মোদীর শপথে প্রতিনিধি পাঠাচ্ছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

দিলিপ মজুমদার, কলকাতা প্রতিনিধি: টানাপোড়েনের অবসান৷ ২৬ মে নরেন্দ্র মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রতিনিধি পাঠাচ্ছেন পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শুক্রবার মোদীর আমন্ত্রণপত্র নবান্নে পৌঁছনো মাত্র পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম সাংবাদিকদের ডেকে জানিয়ে দেন, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বিজেপি-র নতুন প্রধানমন্ত্রীর শপথের সময় উপস্থিত থাকবেন৷ তিনি বলেন, ‘এই মাত্র আমরা নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণপত্র পেয়েছি৷ ২৬ তারিখ মুখ্যমন্ত্রী কবি নজরুল ইসলামের জন্মদিনে নিউটাউনে নজরুলতীর্থের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকবেন৷ তাই তাঁর নির্দেশে সরকারের তরফে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এবং দলের তরফে মুকুল রায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন৷’

ঘটনা হল, নবান্নে আসা আমন্ত্রণপত্রের সঙ্গে তৃণমূল দল কোনও ভাবেই সম্পৃক্ত নয়৷ এই আমন্ত্রণ একেবারেই প্রশাসনিক৷ দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘এটা তো বিজেপি-র তরফে তৃণমূলকে আমন্ত্রণ নয়৷ রীতি অনুযায়ী সমস্ত রাজ্য সরকারকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷’ মোদীর শপথে মমতা নিজে কিংবা তাঁর কোনও প্রতিনিধি যান কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল ছিল৷ বিভ্রান্তি ছিল তৃণমূলের অন্দরেও৷ বৃহস্পতিবার দলের এক প্রথম সারির নেতা জানিয়েছিলেন, আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ তখনও এসে পৌঁছয়নি৷ শুক্রবার সেই আমন্ত্রণপত্র আসে নবান্নে৷ তার পরেই ববির মাধ্যমে মমতা তাঁর সরকার এবং দলের মনোভাব স্পষ্ট করে দেন৷ পরে মুকুলবাবু বলেন, ‘যা বলার নবান্ন থেকে ববি বলে দিয়েছে৷ আমি এটা নিয়ে আলাদা করে কিছু বলব না৷’

মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের রাজনৈতিক গুরুত্ব কোথায়? দলের সংসদীয় কমিটির প্রধান হলেন মুকুলবাবু৷ কাজেই তিনি মোদীর শপথ গ্রহণে গেলে গোটা দলের প্রতিনিধিত্বই করা হয়৷ অন্য দিকে মুখ্যমন্ত্রীর পর মন্ত্রিসভায় দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি অবশ্যই অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র৷ লোকসভা নির্বাচনের আগে তাঁকেই দলের সর্বভারতীয় মুখপাত্রের গুরুদায়িত্ব দেন মমতা৷ রাজনৈতিক মহল মনে করছে, অমিতবাবু এবং মুকুলবাবুকে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে পাঠিয়ে মোদীর নতুন সরকারকে সৌজন্যের বার্তাই দিতে চাইছেন মমতা৷

সিপিএম কিন্ত্ত জানিয়ে দিয়েছে, তারা মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যাচ্ছে না৷ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘এটুকু বলতে পারি, এ রাজ্য থেকে আমাদের কেউই যাচ্ছেন না৷’ এই কথার রেশ ধরেই সূর্যবাবু স্মরণ করিয়ে দেন অতীতে অটলবিহারী বাজপেয়ীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেও তাঁদের দল বা সরকারের কেউ প্রতিনিধিত্ব করেননি৷’ ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার সোমবার দিল্লি যেতে পারেন বলে সিপিএম সূত্রের খবর৷

তৃণমূলের অন্দরের খবর, মোদীর সরকারের সঙ্গে প্রশাসনিক স্তরে রাজ্য সরকারের সমম্বয় সাধনের ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী অমিতবাবুকে গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে৷ দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলেও অমিতবাবুই রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বারবার দিল্লি গিয়েছেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের কাছে দরবার করতে৷ সদ্য ক্ষমতায় আসা এনডিএ সরকারের সঙ্গেও তাঁকে সেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যেতে পারে৷

পশ্চিম বাংলা রাজ্যে ভোট প্রচারে এসে নরেন্দ্র মোদী, রাজনাথ সিংরা বারবার পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক সমস্যার কথা তুলে ধরে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন৷ কাজেই নতুন কেন্দ্রীয় সরকার কী করে তা নিয়ে এখন থেকেই কৌতূহল দানা বাঁধছে নানা মহলে৷



মন্তব্য চালু নেই