মালি শান্তিরক্ষা মিশন : পদে পদে ঝুঁকি
নানা সমস্যায় জর্জরিত মালিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ১১ হাজার সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। রাজনৈতিক সংঘাত নিরসন, জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, গণতন্ত্রে উত্তরণ, বিদ্রোহী সমস্যার সমাধান, অভ্যন্তরীণভাবে উদ্বাস্তু হয়ে পড়া মানুষদের সহায়তা দেওয়াসহ মালিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে শান্তিরক্ষীরা কাজ করে যাচ্ছেন। মোট কথা, মালির পুনঃপ্রষ্ঠিতায় নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা।
মালির উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের মধ্যে চরম বিরোধ বিদ্যমান। রাজধানী বামাকো পড়েছে দক্ষিণাঞ্চলে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের কার্যালয় বামাকোতেই অবস্থিত। উত্তরাঞ্চলের দখল রয়েছে ‘সমন্বিত আজওয়াদ আন্দোলন’ (সিএমএ)-এর হাতে। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে রয়েছে তুয়ারেজ বিদ্রোহী গোষ্ঠী। প্রতিবেশী দেশ আলজেরিয়া ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিবদমান কয়েকটি গোষ্ঠীর সঙ্গে সরকারের শান্তি সমঝোতা স্বাক্ষর হলেও শেষ পর্যন্ত তাতে সমর্থন দেয়নি সিএমএ।
উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে বিরোধের জন্য বামাকোভিত্তিক সরকারের দমন-পীড়নকে দায়ী করে আসছে বিদ্রোহীরা। এদিকে সিএমএ-এর বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছে আল-কায়েদার মালি শাখা ইসলামি মাগরেব। তারা ইসলামি শাসন কায়েম করতে চায়। অন্যদিকে তুয়ারেজ নেতৃত্বাধীন সিএমএ চায় দক্ষিণাঞ্চলের স্বাধীনতা। আবার সরকার সমর্থক ছোট ছোট কয়েকটি জঙ্গিগোষ্ঠী তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত রয়েছে। এই অবস্থায় মালি একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের কোনো ব্যবস্থাতেই সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই।
মালির এই অবস্থা এখনকার নয়। আরো কয়েক বছর আগে থেকে বিদ্রোহী ও জঙ্গিরা সরকারের ভিত নাড়িয়ে দেয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে মালির আহ্বানে সাড়া দিয়ে ফ্রান্স সন্ত্রাস ও জঙ্গিবিরোধী সামরিক অভিযান শুরু করে দেশটিতে। ফ্রান্সের নেতৃত্বে আরো কয়েকটি দেশ মালি অভিযানে অংশ নেয়। গত সপ্তাহে একজন প্রভাবশালী তুয়ারেজ নেতা ও ইসলামি মাগরেবের এক নেতা ফ্রান্সের হামলায় নিহত হন। ২০১৩ সালে তাদের হামলায় দুজন ফরাসি সাংবাদিক ও কয়েকজন সেনা নিহত হন।
রাজনৈতিকভাবে চরম বিপর্যস্ত মালিতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ২০১৩ সালেই উদ্যোগ নেয় জাতিসংঘ। ওই বছরের ২৫ এপ্রিল জাতিসংঘের ২১০০ নম্বর প্রস্তাবে মালিতে শান্তিরক্ষা মিশন পাস হয় নিরাপত্তা পরিষদে। মিশনের দেওয়া হয়, ইউনাইটেড ন্যাশনস মাল্টিডাইমেনশনাল ইন্টিগ্রেটেড স্ট্যাবিলাইজেশন মিশন ইন মালি। নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই ছিল এই মিশনের মূল দায়িত্ব। সেই সঙ্গে দেশটিতে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় অভ্যন্তরীণ সরকারকে সহযোগিতা করা এবং সংকট থেকে উত্তরণের রোডম্যাপ বাস্তবায়নে সরকারকে সহযোগিতা করার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাদের।
২০১৪ সালের ২৫ জুনে মালি মিশন নিয়ে নতুন প্রস্তাব পাস করে জাতিসংঘ। ২১৬৪ নম্বর প্রস্তাবে বলা হয়, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা সংলাপে সাহায্য করা, সরকারি বিভাগগুলো প্রতিষ্ঠা করা এবং সামগ্রিকভাবে দেশটির প্রশাসনিক কাঠামো তৈরিতে সাহায্য করার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাদের ওপর।
মালি মিশনে নিযুক্ত বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ১১ হাজার শান্তিরক্ষী এসব লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু পদে পদে ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হয় শান্তিরক্ষীদের। প্রায়ই তারা জঙ্গি ও বিদ্রোহীদের হামলার মুখে পড়েন। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা হামলা মোকাবিলা করতে সক্ষম হন, কিন্তু তা ঝুঁকি মতো বলা যায় না। জাতিসংঘের তথ্য মতে, দুই বছরে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের হামলায় ৪০ জন শান্তিরক্ষী প্রাণ হারিয়েছেন। জাতিসংঘের হয়ে দেশের সব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করায় কোনো কোনো পক্ষ তাদের বিরুদ্ধে চরম নাখোশ। যার ফলে তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। নানাভাবে বিপর্যস্ত দেশটিতে শান্তি কাজ করলেও শান্তিরক্ষীরা সেখানে আছেন চরম ঝুঁকিতে।
মন্তব্য চালু নেই