যে কারণে মহাসাগরের গুরুত্ব এত বেশি..

এ কথা সবারই জানা যে, পৃথিবীর ৩ ভাগ জল, এক ভাগ স্থল? গোটা বিশ্বে সমুদ্র ও উপকূলবর্তী এলাকার উদ্ভিদ ও প্রাণিজগত আজ বিপন্ন? পৃথিবীতে মানব জাতির টিকে থাকার অন্যতম চাবিকাঠি হল সাগর।

খাদ্য, ওষুধসহ বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে আমাদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের একটি বড় অংশ আসে মহাসাগর থেকে। তাছাড়া মহাসাগরগুলো বায়ুমন্ডলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখল করে আছে।

উদ্বেগের বিষয় এই যে, মানুষের নানাবিধ কর্মকান্ডের পাশাপাশি জলবায়ুর বৈরী থাবায় মহাসাগরগুলোর প্রতিবেশব্যবস্থা প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে এর জীববৈচিত্র্য। এই ধ্বংসযজ্ঞ থেকে সচেতনতা সৃষ্টিতে বিশ্ব মহাসাগর দিবস পালন করা হয় প্রতিবছরের ৮ জুন। এবারের বিশ্ব মহাসাগর দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সুস্থ মহাসাগর সুস্থ গ্রহ’।

দিবসটি আমাদের মহাসাগরের গুরুত্ব এবং তাদের স্বাস্থ্য বজায় রাখার কথা মনে করিয়ে দেয়। এই পৃথিবীতে বাস করার জন্য আমাদের অক্সিজেন, বৃষ্টিপাত, খাদ্য এসব সমুদ্রের স্বাস্থ্যের উপর নির্ভরশীল।

১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ধরিত্রী সম্মেলনে একদল কানাডিয়ান প্রতিনিধি আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসটি পালনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘ দিবসটিকে আন্তর্জাতিকভাবে পালনের ঘোষণা দেয়। ২০০৯ সাল থেকে বিশ্ববাসী ৮ জুনকে পালন করে বিশ্ব মহাসাগর দিবস হিসেবে।

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন সংক্রান্ত সম্মেলনে গ্রিন ইকোনমি রিপোর্টে বলা হয়েছে, গোটা বিশ্বের মৎস্যভান্ডারের প্রায় ৩০ ভাগ মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করা হচ্ছে? সেইসঙ্গে প্রায় ৫০ ভাগের পূর্ণ ব্যবহার হয়ে চলেছে? উপকূলবর্তী ম্যানগ্রোভ অরণ্যের প্রায় ২০ ভাগ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে সমুদ্রের বুকে যে রিফ রয়েছে, তার ভবিষ্যতও বিপন্ন হয়ে পড়েছে?

o1-500x349

উপকূলবর্তী অঞ্চলের ১০০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বসবাসরত মানুষের প্রায় ৪০ শতাংশ সমুদ্রের ওপর খাদ্যসহ বিভিন্নভাবে নির্ভরশীল? এই নেতিবাচক পরিবর্তনের ফলে তাদের জীবনযাত্রারও অবনতি ঘটবে বলে রিপোর্টে আশঙ্কা করা হচ্ছে? এ প্রবণতার মোকাবিলা করতে চাষবাস ও মাছ ধরার প্রক্রিয়াকে পরিবেশবান্ধব করে তুলতে হবে? এ কাজে সফল হলে বিশ্ব অর্থনীতিরও লাভ হবে?

প্রসঙ্গত, গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ হচ্ছে পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রবাল রিফ। যা ২,৯০০ এর বেশি একক রিফের সমন্বয়ে গঠিত। রিফটি অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের উপকূল ঘেঁষা কোরাল সাগরে অবস্থিত। মহাশূন্য থেকে পৃথিবীর যে কয়েকটি বস্তু দৃশ্যমান তার মধ্যে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ অন্যতম। প্রবাল, পলিপস ইত্যাদি কোটি কোটি ক্ষুদ্র অর্গানিজমস দ্বারা এই রিফ কাঠামো গঠিত। এখানে রয়েছে অনেক প্রানের অস্তিত্ব। ১৯৮১ সালে এটাকে বিশ্ব হেরিটেজ সাইটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সিএনএন এই প্রবাল প্রাচীরকে পৃথিবীর প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চার্য্যের একটি বলে ঘোষণা করে।

যা হোক, আসলে সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানের স্বাভাবিক ভারসাম্য রক্ষা করাই বিশ্ব মহাসাগর দিবস উদযাপনের মূল লক্ষ্য। মহাসাগর হচ্ছে অতি প্রকান্ড ও লবণযুক্ত বিপুল জলরাশি যা পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে। এটি পৃথিবীর মোট আয়তনের প্রায় ৭০.৯% স্থান দখল করে আছে। এ বিপুল জলরাশি আবার অনেকগুলো মহাসাগর ও ছোট ছোট সমুদ্রে বিভক্ত। বিজ্ঞানীরা হিসেব করে দেখেছেন যে, মহাসাগরে প্রায় ২,৩০,০০০ সামুদ্রিক ও জলজ প্রাণী রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সামুদ্রিক ও জলজ প্রাণীর সংখ্যা নির্ণিত সংখ্যার তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি।

বিশ্ব মহাসাগর দিবস উপলক্ষ্যে নির্মিত একটি ভিডিও :



মন্তব্য চালু নেই