ভয়ঙ্কর ১২: সামলাতে হিমশিম এফবিআই
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত লড়াই শুরু চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে অবশ্য বেশ ভালোই নাকানি চুবানি খাচ্ছে পশ্চিমাদের মোড়ল এই দেশটি। এতো গেল বাইরের কথা। কিন্তু ঘর সামলাবে কে?
অন্ধকার জগতের নিয়ন্ত্রক গ্যাংগুলো যেভাবে দিন দিন সহিংস হয়ে উঠতে তাতে আপাত নিরাপদ যুক্তরাষ্ট্রকে কোনোভাবেই সুরক্ষিত ভাবা যাচ্ছে না। গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের ২০১১ সালের রিপোর্টে এমন ১২টি গ্যাংয়ের কথা উল্লেখ করেছে যেগুলো ক্রমেই বড় হুমকি হয়ে উঠছে।
ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ছোটবড় ৩৩ হাজার গ্যাং রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। আর এর সঙ্গে জড়িদ ১৪ লাখ মানুষ। দেশটিতে সংঘটিত মোট অপরাধের ৪৮ শতাংশের সঙ্গে এরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। গ্যাংগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো:
দ্য এইটটিন স্ট্রিট গ্যাং
দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার এই গ্যাংটি ‘সুরিনো’ নামে বেশি পরিচিত। গ্রুপটি খুব দ্রুত বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে এর শাখা বিস্তার করছে। মেরিল্যান্ড থেকে শুরু করে হাওয়াই পর্যন্ত ৩২টি অঙ্গরাজ্যে এটি শাখা বিস্তার করেছে। এই দলটি মানুষ হত্যা, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, মাদক পাচার, গাড়ি চুরি এবং নিউইয়র্কে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে সরকারি সুবিধা নেয়ার মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত।
ফ্লোরেন্সিয়া থারটিন
এই গ্রুপটি মেক্সিকোর মাফিয়া ও এর প্রতিদ্বন্দ্বী এইটটিন স্ট্রিট গ্যাংয়ের সঙ্গে কাজ করে থাকে। এটি লস অ্যাঞ্জেলেসের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ গ্যাং। ভার্জিনিয়া ও আইওয়ার মতো প্রত্যন্ত অঙ্গরাজ্যগুলোতেও এর তৎপরতা রয়েছে। এর সদস্যরা ডাকাতি, মাদক ব্যবসা ও হত্যার সঙ্গে জড়িত। গত আগস্টে মানুষ হত্যা, নির্যাতন, ছিনতাই ও মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত রয়েছে গ্রুপের এমন ৩৬ জন সদস্যকে চিহ্নিত করা হয়। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই গ্যাংটি লস অ্যাঞ্জেলেসের সমৃদ্ধশালী এলাকাগুলোতে মাদক বিক্রি ও অবৈধ জুয়ার আসর পরিচালনা করে। অভিযোগ রয়েছে, গ্যাংয়ের প্রধান আরতুরো কাস্তিল্লানোস কারাগারে থেকেই সব নিয়ন্ত্রণ করেন।
ব্যারিও আজটেকা
এরা মূলত এল পাসো, টেক্সাস ও লস আজাটেকাস ভিত্তিক গ্যাং। এরা মেক্সিকো সীমান্তের উভয় পাশে তাদের অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করে। সামরিক কায়দায় গঠিত দলটি আধা সামরিক বাহিনীর চেয়েও বেশি শক্তিশালী। দলের অনেক সদস্য টেক্সাসের কারাগার থেকে নিয়োগ পাওয়া। কারাগারের ভেতরেই এই গ্রুপের সদস্যরা অনেক ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। দলটি মেক্সিকোর হুয়ারেস ও লা হেতাস নামে ভয়ঙ্কর দুটি অপরাধী চক্রের সঙ্গে মাদক ও মানবপাচার করে। এই দলটি এতোটাই শক্তিশালী যে এরা ২০১০ সালে মেক্সিকোতে কর্মরত মার্কিন কনস্যুলেটের কয়েকজন কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে। ২০১১ সালে এ ঘটনায় দলের ৩৫ জন সদস্যের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়।
অলমাইটি ল্যাটিন কিং নেশন (এএলকেএন)
চল্লিশের দশকে শিকাগোতে এই গ্রুপটির জন্ম। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় স্প্যানিশ গ্যাং। যুক্তরাষ্ট্রের ৩৪টি অঙ্গরাজ্যে এর শাখা রয়েছে। শুধু শিকাগো শহরেই এর ১৮ হাজার সদস্য। এর সদস্যরা ল্যাটিন কিং নামে পরিচিত। গত ফেব্রুয়ারিতে দ্য টাইমস অব নর্থওয়েস্ট ইন্ডিয়ানা নামের একটি পত্রিকায় দলের এক সাবেক সদস্য জানান, তাদের দলটি একটি সন্ত্রাসবাদী দল ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাসবাদী দল এবং আপনার সন্তানকে সন্ত্রাসী বানানোর চেষ্টা করছি। আমাদের দল আপনার সন্তানকে অস্ত্রের ব্যবহার, সেগুলো পরিচ্ছন্ন করে রাখা এবং কী করে তাদের জোড়া লাগানো যায় সেই শিক্ষা দেবে। একইসঙ্গে আপনার সন্তান শিখবে কীভাবে বোমা বানাতে হয়, কীভাবে বাড়ি দখল ও ডাকাতি করতে হয়, কীভাবে বিভিন্ন পদ্ধতিতে জখম ও হত্যা করতে হয় এবং কীভাবে মাদক পাচার ও বিক্রি করতে হয়।
সোমালি গ্যাং
সোমালিয়া মানেই যেন দস্যুতা। সাগরে বিভিন্ন দেশের জাহাজদের নাবিকদের অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের জন্য ইতিমধ্যে সোমালিয়া নামডাক ছড়িয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে যে সব সোমালিয়রা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত এরা সবাই একসময় উদ্বাস্তু হিসেবে এসেছিল। বর্তমানে এরা সিয়াটল, সান দিয়েগো ও মিন্নিয়াপোলে মাদক ও মানব পাচার, ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি, বেশ্যাবৃত্তি ও বিভিন্ন সহিংস কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। সোমালি গ্যাংয়ের সদস্যরা মাঝে মাঝে আফ্রিকান-আমেরিকান গ্যাংগুলোর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
এমএস-১৩
লা মারা সালভাট্রুচা, সংক্ষেপে এমএস-১৩। এল সালভাদরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণে বিরত রাখার মাধ্যমে গ্যাংটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনায় আসে। ১৯৮০ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে কয়েকজন সাবেক সেনাসদস্য ও এল সালভাদরের উদ্বাস্তুরা মিলে দলটি গঠন করে। বর্তমান এই গ্যাংটি মানব পাচার, শিশুদের বেশ্যাবৃত্তি, মাদক পাচার, হত্যাসহ ভয়ঙ্কর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। এর সদস্যদের সবার গায়েই ট্যাটো আঁকা থাকে। ২০১২ সালে মার্কিন ফেডারেল কর্তৃপক্ষ এই গ্যাংটিকে বহুজাতিক অপরাধী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।
ট্রিনিট্যারিয়াস
১৯৮০ সালে নিউইয়র্কের কারাগারে এই গ্যাংটির জন্ম। দলের প্রভাব রয়েছে নিউইয়র্ক শহরসহ ১০টি অঙ্গরাজ্যে। প্রভাবশালী এই গ্যাংটির সঙ্গে শত্রুতা রয়েছে ব্লাডস, ক্রিপস, ও ডমিনিকান ডোন্ট প্লের মতো সন্ত্রাসী দলগুলোর। নিউইয়র্ক ও নিউজার্সির হাইস্কুলগুলোতে এই গ্যাংয়ের সদস্য রয়েছে। ২০১২ সালে নিউইয়র্কের ব্রোঙ্কস এলাকায় নয় জনকে হত্যা ও ২৪টি হত্যা চেষ্টার অভিযোগ আনা হয় এর ১২জন সদস্যের বিরুদ্ধে।
দ্য হারমোনাস ডি পিস্টোলিরোস ল্যাটিনো (ল্যাটিন বন্দুকধারীদের ভ্রাতৃ সংগঠন)
টেক্সাসের জেলাখানায় এ গ্যাংয়ের জন্ম। মেক্সিকোর মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এই গ্যাংয়ের সম্পর্ক খুবই ভালো। ব্যাপক সুসংগঠিত এই গ্যাংটির আলাদা সংবিধান, ঐতিহ্য ও আজীবন সদস্য ব্যবস্থা রয়েছে। মাদক পাচারের দায়ে দলের প্রধান জেসাস এসপিনোসা যাবজ্জীবন সাজা নিয়ে কারাগারে রয়েছেন। প্রচুর মারিজুয়ানা ও কোকেন আমদানি ও বিক্রির জন্য বিখ্যাত হারমোনাস ডি পিস্টোলিরোস। এছাড়া অবৈধ অস্ত্রের কেনাবেচা, কারাগারে জুয়া ও হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে গ্যাংটি জড়িত।
ম্যাক্সিকান মাফিয়া
এই গ্যাংয়ের অধিকাংশ সদস্যই দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার কারাগার থেকে আসা। ১৯৫০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ট্র্যাসি কিশোর সংশোধন কারাগারে দলের জন্ম। বর্তমানে অ্যারিজোনা, নিউ মেক্সিকো ও টেক্সাসে এর কর্মকাণ্ড বিস্তৃত। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শতাধিক কারাগার থেকে এর কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। প্রত্যেকটি ইউনিট প্রধানের তার অনুসারীদের কারারক্ষী ও শত্রুদের হত্যার নির্দেশ দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
দ্য মোঙ্গলস
এটি মোটরসাইকেলভিত্তিক গ্যাং। অর্থাৎ এই গ্যাংয়ের সদস্যররা সবাই মোটরসাইকেল চালক। ২০০৮ সালে হ্ত্যা, মাদক পাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে মোঙ্গলের ৬১ সদস্যকে আটক করা হয়। গ্যাংটির নিজস্ব ওয়েবসাইটও রয়েছে। সেখানে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দলের সদস্যরা বন্দুক, ছুরি, লোহার আঙ্গুলগাঁট, লোহার পাইপের টুকরা ও স্টিল দিয়ে মোড়ানো জুতা ব্যবহার করে।
দ্য ভাগোস মোটরসাইকেল ক্লাব
‘দ্য সাইকো’ নামে পরিচিত। এর সদস্যরা সেনাবাহিনী থেকে আসা। এরা খুবই নৃশংস। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে এরা যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। মাদক উৎপাদন ও বিক্রি, বিমা জালিয়াতি, মারমারি, মানিলন্ডারিং, হত্যা, গাড়ি চুরি, সাক্ষী গায়েবের সঙ্গে এরা জড়িত।
হুইলস অব সোল
দাবি করা হয়, এরা বিভিন্ন জাতির লোকদের সমন্বয়ে গঠিত মোটরচালকদের সবচেয়ে বড় গ্যাং। ২৫টি অঙ্গরাজ্যে এর ৪শ সদস্য রয়েছে। এরা চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত।
মন্তব্য চালু নেই