হাসপাতালের কেবিনে কেয়ার শাড়ির বায়না
“যদি আর কোনো ঈদে শাড়ি পরতে না পারি”
বিয়ের পর প্রথম ঈদ। নিজের বা শ্বশুরবাড়ি নয়, পারভেজ খান এবং কেয়া খাতুন ঈদ করবেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১১১ নম্বর কেবিনে। ঈদের জন্য কেয়া স্বামীর কাছে একটি শাড়ির বায়না ধরেছেন। শাড়ির রং যেন সাদা বা কালো হলে চলবে না। হতে হবে রঙিন। ভালোবাসার রঙিন সংসার গড়ার স্বপ্ন ছিল দুজনের। এতে কালোমেঘ জমেছে। কেয়া চান রঙিন থাকতে। তাই চান রঙিন শাড়ি। কেয়া বলেন, ‘জীবনে যদি আর কোনো ঈদে শাড়ি পরতে না পারি! ’
স্ত্রীর কথা শুনে কোনো উত্তর দিতে পারেননি পারভেজ। সান্ত্বনাও নয়। কীভাবে দেবেন? তিনি নিজেও জানেন না—কেয়া কবে সুস্থ হবেন? কেয়ার শরীরে বাসা বেঁধেছে ব্লাড ক্যানসার (এএমএল)।
জানুয়ারি মাসের ২৫ তারিখ বিয়ে হয় তাঁদের। একটু গুছিয়ে নিয়ে ঘটা করে বিয়ের অনুষ্ঠান করার কথা। অনুষ্ঠানে কীভাবে বউ সাজবেন, ভাবছিলেন কেয়া। চলছিল নানা পরিকল্পনা। কিন্তু অনুষ্ঠান হয়নি। শ্বশুরবাড়িও যাওয়া হয়নি। তার আগেই বিয়ের পাঁচ মাস যেতে না যেতেই কেয়াকে যেতে হয়েছে হাসপাতালে। গত ২ জুলাই ‘শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার আগেই কেয়াকে যেতে হলো হাসপাতালে’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
গত ৮ জুন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগে ভর্তি হন কেয়া। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি অ্যান্ড বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান এম এ খান জানান, কেয়ার ভালো হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের জন্য নিতে হবে ভারতে। প্রাথমিকভাবে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা খরচ হতে পারে। আর কেয়ার সেল (কোষ) যদি ভাই বা বোনদের সেলের সঙ্গে না মেলে তাহলে ডোনার লাগবে। তখন খরচ আরও বাড়বে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পারভেজ জানান, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে বন্ধু এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা কেয়ার চিকিৎসার জন্য সাহায্য চেয়ে পোস্ট দেন। ফেসবুকে সাহায্যের পোস্ট দেখে অনেকেই কিছুটা দ্বিধায় ছিলেন। তবে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশের পর তাঁদের দ্বিধা কেটে গেছে। অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। গতকাল পর্যন্ত কেয়ার সাহায্যের জন্য পাওয়া গেছে ২৮ লাখ ৬১ হাজার টাকা।
পারভেজ আরও বলেন, কেয়ার ভাই এবং দুই বোনের সঙ্গে সেল ম্যাচ করেনি। আরেক বোনের সঙ্গে মেলে কি না, তা পরীক্ষা করানো হয়েছে। ফলাফল পেতে কিছুদিন দেরি করতে হবে। এখন কেয়ার ভাইয়ের পাসপোর্ট করা হচ্ছে। তারপর কেয়া, পারভেজ ও কেয়ার ভাই ভারতে যেতে ভিসার জন্য দাঁড়াবেন। কেয়া এখন কেবিনের ভেতর একটু হাঁটাহাঁটি করতে পারেন।
পারভেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ, এমবিএ (হিসাববিজ্ঞান) করেছেন। গত নভেম্বরে পড়াশোনা শেষ হয়েছে তাঁর। কেয়ার বয়স ২২। রাজবাড়ী সরকারি কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছেন। দুজনে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন। দুজনের বাড়ি রাজবাড়ী সদরে।
পারভেজ ও কেয়ার স্বপ্নপূরণে আপনি বাড়িয়ে দিতে পারেন সাহায্যের হাত। সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা: বিকাশ নম্বর (নিজস্ব) ০১৭২৬৪৮০৯৯৮,০১৭১৯৬২৬৪৫৮, ০১৯৪৮১০৪০৪৪। ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং ০১৭৩৫২৪৫৪৯৪০ অথবা ডাচ বাংলা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট (এলিফ্যান্ট রোড শাখা) ১২৬১০১২২১২০০ তেও সাহায্য পাঠানো যাবে। এ ছাড়া সুইফট কোড-DBBL-BDDH-126 সাহায্য করা যাবে।
আরো পড়ুনঃ
মন্তব্য চালু নেই