যারা বাবার সমালোচনা করেছেন তারা আজ অনুতপ্ত : শেখ হাসিনা

স্বাধীনতা-পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ায় বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমার বাবাকে যারা গালমন্দ করেছেন, যারা সমালোচনা করেছেন, তার বিরুদ্ধে লিখেছেন তারা আজ অনুতপ্ত। যুদ্ধবিধস্ত একটি দেশ, যে কিনা ছিল একটি প্রদেশ। ব্রিটিশরা ২০০ বছর শোষণ করেছে, এরপর এসেছে পাকিস্তান। সেই দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু তা গড়ে তোলায় মনোনিবেশ করেছিলেন।’

রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নবনির্মিত বহুতল ভবনের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতা পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু দেশ গড়ে তুলতে মনোনিবেশ করলেও মানুষের কত সমালোচনা, কত গালমন্দ। মাত্র সাড়ে তিন বছরে উনি যে পরিমাণ কাজ করেছেন সেটা আমরা প্রশাসনে কাজ করতে গিয়ে অনুভব করছি। মাঝে মধ্যে অবাক হয়ে যাই। প্রশ্ন জাগে-এত অল্প সময়ে কীভাবে উনি এসব করেছেন?’

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ জাদুঘর করার উদ্দেশ্য হচ্ছে-প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে যাতে জানতে পারে, কত মহান ত্যাগের বিনিময়ে এ স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। সেই স্মৃতিচিহ্নগুলো তারা (নতুন প্রজন্ম) দেখবে। এসব স্মৃতি দেখে তারা উপলদ্ধি করবে। অন্তরে ধারণ করবে এবং সেভাবেই নিজেদের চরিত্রকে গঠন করবে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে।

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লখ করে তিনি বলেন, ইনশাআল্লাহ এ দেশ আরো এগিয়ে যাবে। আর আমাদের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এদেশের চেতনাকে সমুন্নত রাখবে।

‘২১ বছর পর সরকার গঠন করে আমাদের নেয়া নানা পদক্ষেপের কারণে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা গর্বিত হয়ে বলতে পারেন-আমি মুক্তিযোদ্ধা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ভৌগোলিক দিক দিয়ে আমাদের দেশ ছোট হলেও জনসংখ্যায় আমরা কিন্তু একেবারে কম নই। এই জনগণই আমাদের শক্তি। সম্ভাবনাময় জনশক্তিকে শিক্ষায়-দীক্ষায় এবং প্রযুক্তির ব্যবহারে উৎকর্ষ করে গড়ে তুলতে চাই।

২০২০ সাল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে চাই। আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা ভিক্ষা চেয়ে নয় বরং বিশ্বে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে পালন করব। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে যেন পালন করতে পারি, সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আজ বিদেশিরাই বলে বাংলাদেশ একটা উন্নয়নের রোল মডেল। এটা তো এমনি এমনি হয়নি। সুপরিকল্পিতভাবে নেয়া আমাদের পদক্ষেপের জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে।

‘জাতির জনক বলেছিলেন, বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। তাই কেউ দাবায়ে রাখতে পারে নাই, পারবেও না।’ বিশ্বে আমরা মর্যাদাপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করব, ইনশাআল্লাহ।

পঁচাত্তর-পরবর্তী নানা ঘটনার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তখন জয়বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ করা হয়। কেউ স্লোগান দিলে গুলি করে হত্যাও করা হয়েছে। এমনকি জাতির পিতার ছবি পর্যন্ত টেলিভিশনে প্রচার হতো না।

‘কিন্তু সত্য কোনোদিন চাপা থাকে না। সত্যের শক্তি অনেক বেশি। আজকে সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনা ফিরে এসেছে’ যোগ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন ছায়ানটের শিল্পীরা।

পরে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ ও সম্ভ্রম হারা ২ লাখ মা-বোন স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

এ সময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি জিয়াউদ্দিন তারিক আলী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠান শেষে ‘শিখা অম্লান’ প্রজ্বলন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ফলক উন্মোচন করেন এবং পুরো জাদুঘর ঘুরে দেখেন।



মন্তব্য চালু নেই