মৌচাক-মালিবাগের সড়ক যেন মরণফাঁদ
রাস্তা তো নয় যেন মরণফাঁদ! ওপরে চলছে ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ। আর নিচে সড়কের বড় বড় গর্ত ও জলাবদ্ধতা মাড়িয়ে চলছে যানবাহন। ভাঙা ফুটপাত দিয়েই সারাক্ষণ হাঁটাচলা করছেন পথচারীরা। তাদের সুরক্ষায় নেই কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এই হলো রাজধানীর মালিবাগ-মৌচাক এলাকার অবস্থা। প্রায় পাঁচ বছর ধরে সেখানে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলছে। ফ্লাইওভার প্রকল্প এলাকার সড়ক মেরামতের দায়িত্ব থাকলেও তা করছেন না ঠিকাদাররা।
গত ১২ এপ্রিল দুপুরে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রামপুরা ও মগবাজারগামী সড়ক দিয়ে শান্তিনগর থেকে মালিবাগ ও মৌচাক হয়ে অসংখ্য যানবাহন চলছে। সড়কে রয়েছে বড় বড় গর্ত। খরার সময়ও ওইসব গর্তে পানি জমে আছে। মাঝে মধ্যে গর্তে পড়ে যাচ্ছে যানবাহন।
মালিবাগ রেলগেইট থেকে মৌচাক মোড় পর্যন্ত সড়কের পশ্চিম দিকটা বন্ধ করে সড়কের ফুটপাত ও ড্রেনেজ সিস্টেমের কাজ চলছে। ফ্লাইওভারের নির্মাণ সংক্রান্ত যন্ত্রপাতিও রাখা হয়েছে সড়কের ওপর। এ কারণে সড়কের পূর্বদিক দিয়ে যানবাহন চলছে। এ অংশটির অবস্থা ভালো না হওয়ায় যানবাহন চলে হেলেদুলে।
মৌচাক মোড় থেকে মালিবাগ চৌরাস্তা হয়ে রাজারবাগ ও শান্তিনগরমুখী সড়কের অবস্থা আরও খারাপ। এ দু’টি অংশে সড়কের ওপর সারাক্ষণ পানি জমে থাকছে। এই পানি অতিক্রম করার সময় অটোরিকশা (ঢাকা মেট্রো থ-১৩-৬৩৯২) চালক বলেন, ‘ঢাকার ভেতর এতো খারাপ রাস্তা আর কোথাও নেই। এ পথে চলতে গিয়ে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
হোসাফ মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে মালিবাগের বাসিন্দা সোলায়মান বলেন, ‘পাঁচ বছর হয়ে গেল মালিবাগের এই অবস্থা। সারা বছর আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বৃষ্টি হলে এই দুর্ভোগের সীমা থাকে না। ফ্লাইওভার নির্মাণের কারণে মালিবাগের এই অবস্থা।’
অন্যদিকে কোনও রকম নিরাপত্তা ছাড়াই সড়কের ওপর চলছে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ। মৌচাক মোড়ে উঁচু পিলারের ওপর গার্ডার বসানোর কাজও চলছে। এ জন্য ভারী যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ সামগ্রী পিলারের ওপর তোলা হচ্ছে। আর নিচ দিয়ে বিনা বাধায় লোকজন ও যানবাহন চলাচল করছে।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মৌচাক শাখার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় সারাক্ষণই আমরা আতঙ্কে থাকি। কারণ মাসখানেক আগে আমাদের অফিসের কাছেই মালিবাগ রেলগেইটে পিলারের ওপর থেকে গার্ডার পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে। ভাগ্য ভালো যে ঘটনাটি মধ্যরাতে ঘটেছিল। তানা হলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যেতে পারত।
তিনি বলেন, এখন উঁচু পিলারের ওপর থেকে কোনও কারণে দু’একটা যন্ত্র পড়ে গেলে আবারও হয়তো ক্ষয়ক্ষতির খবর শুনতে হবে আমাদের।
যোগাযোগ করা হলে ফ্লাইওভার প্রকল্পের কর্মকর্তা ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম আমিরুজ্জামান বলেন, ‘মঙ্গলবার সারা রাত আমি ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ দেখাশুনা করি। তখন তো পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। দিনের বেলায় কেন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো নয়, তা খোঁজ নেবো।’
সড়কের দুরবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা তো রাস্তা মেরামত করে দিয়েছিলাম। কিন্তু পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে।’
নগরীর যানজট কমাতে ২০১২ সালে শুরু হয় প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনে তমা কন্সট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এ নির্মাণ কাজ করছে।
সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি তা করতে পারেনি। তবে গত বছর ৩০ জুন তেজগাঁও শিল্প এলাকার সাতরাস্তা থেকে হলিফ্যামিলি হাসপাতাল পর্যন্ত ফ্লাইওভারের ২.১১ কিলোমিটার অংশ চালু করা হয়। এরপর ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলামটর থেকে মৌচাকমুখী অপর অংশ চালু করা হয়। অন্যদিকে শান্তিনগর থেকে মগবাজার ও রামপুরামুখী অংশের কাজ শেষই হয়নি। বর্তমানে এ দু’টি অংশের কাজই চলছে। এ কাজ শেষ করার সময় নির্ধারণ করা আছে এ বছর জুন পর্যন্ত। প্রকল্প ব্যয় প্রথমে ছিল ৭৬০ কোটি টাকা। পরে একশ’ কোটি টাকা বাড়ানো হয়।
মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজে অসতর্কতার কারণে গত ১২ মার্চ দিবাগত রাতে মালিবাগ রেলগেটে পিলারের ওপর থেকে ফ্লাইওভারের গার্ডার পড়ে গেলে এক শ্রমজীবী মানুষের মৃত্যু হয় এবং ফ্লাইওভারের এক প্রকৌশলী ও এক কর্মী আহত হন।
মন্তব্য চালু নেই