ভুয়া খবর জিতিয়েছে ট্রাম্পকে!

মার্কিন প্রেসিডেন্টে নির্বাচনে গণমাধ্যম তার বিপক্ষে কাজ করেছে বলে প্রথম থেকেই অভিযোগ করে আসছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাই নির্বাচনে হেরে গেলে ফলাফল বর্জনেরও হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাস্তবতা বলছে অন্য কথা। আদতে ভুয়া সংবাদের কারণেই ট্রাম্প অবশেষে হোয়াইট হাউজের টিকিট পেয়েছেন।
মার্কিন নির্বাচনের প্রচারাভিযান চলার সময় অনেকগুলো ওয়েবসাইট গজিয়ে উঠেছিল যেখান থেকে নিয়মিতভাবে ভুয়া খবর প্রচার করা হতো।
এসব সাইটের মালিকানা খুঁজতে গিয়ে বিবিসি জানতে পেরেছে এর অনেকগুলোই পরিচালনা করা হতো পূর্ব ইউরোপের ছোট্ট এক দেশ ম্যাসিডোনিয়া থেকে।
এই ওয়েবসাইটগুলোতে চটকদার মিথ্যে খবর প্রচার করে কিছু তরুণ প্রচুর অর্থ কামিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস কিংবা হিলারির ই-মেইল কেলেঙ্কারি তদন্তে নিয়োজিত এফবিআই এজেন্ট খুন হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ওবামা ও হিলারি ক্লিনটন হাজার হাজার অবৈধ অভিবাসীকে বৈধতা দিতে সম্মত হয়েছেন। উপরের এরকম আরো অনেক সংবাদের শিরোনাম দিয়ে তা দ্রুত ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফেসবুক ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এই খবরগুলো প্রকাশিত হওয়ার পর আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে। এই খবরের সবগুলো ছিল ভিত্তিহীন। পোপ ফ্রান্সিস কখনোই ট্রাম্পকে সমর্থন করেননি অথবা কোনো এফবিআই এজেন্ট খুন হননি বা আত্মহত্যা করেননি। ফেসবুকের মাধ্যমে অথবা মিথ্যা তথ্যসূত্র ব্যবহার করে খবরগুলো ছড়ানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পেছনে এসব মিথ্যা খবর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ডেনভার গার্ডিয়ান বা দি রাইটিস্ট এ রকম নাম ব্যবহার করে খবরগুলো ফেসবুকের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এ রকম মুখরোচক খবর ফেসবুকে পোস্ট হওয়ার পরই লাখ লাখ মানুষ তা ‘শেয়ার’ করে। এতে করে ভোটাররাও প্রভাবিত হন। যেহেতু খবরগুলো ট্রাম্পের পক্ষে, ফলে অনুমান করা হচ্ছে নির্বাচনের ফলাফল ট্রাম্পের অনুকূলে যাওয়ার সেটি একটি কারণ।
শুধু ফেসবুকেই নয়, বিশিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার নামে নকল টুইটার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেও মিথ্যা খবর রটানো হয়। যেমন মেইন অঙ্গরাজ্যের বেইটস কলেজের নাম ব্যবহার করে এক টুইটার বার্তায় জানানো হয়, ভোট দিতে হলে ছাত্রদের প্রত্যেকের গাড়ির নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এই বার্তার কারণে অনেক ছাত্রছাত্রী হয়ত ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকেন।
গোরান (ছদ্মনাম) ১৯ বছরের এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র। ম্যাসিডোনিয়ার এক সাইবার ক্যাফে থেকে তিনি তার ভুয়া খবরের সাইট চালান।
‘আমেরিকানরা আমাদের তৈরি ভুয়া নিউজগুলো খুব পছন্দ করেছে, আর আমরাও সেগুলো থেকে ভালো টাকাপয়সা আয় করেছি।’ কব্জিতে বাধা দামি ঘড়িটি নাড়াচাড়া করতে করতে বলছিলেন তিনি। ‘খবরটি সঠিক না মিথ্যে তা কে দেখতে যায়?’
গোরান জানান, ম্যাসিডোনিয়ার এক শহর ভেলেস-এ তার মতো শত শত তরুণ রয়েছে যারা ভুয়া নিউজ সাইট তৈরি করাকে অনেকটা কুটির শিল্প বানিয়ে ফেলেছে।
মার্কিন নির্বাচনে প্রচারাভিযান চলার সময় তারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে ভুয়া খবর তৈরি করে এই সাইটগুলো থেকে প্রচার করেছে।
যেভাবে তৈরি হয় ভুয়া খবর
গোরান এই কাজ শুরু করে গত গ্রীষ্ম মৌসুমে। মূলত ডানপন্থী আমেরিকান ওয়েবসাইটগুলো থেকে নানা ধরনের নিবন্ধ ‘কাট অ্যান্ড পেস্ট’ করে তিনি তার ‘নিউজ’ তৈরি করেন।
এরপর ফেসবুককে কিছু অর্থ দিয়ে সেই নিউজটি তিনি পোস্ট আকারে যুক্তরাষ্ট্রের ফেসবুক ইউজারদের লক্ষ্য করে প্রচার করেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের খবর জানার জন্য তার অনুসারীরা যখন সেই খবরের পোস্টে ক্লিক করেন বা লাইক করেন এবং সেটি শেয়ার করেন তখন সেই পোস্টে যে বিজ্ঞাপন থাকে তা থেকে গোরানের পকেটে অর্থ ঢোকে।
তিনি জানান, এভাবে তিনি এক মাসে ১৫০০ ডলার পরিমাণ অর্থ আয় করেছেন।
তার বন্ধুরা এর চেয়েও অনেক বেশি অর্থ কামিয়েছে। কেউ কেউ প্রতিদিন হাজার হাজার ডলারও আয় করেছে বলেও জানান গোরান।
কিন্তু এভাবে ভুয়া খবর প্রচার করে তারা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ওপর কোনো প্রভাব ফেলেছে কিনা, এই প্রশ্নে জবাবে গোরান বললেন, ‘আমেরিকানরা কীভাবে ভোট দেবে না দেবে তা নিয়ে ছেলেপেলেদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা শুধু দেখেছে তারা টাকা কামাতে পারছে কি না, আর সেই অর্থ দিয়ে দামি দামি পোশাক আর মদ কিনতে পারছে কি না।’
ম্যসিডোনিয়ার আইনে আমেরিকান ওয়েবসাইট নকল করে ভুয়া নিউজ তৈরি করা কিংবা তা প্রচার করা ঠিক বেআইনি নয়। কিন্তু পুরো ব্যাপারটার সঙ্গে নৈতিকতার একটা সম্পর্কে রয়েছে।
এই ভুয়া খবরের কারখানার ব্যাপারে যখন ভেলেস-এর মেয়র স্লাভকো চেডিয়েভকে জিজ্ঞেস করা হয় তাখন তিনি বলেন, তার শহরে কোনো কালো টাকা নেই।
তবে তিনি একই সাথেকে ভেলেস-এর তরুণদের সৃজনশীলতারও প্রশংসা করেন। সূত্র : বিসিসি।
মন্তব্য চালু নেই