মমতার সুবিধাবাদী রাজনীতি, কটাক্ষ বিরোধীদের, তৃণমূলের হাত ধরতে নারাজ আপও

দিল্লিতে বিজেপির ভরাডুবিতে উচ্ছ্বসিত তৃণমূল নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সকালে ট্যুইট করে দিল্লিতে কেজরিওয়ালের জয়কে টার্নিং পয়েন্ট আখ্যা দেওয়া থেকে শুরু করে, বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেওয়া, দিল্লিতে আম আদমি পার্টির অভাবনীয় ফলাফলে উছ্বাস গোপন করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।যদিও আম আদমি পার্টি পশ্চিমবঙ্গের আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছে।

বিরোধীরা পাল্টা প্রশ্ন তুলছে, আম আদমি পার্টির জয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এত উছ্বাস কিসের? দু’দলের নীতির মধ্যে তো বিস্তর ফারাক! একদিকে কেজরিবাল যেখানে দুর্নীতি বিরোধী লড়াই করে উঠে এসেছেন, সেখানে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তো সেই দুর্নীতিতেই জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। সারদা কেলেঙ্কারিই তো এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাথাব্যাথার সবচেয়ে বড় কারণ। বিরোধীদের প্রশ্ন, সারদা কেলেঙ্কারি অভিযুক্তদের কি কখনও কাছে টেনে গায়ে কালির ছিটে লাগাবেন কেজরিবাল? এর জবাবও দিয়েছে আম আদমি পার্টি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে আপের জয়ে বেজায় উছ্বসিত হলেও কেজরিবালের দলের পশ্চিমবঙ্গের নেতারা কিন্তু সাফ করে দিয়েছেন, এ রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে তাদের সমঝোতার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ, তাদের লড়াই দুর্নীতির বিরুদ্ধে। তাই এ রাজ্যে আম আদমি পার্টির মূল প্রতিপক্ষ তৃণমূল। আম আদমি পার্টি নেতা অলক চতুর্বেদী এদিন বলেছেন, আমরা বিধানসভা নির্বাচনে ২৯৪ আসনেই লড়াই করব। সেজন্য সংগঠন বিস্তারই আমাদের লক্ষ্য। দলের অপর এক নেতা সুরাজ নারায়ন সিংহ বলেছেন, এ রাজ্যেও পরিবর্তন প্রয়োজন।

কিন্তু, আম আদমি পার্টি যখন তাদের ছোঁয়া এড়াতে চাইছে, তখন তাদের জয়ে তৃণমূলের এত উছ্বাস কেন? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, কেজরিওয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে সারদা অস্বস্তি ঢাকার চেষ্টা করছে শাসক দল?

তবে, প্রথমে দিল্লিতে কেজরিওয়ালকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানো কিংবা এখন তাঁর জয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উচ্ছ্বসিত হলেও অণ্ণা-অরবিন্দের লোকপাল আন্দোলনের সময় কিন্তু প্রকাশ্যে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি তৃণমূল নেত্রীকে। উল্টে, বিরোধীদের দাবি, কখনও অণ্ণার আন্দোলনের কখনও আবার আম আদমি পার্টির সমালোচনায় সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিরোধীদের দাবি, এখন কেজরিবালের পাশে দাঁড়ানো আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুবিধাবাদী রাজনীতি। সুবিধামতো সমালোচনা করা, আবার শত্রুর শত্রু বন্ধু বলে কখনও কাছে টেনে নেওয়া। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, দুর্নীতিই এখন সবচেয়ে বড় ইস্যু। মানুষ আর যাই চাক, দুর্নীতিপরায়ণদের কোনওভাবেই দেখতে চাইছে না। দিল্লির ভোটে কেজরিবালকে জিতিয়ে সাধারণ মানুষ তাঁর দুর্নীতিবিরোধী ভাবমূর্তির উপরই আস্থা দেখাল। তাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে এ রাজ্যেও কি দুর্নীতিই সবচেয়ে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে?



মন্তব্য চালু নেই