ভোটাধিকার বঞ্চিত করে জেলা শিক্ষক সমিতির পকেট কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত ॥ ফুঁসে উঠেছেন সাতক্ষীরার সাড়ে তিন হাজার শিক্ষক

সাতক্ষীরায় জাতি গড়ার কারিগররা অগনতান্ত্রিক উপায়ে কমিটি গঠনের মিশনে নেমেছেন। ‘প্রতিনিধিত্বমুলক কমিটি’ গঠনের নামে শিক্ষকদের ভোটাধিকার বঞ্চিত করে পকেট কমিটি গঠনের যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন প্রায়। গনতান্ত্রিক দেশে অগনতান্ত্রিক উপায়ে শিক্ষক সমিতির কমিটি গঠনের চক্রান্তের প্রতিবাদে ফুসে উঠেছেন তিন সহস্রাধিক শিক্ষক। তারা সমিতির গঠনতন্ত্র মোতাবেক সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্ধারনের দাবী জানিয়েছেন।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষক সমিতি একটি সুসংগঠিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত সংগঠন। যে সমিতি জেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্ব করে। দেশের শিক্ষক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব শেখ আমানুল্লাহ্ আমৃত্যু এ সমিতির সভাপতি ছিলেন। তার সময়ে এ সমিতির আর্থিক স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা ছিল প্রশ্নাতীত বিষয়। তার মৃত্যুর পর এসমিতি এক ধরনের কুচক্রীদের বেষ্টনে পড়ে। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয় বুধহাটা বিপিএম কলেজিয়েট স্কুলের অধ্যক্ষ চিত্তরঞ্জন ঘোষকে। নতুন করে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলে পদ আকড়ে থাকার মানসে চক্রান্ত শুরু করেন কতিপয় স্বার্থান্বেষী শিক্ষক। কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠিত হলে পরাজিত হওয়ার ভয়ে তারা গনতান্ত্রিক পথে হাটছেন না।

সমিতি সুত্রে জানা যায়, সাড়ে তিন হাজারেরও বেশী শিক্ষক ভোটাধিকার প্রয়োগের যোগ্যতা রাখেন। অথছ তাদের ভোটাধিকার বঞ্চিত করে ‘প্রতিনিধিত্বমুলক কমিটি’ গঠনের অদ্ভুদ এক সুত্র বের করেছেন তারা। গত ১৯ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার শিক্ষক সমিতি ভবনে অনুষ্ঠিত জরুরী সভায় অগঠনতান্ত্রিক ও অগনতান্ত্রিক উপায়ে বর্তমান কমিটি ‘প্রতিনিধিত্বমুলক কমিটি’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রত্যেক উপজেলা থেকে তাদের পছন্দমত সদস্য সংগ্রহ করে তাদের মধ্য থেকেই নেতৃত্ব নির্ধারনের জন্য ৪১ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্যানেল বডি তৈরী করা ছিল। গত সভায় ওই প্যানেল থেকেই আগামী ৪ মার্চ তারিখে পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।

বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পরপরই এধরনের পকেট কমিটি গঠনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন জেলার কয়েক হাজার শিক্ষক। অগঠনতান্ত্রিক উপায়ে কমিটি গঠন রুখতে ইতোমধ্যে আবেদন করা হয়েছে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন কমিশনে। এছাড়া জেলা সহকারী শিক্ষক সমিতি সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। অথছ শিক্ষকদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার এ আন্দোলনকে শুধু তুচ্ছ তাচ্ছিল্যই করেননি বর্তমান সমিতি নেতৃবৃন্দ, গনতান্ত্রিক দাবী মেনে না নেয়ার ব্যাপারে জরুরী সভায় অনড় থাকেন তারা।

কালিগঞ্জ উপজেলা সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি শেখ ইকবাল আলম বাবলু জানান,গনতান্ত্রিক ও গঠনতান্ত্রিক উপায়ে জেলা কমিটি গঠিত না হলে, তথাকথিত প্রতিনিধিত্বমুলক কমিটিতে কালিগঞ্জের কোন প্রতিনিধিকে থাকতে দেয়া হবে না।

শ্যামনগর সহকারী শিক্ষক সমিতির আহবায়ক মনোদ্বীপ সরকার ও সদস্য সচিব আব্দুল মজিদ জানান, শিক্ষকদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে পকেট কমিটি গঠিত হলে, সেটি হবে সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষক সমিতির জন্য কলঙ্কজনক।

জেলা সহকারী শিক্ষক সমিতির আহবায়ক অরুপ সাহা বলেন,বর্তমান মেয়াদ পার হওয়া কমিটি শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্রের ৫(১),৪৪(২) ও ৪৪(১০) ধারাগুলি উপেক্ষা করে অগনতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক উপায়ে সাজানো কমিটি গঠন করার অশুভ পায়তারায় লিপ্ত,যা সাতক্ষীরার সাড়ে তিন হাজার শিক্ষকের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার নামান্তর মাত্র।

জেলা শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি চিত্তরঞ্জন ঘোষ পকেট কমিটি গঠিত হওয়ার বিষয়টি এ প্রতিবেদকের কাছে প্রকারান্তরে স্বীকার করে জানান,সরাসরি ভোটে কমিটি গঠিত হলে অনেক উপজেলার শিক্ষকরা জেলা শিক্ষক সমিতির পদ বঞ্চিত হবে। তাই ৪১ সদস্য বিশিষ্ট প্যানেল থেকেই কমিটি গঠিত হবে। প্যানেল গঠিত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন,উপজেলা শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে সাত উপজেলা থেকে ৪১ সদস্যের নাম পাওয়া গেছে।



মন্তব্য চালু নেই