মাদ্রাসার ছাত্র ওসামার বিশ্বজয়, রাজপ্রাসাদে দাওয়াত দিয়েছেন ব্রিটিশ রাণী
খবরটা বোধ হয় এরই মধ্যে সবাই জেনে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ফোর্বস এশিয়ার সেরা অনূর্ধ্ব-৩০ বছরের তরুণ সামাজিক উদ্যোক্তাদের তালিকা প্রকাশ করেছে। সেখানে স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের ওসামা বিন নূর।
লাখো তরুণের মধ্যে কেন, কীভাবে তিনি জায়গা করে নিলেন? সেই গল্প শুনতেই তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। রাজধানীর আপডেট ডেন্টাল কলেজে তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা চলছে তাঁর। ১ মার্চ পরীক্ষা শেষ একান্তে কথা বলেন তিনি।
‘এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না এত বড় স্বীকৃতি আমি পেয়েছি। এখনো স্বপ্নের মতো লাগছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি ফোর্বস-এর মেইল পাওয়ার আগে পর্যন্ত আমি কখনো এই পুরস্কারের কথা ভাবিনি।’
ওসামা কথাগুলো যখন বলছেন, তাঁর চোখেমুখে ‘বড় কিছু’ পাওয়ার আনন্দ ঝিলিক দিয়ে যাচ্ছিল।
গল্পের ফাঁকে যে কাজের জন্য এই স্বীকৃতি তা-ও একটু জানিয়ে রাখি। তরুণদের সহযোগিতা করতে ‘ইয়ুথ অপরচুনিটিস’ (www.youthop.com) নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন ২৫ বছর বয়সী ওসামা। সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাঁর বন্ধু মাকসুদ মানিকও এর সঙ্গে যুক্ত আছেন
অনলাইনভিত্তিক ‘ইয়ুথ অপরচুনিটিসের’ মাধ্যমে সারা বিশ্বের বিভিন্ন ধরনের বৃত্তি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আয়োজিত প্রশিক্ষণ, ইন্টার্নশিপ এবং প্রতিযোগিতার খবর জানানো হয়। ওসামা জানালেন, প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে বিশ্বের ১৯২টি দেশ থেকে তরুণেরা এখন তাঁদের পোর্টালে ঢুঁ মারে।
জানতে চাইলাম, ইয়ুথ অপরচুনিটিসের চিন্তা মাথায় চাপল কীভাবে?
ওসামা বলেন, ‘২০১২ সালের দিকে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ইয়ুথ অপরচুনিটিসের যাত্রা শুরু। আরও পরে এসে ওয়েবসাইট করা হয়েছে। আমি একজন তরুণ হিসেবে প্রতিনিয়ত খোঁজ করতাম দেশে-বিদেশে কোথায় প্রতিযোগিতা বা যুব সম্মেলন হচ্ছে। কিন্তু সব সময় তা খুব সহজে জানা যেত না। তরুণদের আগ্রহের এই বিষয়গুলো যেন একই জায়গায় পাওয়া যায়, সে চিন্তা থেকেই চালু করেছিলাম। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তা স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমেই চলছে।’
শুধু ফোর্বস-এর স্বীকৃতিই নয়, এই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর যুক্তরাজ্যের রানির ‘দ্য কুইন্স ইয়াং লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০১৬’ পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন ওসামা বিন নূর।
রাজকীয় অতিথি হিসেবে জুনের মাঝামাঝি যাচ্ছে যুক্তরাজ্যে। এই পুরস্কারের আওতায় আবাসিক কর্মশালাসহ কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘লিডিং চেঞ্জ’ নামে একটি কোর্স করার সুযোগ পাবেন ওসামা।
তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বাবা মোহাম্মদ নূরল ইসলাম, মা আখিঁনূর বেগম আর চার ভাইবোনের সংসারে বেড়ে ওঠা ওসামার। দাখিল ও কামিল পাস করে পড়ছেন মেডিকেলে।
আপনার স্বপ্ন কি তাহলে চিকিৎসক হওয়া? প্রশ্ন শেষ হতে না হতেই ওসামা বলতে শুরু করেন। বোঝা যায়, এই প্রশ্নের মুখোমুখি বহুবার হয়েছেন।
‘চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন আমার কখনোই ছিল না! পরিবারের সবাই চেয়েছে আমাকে চিকিৎসক বানাতে, তাই পড়ছি! ছোটবেলা থেকে আমার বাবা আমাকে শিখিয়েছেন যা-ই করি না কেন তা যেন মানুষের উপকারে আসে। আমি প্রতিনিয়ত সে চেষ্টাই করি। আমি চাই নিজের মতো করে কিছু করার। ফোর্বস-এর স্বীকৃতির পর আরও দায়িত্ব বেড়ে গেল। আমি তরুণদের নিয়েই কাজ করতে চাই।’
ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশসহ নানা স্বেচ্ছাসেবী উদ্যোগকে নিজের ধ্যানজ্ঞান হিসেবে নেওয়া ওসামা অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কাজে। এ ছাড়া তরুণ প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়েছেন ভারতে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশীয় তরুণদের সম্মেলনে।
উপস্থাপক হিসেবে বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরদের সমস্যা নিয়ে ‘টিন-টেক্কা’ নামে কালারস এফএম রেডিওতে একটি অনুষ্ঠানের সঙ্গেও নিজেকে যুক্ত রেখেছেন।
আমরা যখন কথা শুরু করেছিলাম তখন বেলা গড়িয়ে দুপুর। গল্পে গল্পে কখন যে শেষ বিকেল হয়েছে খেয়াল করা হয়নি।
শেষবেলায় এই তরুণ জানালেন, ‘ইয়ুথ অপরচুনিটিস নিয়ে শুরুতেই আমাদের লক্ষ্য ছিল দুটি—অনলাইন ও অফলাইনে তরুণদের নিয়ে কাজ করা। অনলাইনে আমরা সাফল্য পেয়েছি। এখন অফলাইনে মানে ভার্চ্যুয়াল জগতের বাইরে এমনকি দেশের মফস্বল শহরের শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতে চাই। নানা সুযোগ-সম্ভাবনার কথা জানাতে সরাসরি আমরা তাঁদের কাছে যাব।’ -প্রথম আলো
মন্তব্য চালু নেই