ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে সৌদি আরবের মক্কা একটি পবিত্র নগরী। চলতি মাসের শুরু থেকে একের পর এক দুর্ঘটনা এই পবিত্র নগরীটিকে ভিন্নভাবে সংবাদের শিরোনামে এনেছে। মাসের প্রথম দিকে মক্কার মসজিদুল হারামের ওপর একটি ক্রেন ভেঙে পড়লে দুর্ঘটনায় ১০৯ জন হাজি নিহত ও ২৩৮ জন আহত হয়। এই ঘটনার সৌদি বাদশা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও, এখন পর্যন্ত সেই কমিটি থেকে কোনো বিবৃতি দেয়া হয়নি। এই ঘটনার উত্তাপ শেষ হতে না হতেই হাজিদের বসবাসের হোটেলে কয়েক দফা আগুন লাগায় বিপর্যস্ত হয়ে যায় পুরো ব্যবস্থাপনা। হোটেলে আগুন লাগায় হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও বিপুল পরিমান আর্থিক ক্ষতি হয়। এই আর্থিক ক্ষতির হিসেব করার আগেই হজের তৃতীয় দিন মিনায় পদদলিত হয়ে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আড়াইশ হাজি নিহত ও চারশ আহত হয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে এতগুলো ঘটনা গোটা সৌদি আরবকে নাড়িয়ে দিয়েছে। তবে সৌদি কর্তৃপক্ষের জন্য এই অবস্থা নতুন নয়। এর আগেও মোট ১০বার এরকম বড় বিপর্যয় হয়েছিল এবং তা সামলেও নিয়েছিল দেশটি।
ডিসেম্বর, ১৯৭৫
পবিত্র নগরী মক্কা থেকে কয়ে মাইল পূর্বে অবস্থিত মিনার তাবুতে অজানা কারণে আগুন লেগে যায়। ঈদুল আজহার সময় ওই অগ্নিকাণ্ডে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ মারা যায়। মিনার যে অংশে তুরস্ক এবং নাইজেরিয়া থেকে আগত হাজিরা তাবু ফেলেছিল সেখানেই ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরবর্তী সময়ে যদিও সৌদি সরকার এই অগ্নিকাণ্ডের জন্য গ্যাস সিলিণ্ডার বিস্ফোরণকে দায়ি করে বিবৃতি দিয়েছিল।
ডিসেম্বর, ১৯৭৯
কয়েকশ বন্দুকধারী হজের একেবারে শেষদিন গ্র্যান্ড মসজিদে প্রবেশ করে এবং কয়েক হাজার হাজিকে জিম্মি করে। বন্দুকধারীদের দাবি ছিল তাদের নেতাকে মসীহা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া। দুই সপ্তাহ ওই বন্দুকধারীরা মসজিদটি অবরুদ্ধ করে রাখে। কিন্তু আলোচনায় কাজ না হওয়ায় শেষমেষ সৌদি সেনাবাহিনী মসজিদটিতে হামলা চালায়। ওই ঘটনায় প্রায় আড়াইশ মানুষ মারা যায়।
জুলাই, ১৯৮৭
হজ শুরু হওয়ার ঠিক আগে একদল ইরানি হাজি মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদের সামনে পশ্চিমা বিরোধী সমাবেশ করার চেষ্টা করে। সমাবেশটি কিছু সময়ের মধ্যেই সৌদি নিরাপত্তা কর্মীদের আওতার বাইরে চলে যায়। এমতাবস্থায় সৌদি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ইরানি হাজিদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় চার শতাধিক হাজি মারা যায়। মৃতদের অধিকাংশই ইরানি শিয়া। কয়েক ঘণ্টা ধরে এই হত্যাকাণ্ড চালানো হয়।
জুলাই, ১৯৮৯
হজের শেষদিন পরপর দুটি ভারি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় একজন নিহত ও জনা বিশেক মানুষ আহত হয়। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ১৬ জন কুয়েতি শিয়া মুসলিমকে সৌদি কর্তৃপক্ষ প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ করে। পাশাপাশি এই বোমাহামলার জন্য সৌদি আরব ইরানকে দোষারোপ করে, যদিও ইরান ওই অভিযোগ অস্বীকার করে।
জুলাই, ১৯৯০
নির্দিষ্ট সঙ্কীর্ণ একটি সুড়ঙ্গের ভেতর দিয়ে মক্কা থেকে মিনায় যাওয়ার পথে পদদলিত ও শ্বাসরোধ হয়ে ১৪২৬ জন হাজি মৃত্যুবরণ করে। এই ঘটনার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষ হাজিদেরকেই দোষারোপ করেন। কর্তৃপক্ষের মতে, হাজিরা লিখিত নির্দেশনামা ঠিক মতো না পড়ার কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে।
মে, ১৯৯৪
শয়তানকে পাথর ছুড়ে মারার ঘটনায় পদদলিত ও পাথরে আঘাত পেয়ে ২৭০ জন হাজি মারা যায়। মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল ইন্দোনেয়িশার।
এপ্রিল, ১৯৯৭
মক্কা নগরীর নিকটবর্তী তাবুর শহর মিনায় অগ্নিকাণ্ডে ৩০০ মানুষ নিহত ও এক হাজার আহত হয়। রান্নার চুলোর গ্যাস সিলিণ্ডার বিস্ফোরিত হয়ে এই ঘটনার সৃষ্টি হয়। যদিও প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, অগ্নিকাণ্ডে নিহত হওয়ার চেয়ে পদদলিত হয়েই বেশি মানুষ মারা যায়।
এপ্রিল, ১৯৯৮
হজের শেষের দিন শয়তানের উদ্দেশ্যে পাথর ছুড়ে মারার সময় জামারত সেতুর উপর মাত্রাতিরিক্ত মানুষ উঠায় পদদলিত হয়ে ১১৮ জন মানুষ মারা যায়। সেতু ভেঙ্গে যাচ্ছে এমন এক গুজবের ফলে মানুষের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হলে এই ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।
মার্চ, ২০০১
ঈদুল আজহার প্রথম দিন শয়তানের উদ্দেশ্যে পাথর ছুড়ে মারার সময় পদদলিত হয় ৩৫ হাজি মারা যান। সেবারই প্রথমবারের মতো সৌদি যুবরাজ নায়েফ বিন আবদুল আজিজ ওই ঘটনার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষের গাফেলতির কথা স্বীকার করেন।
ফেব্রুয়ারি, ২০০৪
শয়াতানের উদ্দেশ্যে পাথর ছুড়তে গেলে ভিড়ের মধ্যে পদদলিত হয়ে ২৪৪জন হাজি নিহত হয়। প্রায় ২৭ মিনিট ধরে চলা ওই ঘটনা পরবর্তীতে অবস্থা নিয়ন্ত্রনে আনতে পারে কর্তৃপক্ষ।
মন্তব্য চালু নেই