মাটির নিচে রহস্যময় শহরের খোঁজ মিলল
আমাদের এই পৃথিবী নানা রহস্যময়তা আর বিচিত্রতা দিয়ে ঘেরা। পাহাড়, সমুদ্র, আকাশ বা মাটির নিচেও রয়েছে অজানা রহস্য। পৃথিবীর এই রহস্যময়তার কতটুকুই বা আমরা জানতে পেরেছি? আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে যতটুকু জেনেছি, তার চেয়ে অনেক বেশি অজানা রয়েছে।
১৯১১ সালের আগে এই জায়গাটির বাসিন্দা বলতে ছিল মরুভূমির সাপ, বিষাক্ত পোকামাকড়, টিকটিকি আর এমু পাখি। জায়গাটির বিশেষত্ব প্রথম আবিষ্কার করে উইল হাচিসন নামের চৌদ্দ বছরের এক কিশোর।
১৯১৬ সালের দিকে ‘ওপাল’ নামে এক ধরনের খনিজ পদার্থের খোঁজে এই স্থানটিতে জড়ো হতে থাকেন খনি শ্রমিকেরা। ওপাল হচ্ছে পানির মতো একধরনের পদার্থ, যা মাটির সঙ্গে মিশে থাকে। পৃথিবীর ৮০ ভাগ ওপালের জোগান আসে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার এই কুবার প্যাডি থেকে।
শহরটির গড়ে ওঠার কথা : কুবার প্যাডিতে ওপাল সংগ্রহের জন্য প্রতিদিন অনেক শ্রমিক আসতো। লোকালয় থেকে এই স্থানটি অনেক দূরে অবস্থিত হওয়ায় প্রতিদিন এসে কাজ করা এবং ফিরে যাওয়া সম্ভব ছিল না। এদিকে দিনের বেলায় এখানে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি তাপমাত্রা থাকত। আবার রাতের বেলা তাপমাত্রা সম্পূর্ণ বিপরীত। একেবারে শূন্যের কোঠায় নেমে যেত তাপমাত্রা। তার ওপর রয়েছে ধূলিঝড়। সব মিলিয়ে কঠিন এক অবস্থা।
তারপরও কাজ করতে হবে। এই ভেবে শ্রমিকরা মরুভূমির মাটির নিচে ঘর বানানো শুরু করে। একজনের দেখাদেখি আরেকজন। এভাবে একে একে ঘর বানাতে বানাতে এক সময় মাটির নিচে গড়ে ওঠে পুরো একটি শহর।
প্রথম দিকে বিদ্যুৎ, পানি ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধা না থাকলেও সময়ের ব্যবধানে সেগুলোর ব্যবস্থা হয়ে যায়। এরপর ধীরে ধীরে উন্নত শহরের প্রায় সবকিছুই এখানে গড়ে উঠতে থাকে। প্রথমে বাজার, তারপর মার্কেট, গির্জা, বিনোদন কেন্দ্র, ব্যাংকসহ দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছুই মাটির নিচের এই শহরে স্থাপন করা হয়।
এই শহরের সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হলো এখানে কোনো ঘাস নেই, নেই কোনো গাছ। সবুজ বলতে এখানে কিছু নেই। আছে কেবল তৈলাক্ত বালি।
তবে সেদিনের সেই ‘কুবার প্যাডি’ এখন শুধুমাত্র খনি শ্রমিকদের শহর নয়। বর্তমানে এটি পর্যটন স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রতি বছর অসংখ্য পর্যটক এই স্থানটি দেখতে আসেন। এ ছাড়া আরো নাগরিক সুবিধা যুক্ত হয়েছে এখানে। চাইলে আপনিও এখানে বেড়াতে পারেন কিছু দিনে।
মন্তব্য চালু নেই