মিরপুরে পুলিশের টোকেন বাণিজ্য

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিরপুর বিভাগে চলাচলরত ব্যাটারিচালিত প্রায় ২০ হাজার অটোরিকশা থেকে পুলিশ প্রতি মাসে কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। টোকেন না থাকলে মিরপুর বিভাগের ৭ থানা এলাকায় অটোরিকশা প্রবেশের অনুমতিই মিলছে না। টাকা দিলেই মিলছে ঈগল, বাঘ, দোয়েল পাখি, রিকশাসহ বিভিন্ন মডেলের টোকেন।

সরেজমিন জানা গেছে, বৃহত্তর মিরপুর এলাকাকে চারটি সেক্টরে ভাগ করে চলছে এ ‘টোকেন বাণিজ্য’। মিরপুর মডেল, পল্লবী, শাহ আলী, কাফরুল, দারুস সালাম, ভাষানটেক ও রূপনগর থানা এলাকাকে চার সেক্টরে ভাগ করে পুলিশের পক্ষ থেকে পাবলিক সোর্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মূলত চাঁদার টাকা তুলছে এ পাবলিক সোর্সরা। ব্যাটারিচালিত নতুন অটোরিকশার জন্য ৬শ’ আর পুরনো রিকশার জন্য নেয়া হচ্ছে ৫শ’ টাকা। আর মাসশেষে চাঁদার এ টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিচ্ছে পুলিশ। সূত্রগুলো বলেছে, বৃহত্তর মিরপুর এলাকায় ২০ হাজারেরও বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রয়েছে। এসব অটোরিকশা থেকে ৫শ’ ও ৬শ’ টাকা হারে প্রতি মাসে কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিচ্ছে পুলিশ ও তাদের সহযোগীরা।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, চার সেক্টরের মধ্যে প্রথম সেক্টরের দায়িত্বে রয়েছেন জামিল। মিরপুর-১০, কাফরুল, কচুক্ষেত ও ইব্রাহীমপুর এলাকা নিয়ে ১ নম্বর সেক্টর। জামিলের টোকেন মার্কা ঈগল। প্রতি মাসে টোকেনের টাকা সংগ্রহের জন্য তার অধীনে রয়েছে বাপ্পী ও সুরুজ নামে আরও দু’জন কর্মচারী। আগারগাঁও, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, তালতলা, আহমেদনগর, কল্যাণপুর ও মিরপুর ১ নম্বর সেকশন নিয়ে গঠিত হয়েছে ২ নম্বর সেক্টর। এ সেক্টরের দায়িত্বে রয়েছেন শফি। তার মার্কা রিকশা। গাবতলী, মাজার রোড, নবাবেরবাগ দিয়াবাড়ী, গৈদারটেক, দ্বীপ নগর, শাহ আলী ও দারুস সালাম এলাকা নিয়ে গঠিত ৩ নম্বর সেক্টরের দায়িত্বে রয়েছেন আজগর। তার টোকেন মার্কা বাঘ। সর্বশেষ পল্লবী, বাউনিয়াবাদ, রূপনগর, শিয়ালবাড়ী, আলোকদি ও ইস্টার্ন হাউজিং এলাকা নিয়ে গঠিত চার নম্বর সেক্টরের দায়িত্বে রয়েছেন বাদল। তার টোকেনের মার্কা দোয়েল পাখি। মিরপুর ১০ সেক্টর গোল চত্বরের পূর্ব পাশে রাড্ডা বার্নান ক্লিনিকের পাশে সরকারি জমিতে টিনঘেরা একটি অফিস খুলে বসেছেন এই চাঁদাবাজরা। প্রতি মাসে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা মালিকরা এসে এখানেই চাঁদা দিয়ে টোকেন নবায়ন করেন।

জানা গেছে, এ সাত থানা এলাকায় পুলিশ সরাসরি ব্যাটারিচালিত কোনও রিকশা থেকে টাকা নেয় না। রিকশা আটক করে শুধু টোকেন পরীক্ষা করে। চার সেক্টরে দায়িত্বপ্রাপ্তরা প্রতি মাসে অবৈধ এসব রিকশা থেকে টাকা আদায় করে। মাস শেষে এ টাকার বড় একটি অংশ পৌঁছে যায় পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে। এর বাইরে এলাকায় ব্যাটারিচালিত নতুন রিকশা কিনলে চক্রটিকে রেজিস্ট্রেশন বাবদ দিতে হয় আড়াই হাজার টাকা।

সূত্র: দৈনিক যুগান্তর



মন্তব্য চালু নেই