মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করছেন সু চি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সেনাবাহিনী যে অত্যাচার, নিপীড়ন এবং বর্বর আচরণ করছে তা ঢাকার চেষ্টা করছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সাং সু চি। খবর বিবিসির।

কয়েকদিন আগে সিঙ্গাপুরে সফরকালে সেখানকার নিউজ এশিয়া চ্যানেলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘কোন সমস্যা নেই সে কথা আমি বলছি না। তবে সমস্যা বাস্তবে ততটা বড় নয়। অতিরঞ্জিত করে দেখানোর কারণেই পরিস্থিতি খারাপ মনে হচ্ছে।’ শুধু তাই নয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সহিংসতা উস্কে দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন সুচি।

সুচির গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বহু বছর ধরে সমর্থন করছেন তুন খিন। তিনি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। খিন জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের রক্ষা করতে না পারাটা গভীর হতাশার বিষয়।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর উপর সুচি কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারেন? সেনাবাহিনী এখনো সে দেশের ক্ষমতার একটি বড় অংশকে নিয়ন্ত্রণ করছে। আর এ কারণেই হয়তো সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করতে পারছেন না সু চি। অথবা তিনি নীরব থেকে সেনাবাহিনীকে সমর্থন করছেন।

সুচি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অপরাধকে ঢাকার চেষ্টা করছেন। অনেকের মতে রাখাইন রাজ্যের জটিল পরিস্থিতি বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। কারণ সেখানে কোনো সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিককে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।

পৃথিবীর সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গারা। মিয়ানমার তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করেনা। সংখ্যাগুরু বৌদ্ধরাও তাদের অবহেলার দৃষ্টিতে দেখে।

নিপীড়ন থেকে বাঁচতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত এক মাসে ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে।

হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ এবং নির্যাতনের ভয়ঙ্কর চিত্র বর্ণনা করছেন এসব রোহিঙ্গা মুসলমানরা। যদিও মিয়ানমার সরকার এসব অস্বীকার করছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট নয় বলে উল্লেখ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা।

রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উপর যে ধরনের দমন-পীড়ন চলছে তাকে ১৯৯০-এর সময়ের বলকান যুদ্ধের সময়কার গণহত্যার সঙ্গে তুলনা করছেন অনেকেই।

ওই যুদ্ধের সময় বসনিয়ার মুসলমানদের উপর নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়েছিল সার্বিয়া বাহিনী। ১৯৯৫ সালের জুলাই মাসে আট হাজারের বেশি বসনীয় মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছিল। ইউরোপের মানবাধিকারের ইতিহাসে সেব্রেনিৎসা গণহত্যা একটি কালো অধ্যায় রচনা করেছে।

মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে সু চির দল ক্ষমতায় আসে। শান্তিতে নোবেল পাওয়া সু চি রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি ভালো সমাধান খুঁজে বের করবেন এমনটাই ভেবেছিল আন্তর্জাতিক বিশ্ব। কিন্তু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন আসেনি। বরং তারা আরো বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সব কিছু দেখেও নীরব রয়েছেন সু চি।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মিয়ানমার বিষয়ক গবেষক খিন মার মার খি বলছেন, রাখাইনরা হচ্ছে মিয়ানমারের সবচেয়ে প্রান্তিক সংখ্যালঘু। কিন্তু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম তাদের উপেক্ষা করছে। তিনি মনে করেন, মানবাধিকারের বিষয়টিকে একতরফাভাবে তুলে ধরা হচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোনান লি মনে করেন এটি কোন যুক্তি হতে পারে না। সমাজের কোন একটি অংশ খারাপ অবস্থায় আছে বলে আরেকটি অংশের মানবাধিকার ব্যাপকভাবে লঙ্ঘন করা হবে সেটি কোন সমাধান হতে পারে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সম্প্রতি এক বিবৃতিতে সু চি জানিয়েছেন, রাখাইন বৌদ্ধরা মনে করছেন তারা সংখ্যার দিক থেকে কমে যাচ্ছেন। সেজন্য তারা বেশ উদ্বিগ্ন।

তাই বৌদ্ধ এবং মুসলমানদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দেয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। কিন্তু আদৌ সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।



মন্তব্য চালু নেই