মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, নিহত ৩০০
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে, যার কথা সকলেই জানেন। দৈনিকগুলো খুললেই চোখে পড়ে রোমহর্ষক, বিভৎস খবর। দু’দিন আগেই নরমান্ডির উপকূলে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সর্বশেষ শিকার ফ্রান্সের অশতীপর এক ধর্মযাজক, গলা কেটে হত্যা করা হয় তাকে। খবরটি প্রচার করা হয়েছে তামাম দুনিয়ার প্রচার মাধ্যমে। এই যুদ্ধের বিস্তৃতিও ব্যাপক, পুরো দুনিয়াই এই যুদ্ধের রণাঙ্গন।
কিন্তু এই যুদ্ধের আড়ালে চাপা পড়ে গেছে আরেকটি যুদ্ধের খবর। এই যুদ্ধ, সারা বিশ্বে নয়, চলছে মূলত ফিলিপাইনে। সে দেশের প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুয়েত্রেতের নেতৃত্বে এই যুদ্ধে শুধু জুলাই মাসে নিহত হন তিন শ’ ব্যক্তি।
গুলি করে হত্যা করে লাশগুলো ফেলে রাখা হয় রাস্তায়। অবৈধ মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শিকার মৃতদেহগুলোর কোনো কোনোটি বিবস্ত্র। কোনো কোনো লাশের হাত-পা বাঁধা, কোনোটির মুখ টেপ দিয়ে আটকানো, কোনোটির জামায় রক্তের ছোপ ছোপ দাগ লেগে রয়েছে।
বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, এই লোকগুলোর স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজনরা লাশগুলো নিয়ে যাচ্ছে ধরাধরি করে। অভিযোগ করা হচ্ছে, তাদের হত্যা করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এই লোকগুলো বিচারের সুযোগ পায়নি।
প্রচার মাধ্যমের খবরে বলা হয়, শুধু জুলাই মাসে প্রায় তিন শ’ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে পুলিশের উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আপনাদের প্রচেষ্টা দ্বিগুন করেন। প্রয়োজনে তিনগুন বাড়ান। মাদকদ্রব্য বিক্রেতা ও মাদকসেবীরা দেশের ভাবমূর্তি রীতিমতো ডুবিয়ে দিচ্ছে। তাই যে কোনো মূল্যে তাদের ঠেকাতে হবে।’
ম্যানিলায় এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে দুয়েত্রেত বলেন, ‘এই সব লোকজন আমাদের শিশুদের ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমি আপনাদের সাবধান করে দিচ্ছি যে, আপনারা মাদক সেবন করবেন না। আপনি পুলিশ বাহিনীর সদস্য হলেও রেহাই পাবেন না।’
মে মাসে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দুয়েত্রেত জয়ী হয়েই মাদকের বিরুদ্ধে দমন অভিযান চালানো অঙ্গীকার করেন। এরপর থেকে কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করে ৬০ হাজার মাদকসেবী। প্রেসিডেন্ট দুয়েত্রেত ক্ষমতায় আসার পর পুলিশ ১১০ জনের প্রাণহানির কথা স্বীকার করেছে। কিন্তু স্থানীয় প্রচার মাধ্যমের হিসেব অনুযায়ী, নিহতের সংখ্যা অনেক বেশি।
এরই মধ্যে অন্তত ৩০ হাজার মাদকব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে। জব্দ করা হয়েছে ৩০০ কেজি শাবু (মেথামফেটিমাইন)।
মাদকবিরোধী অভিযানে লাশ রাস্তায় জমা হলেও অনেকক্ষেত্রে তার দায় পুলিশ স্বীকার করছে না।
এতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার আইনজীবীরা। তারা বলছেন, শেষমেষ এই লড়াই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা।
শুধু একটি ঘটনায় পুলিশ শনিবার ভোরে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরে একসঙ্গে আট জনকে হত্যা করে। এতে শীর্ষ মানবাধিকার আইনজীবী হোসে মানুয়েল ডিওকনো বলছেন, প্রেসিডেন্ট দুয়েত্রেত সহিংসতার বিষ্ফোরণ ঘটিয়েই চলেছেন, যা একদিন চলে যাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ফিলিপাইন পরিণত হতে পারে বিচারবিহীন একটি দেশে।
মন্তব্য চালু নেই