মোদির বিরুদ্ধে বাকযুদ্ধে নেমেছেন রাহুল-অখিলেশ
উত্তরপ্রদেশে জয় ঘরে তুলতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নেয়া নরেন্দ্র মোদীর বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভকে উস্কে দিচ্ছে রাহুল গান্ধী ও অখিলেশ যাদব জোট। এই যুব নেতাদের যুগলবন্দিতে মোদী নিজেও অনেকটাই অস্বস্তিতে। বিভিন্ন জনসভায় প্রধানমন্ত্রী মোদির বক্ততায় সেটা স্পষ্ট।
মোদির বক্তৃতার সিংহভাগ জুড়েই তাকে আক্রমণ করতে হচ্ছে রাহুল-অখিলেশ জুটিকে। সমর্থন দিতে হচ্ছে নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের। এদিকে মোদীকে খোঁচা দিয়েই আরও আক্রমণাত্মক হচ্ছেন রাহুল-অখিলেশ।
উত্তরপ্রদেশের ভোট শুরুর ঠিক এক সপ্তাহ আগে সোমবার কানপুরে ছিল রাহুল-অখিলেশের সভা, আর মোদী ছিলেন আলিগড়ে। দুই যুব নেতা যে তাকেই নিশানা করবেন, তা আঁচ করেই আগেভাগে আত্মপক্ষ সমর্থন করে আক্রমণের পর্বটিও সেরে রাখেন মোদী।
আলিগড়ে মোদি বলেন, ২০১৪ সালে তার বিরুদ্ধে বিরোধী নেতাদের এত আক্রোশ ছিল না। আজ হচ্ছে, কারণ তিনি বেইমানদের লুঠ ঠেকাতে নেমেছেন। কিন্তু দুর্নীতি রুখতে রাজ্যসভায় কড়া আইন যাতে পাশ না হয়, সে জন্য এই নেতারা একে অপরকে আঁকড়ে ধরে রোজ নতুন ফতোয়া জারি করছেন।
অখিলেশ ও কংগ্রেস-সপা জোটকে নিশানা করে মোদীর মন্তব্য, উত্তরপ্রদেশে প্রবল ঝড় উঠেছে। বিজেপির মোকাবিলা করা যুবক মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষেও সম্ভব হচ্ছে না। যুব নেতা বুঝতে পারছেন, ঝড়ে উড়ে যাবেন তিনি। তাই একটা ল্যাম্পপোস্টকে জড়িয়ে ধরে বাঁচতে চাইছেন। গেরুয়া ঝড়ে খড়কুটোর মতো উড়ে যাবে জোট।
এদিকে রাহুল-অখিলেশও চুপ করে নেই। মোদির বক্তব্যের জবাবে রাহুল বলেছেন, যেই আমরা একজোট হয়েছি, মোদীর মুখে হাসি মিলিয়ে গিয়েছে। আর ঘাবড়ে গেলেই উনি নানা ধরণের শব্দ নিয়ে আসেন। পিপিপি, এ বি সি ডি ই এফ।
মোদির আনা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়েও ঠাট্টা করেন রাহুল। তিনি বলেন, তার কাছে ‘এস’ হল সার্ভিস বা গরিবের সেবা। ‘সি’ কারেজ, সত্যি বলার সাহস। ‘এ’ এবিলিটি, প্রতিশ্রুতি পূরণের ক্ষমতা ও ‘এম’ হল মডেস্টি, নিজের দুর্বলতার কথা স্বীকার করা।
রাহুলের কটাক্ষ করে বলেন, মোদী ভাবেন, উনি সব জানেন। বাকিরা বোকা।
রাহুলের সুরেই অখিলেশও বলেছেন, মোদী ও অমিত শাহের থেকে দেশ বাঁচানোটাই তার ‘স্ক্যাম’ (দুর্নীতি)।
রাহুলের বক্তব্যের সময়েই সমবেত জনতা ‘মোদী মুর্দাবাদ’ ধ্বনি তোলে। রাহুল বলেন, কাউকে ‘মুর্দাবাদ’ বলবেন না। ভোটবাক্সে জবাব দিন। বিহারে ভরাডুবির পর মোদী আর সে রাজ্যের কথা বলেন না। উত্তরপ্রদেশ ভোটের পরে মোদী এ রাজ্যের কথাও উচ্চারণ করবেন না!
মোদির দল বিজেপি নেতারাও মানছেন, মনমোহন সিংহের বিপরীতে মোদীর পুঁজি ছিল তার তারুণ্য। এখন উল্টো দিকে দুই যুব নেতার জুটি অস্বস্তিতে ফেলেছে তাকে। অখিলেশ ও রাহুল- ব্যক্তিগতভাবে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নেই। কিন্তু মোদী-অমিতরা লাগাতার দুর্নীতির কথা খুঁচিয়ে তুলছেন। কিন্তু এই দুই নেতা নিজেদের ব্যক্তিগত ‘স্বচ্ছ’ ভাবমূর্তির জোরে সে সব পাশ কাটিয়ে উল্টে মোদীর উপরেই দুর্নীতির অভিযোগ আনছেন। নোট বাতিল যে মুষ্টিমেয় বড়লোকের সুবিধার জন্যই মোদী করেছেন, সেটাই বড় করে প্রচার করছেন রাহুলরা। একে মোদীর ‘দুর্নীতি’ হিসেবে তুলে ধরছেন তারা।
রাহুল-অখিলেশ এমন জায়গায় প্রচার করছেন, যেখানে সংখ্যালঘু ও দলিত ভোট বেশি। রাহুল বলছেন, অখিলেশের সঙ্গে তার ফারাক একটাই। একজন বলেন ‘খোয়াব’, আর একজন বলেন ‘স্বপ্ন’। শমশের বাহাদুর সিংহের কবিতার লাইন তুলে ধরে রাহুল বলেন, ম্যায় হিন্দি অউর উর্দু কা দোয়াব হু, ম্যায় ওহ্ আইনা হু জিসমে আপ হ্যায়। এই জোট উত্তরপ্রদেশের ভবিষ্যতের আয়না। যেখানে যুবক, কৃষক, নারীরা নিজেদের মুখ দেখতে পারবেন।
সূত্র : আনন্দবাজার
মন্তব্য চালু নেই