপাত্রীর বিজ্ঞাপন দেখে, দেখাশোনা করে বিয়ের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটছে, তা কিন্তু নয়। সঞ্জয়ের কথা অনুযায়ী, প্রেমের বিয়ের ক্ষেত্রেও একই সমাপতন ঘটছে। দেখাশোনার বিয়ের ক্ষেত্রে না হয়, এক অপরের পছন্দ বা অপছন্দ জানেন না। কিন্তু, প্রেমের বিয়ের ক্ষেত্রে বিচ্ছেদ হচ্ছে কেন?
মৃণালিনী দেশমুখ নামে এক আইনজীবী জানালেন, গত দু-মাসে আমি অনেকগুলো প্রেমের বিয়ে ভাঙতে দেখেছি। ধৈর্যের অভাব ও মানিয়ে নেওয়ার অক্ষমতাই এর অন্যতম কারণ বলে দাবি দেশমুখের।
গৌরী সেহগলের (নাম পরিবর্তিত) কথাই ধরুন না। সম্প্রতি ডিভোর্স ফাইল করেছেন গৌরী। তাঁর কথায়, বিয়ের আগে আমরা তিন বছর ধরে মেলামেশা করেছি। কিন্তু, আমাদের হানিমুনের সময় ওর মধ্যে অদ্ভুত রকমের একটা পরিবর্তন লক্ষ করলাম। ওর প্রত্যাশা ছিল, ওর যাবতীয় কাজ আমি করে দেব। কিন্তু, একটা সময়ের পর এটা আমার কাছে অসহ্য বলে মনে হল। ঠিক করলাম, এর থেকে দুজনের বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়াটাই শ্রেয়।
অতএব ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ করুন। হানিমুনেই যেন না মধু শুকোয়।
মন্তব্য চালু নেই