যাদের জীবন কেড়ে নিল ক্রিকেট বল
এমন করুণ আর বেদনাদায়ক মৃত্যুও হয়! ক্রিকেট মাঠে বলের আঘাতে মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছে না কেউ। ফিল হিউজ ছিল অস্ট্রেলিয়ার এক সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার। অথচ, মাত্র ২৫ বছর বয়সেই পরপারে পাড়ি জমাতে হলো অসি ওপেনারকে। ঘাতক বল কেড়ে নিল তার জীবন। শুধু ফিল হিউজই নন, ক্রিকেট মাঠে বলের আঘাতে মৃত্যুও ঘটনা এর আগেও বেশ কয়েকটি ঘটেছে। সংখ্যাটা ৫ থেকে ৬ জনের। সাথে বলের আঘাতে একজন আম্পায়ারের মৃত্যুও ঘটনাও ঘটেছে ক্রিকেটের মাঠে।
শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচ খেলতে গিয়ে প্রতিপক্ষ বোলার শিন অ্যাবটের একটি বাউন্ডারকে পুল করতে যান ফিল হিউজ। কিন্তু পরাস্ত হন তিনি। ব্যাটে না লেগে বল হেলমেটের ফাঁক গলে আঘাত করে তার ঘাড়ের ঠিক উপরের অংশে, মাথায়। সঙ্গে সঙ্গেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। দ্রুত জরুরি চিকিৎসা দিয়ে তাকে ইমারজেন্সি হেলিকপ্টারে করে নিয়ে যাওয়া হলো হাসপাতালে। মৃত্যুর সঙ্গে দু’দিন লড়াই করার পর অবশেষে হেরে গেলেন তিনি। ক্রিকেট বিশ্বকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
গত বছরই ক্রিকেট মাঠে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। পাকিস্তানের একজন সম্ভাবনাময়ী ক্রিকেটার জুলফিকার ভাটি মারা যান ক্রিকেট বলের আঘাতে। ২২ বছর বয়সী ভাটি খেলছিলেন সুপারস্টার ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে, সিন্ধ রাজ্য লীগে। সাধারণত ওয়ান ডাউনেই খেলতে নামেন তিনি। ঘটনার সময় প্রতিপক্ষ বোলারের একটি বাউন্সার এসে আঘাত করে তার বুকে। এরপরই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি এবং দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি ভাটিকে।
ক্রিকেট যতই জেন্টলম্যান গেম, হোক বিপজ্জনকও বটে। অন্তত ৬জন ক্রিকেটার আর একজন আম্পায়ারের মৃত্যুর পর এটা বলাই যায়। ফিল হিউজের মৃত্যুর পর গবেষণায় দেখা গেছে ৬জন ক্রিকেটার নিহত হয়েছেন বলের আঘাতে। ১৮৭০ সালেই বলের আঘাতে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল বলে জানাচ্ছে কয়েকটি ওয়েবসাইট। তবে কোন ক্রিকেটার তখন মারা গিয়েছিলেন, সে তথ্য জানা যায়নি।
জুলফিকার বাটির মাত্র কয়েকদিন আগেই দক্ষিণ আফ্রিকান লিগে মৃত্যুবরণ করেন ড্যারেন রেন্ডাল নামে সে দেশেরই এক ক্রিকেটার। বোলারের বল আঘাত করেছিল রেন্ডালের মাথায়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে উড়িয়ে আনা হয় হাসপাতালে। কিন্তু ৩২ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার আবদুল আজিজ মৃত্যু বরণ করেন ১৯৫৯ সালে কায়েদে আজম ট্রফির ফাইনালে। মাত্র ১৮ বছর বয়স ছিল আজিজের। একটি পেস বল এসে আঘাত করে তার মাথায়। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। হাসাপাতালে নেওয়া হলেও মৃত্যু বরণ করেন তিনি।
ভারতীয় ক্রিকেটার রমন লাম্বা মারা যান বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে এসে। ঘটনার সময় হেলমেট ছাড়া ক্রিজের পাশে দাঁড়িয়ে ফিল্ডিং করছিলেন তিনি। কিন্তু মেহরাব হোসেন অপির সজোরে খেলা একটি বল আঘাত হানে লাম্বার মাথায়। কয়েকদিন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে হেরে যান লাম্বাও।
দুই ইংলিশ ক্রিকেটার জর্জ স্মারেজ এবং আয়ান ফোলিরও মৃত্যু ঘটেছে বলের আঘাতে। এছাড়া একজন ইংলিশ আম্পায়ার অ্যালকুয়ান জানকিন্স মারা যান খেলার মাঠেই মাথায় বলের আঘাতে।
এছাড়া ক্রিকেট মাঠেই মৃত্যুও ঘটনা ঘটেছে বলের আঘাত ছাড়াও। ২০১২ সালে ইংল্যান্ডের স্টারব্রিজে পেডমোর ক্রিকেট গ্রাউন্ডে নিজের পেস বল দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে দেন রিচার্ড বিউমন্ট। দখল করেন ৫ উইকেট। কিন্তু এরপরই হার্ট অ্যাটাক ঘটে তার। সঙ্গে সঙ্গে হেলিকপ্টারে করে বিউমন্টকে উড়িয়ে আনা হয় বার্মিংহ্যামের কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালে। সেখানেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
গত সপ্তাহেই আরব আমিরাতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের শেষ দিন কিউই বোলার কোরি অ্যান্ডারসনের একটি বল গিয়ে আঘাত কওে পাকিস্তানি ওপেনার আহমেদ শেহজাদের মাথায়। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। এরপর পাকিস্তানে ফিরিয়ে এনে নিবিড় পরিচর্যায় করা হয় শেহজাদের। বৃহস্পতিবারই পিসিবির পক্ষ থেকে জানানো হলো, আপাতত শঙ্কা মুক্ত শেহজাদ এবং তিনি খেলার মাঠে ফিরতে পারবেন।
মন্তব্য চালু নেই