ভালোবাসা দৃঢ় করতে বিশ্বজুড়ে যত রোমান্টিক স্থান ও বিচিত্র প্রথা
ভালোবাসার জন্য মানুষ কত কিছুই না করে। কত অদ্ভুত অদ্ভুত পাগলামী করে টিকিয়ে রাখতে চায় ভালোবাসার সম্পর্ক। ভালোবাসা টিকিয়ে রাখার জন্য নানান অদ্ভুত প্রথাও চালু আছে বিশ্বের অনেক দেশে। আর এই প্রথা গুলো দেখতে এবং সেই ট্রাডিশনে অংশ নিতে অনেকেই বিশ্বের নানা দেশ ঘুরে বেড়ান। ভালোবাসার সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য তেমনই ৪টি অদ্ভুত স্থান ও সেগুলোর সাথে জড়িত বিচিত্র প্রথার কথা জানবেন এই ফিচারে। ভালোবাসা দৃঢ় করতে বিশ্বজুড়ে যত রোমান্টিক স্থান ও বিচিত্র প্রথা
টানেল অফ লাভ, ইউক্রেন
ফিচারে যেই ছবিটি দেখছেন সেটা টানেল অফ লাভ এর। ইউক্রেনের ক্লেভান শহরের কাছে অবস্থিত টানেল অফ লাভ পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর স্থান গুলোর মধ্যে একটি। সবুজ গাছ-পাতায় ঘেরা একটি ট্রেন টানেলের মাঝে দিয়ে চলে গিয়েছে রেললাইন। এতি পৃথিবীর অন্যতম একটি রোমান্টিক স্থান হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে প্রেমিক প্রেমিকা যুগলদের কাছে এটি একটি প্রিয় স্থান। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রেমিক যুগলরা ও দম্পতিরা এই টানেলে বেড়াতে আসে। তাঁরা পরস্পরকে চুম্বন করে এবং নিজেদের সম্পর্কের সুখ ও দীর্ঘস্থায়ীতার জন্য প্রার্থনা করে। এই স্থান সম্পর্কে একটি কথা প্রচলিত আছে তার তা হলো কোন প্রেমিক-প্রেমিকা যুগল যদি এই পথটির উপর দিয়ে হাত ধরে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত হেঁটে যায় এবং তাঁরা যদি কোন ইচ্ছাপোষণ করে তাহলে তা বাস্তবে পরিণত হয় । তাহলে দেরি কেন? প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে আপনিও ঘুরে আসুন এই অপূর্ব স্থানটি থেকে।
লাভ লক, প্যারিস
ভালোবাসা অটুট রাখতে চান? তাহলে তালা মেরে চাবি ছুড়ে পানিতে ফেলে দিন! অবাক হলেন তাই না? ভালোবাসা অটুট রাখার জন্য এমনই এক অদ্ভুত প্রচলন আছে প্যারিসে। নটর ডেম গির্জায় যাওয়ার পথে শ্যেন নদীর উপর বানানো একটি হলো ‘পুঁন দে লা আর্শসিভিশে।’ এই ব্রিজের রেলিং এ ঝোলানো আছে হাজার হাজার তালা। বিশ্বের নানান স্থান থেকে পর্যটকরা এসে তালায় নিজের ও নিজের ভালোবাসার মানুষটির নাম লিখে সেটা ব্রিজের রেলিং এ ঝুলিয়ে চাবি দিয়ে লক করে দেন। আর সেই তালা যাতে কেউ কোনো দিন খুলতে না পারে সেজন্য চাবিটা ছুড়ে ফেলে দেন পানিতে। তাদের বিশ্বাস এই পদ্ধতিতে এই তালার মতই চিরকাল অটুট বন্ধনে বাঁধা থাকবে তাদের ভালোবাসার সম্পর্ক।
ট্রেভি ফাউন্টেইন, রোম
রোমে আছে ইচ্ছে পূরণের ঝরনা! ভাবছেন এটা আবার কি? প্রচলিত আছে যারা রোমে বেড়াতে আসেন তাঁরা এই ঝরনায় কয়েন অনেকেই। কয়েন ফেলার একটি বিশেষ নিয়ম আছে। ঝরনার উল্টো দিকে ফিরে ডান হাতে কয়েন রেখে সেটা বাম কাধের উপর দিয়ে ছুড়ে ঝরনার পানিতে ফেলতে হয়। একটি কয়েন ফেললে পূরণ হয় স্বপ্নের শহর রোমে আবারও বেড়াতে আসার ইচ্ছা। দুটি ফেললে রোমে আবার ফিরে আসবেন এবং প্রেমে পরবেন সেই শহরেই কারো সাথে। তিনটি কয়েন ফেললে রোমে ফিরে আসবেন, প্রেমে পরবেন এবং বিয়ের কাজটাও সেরে ফেলবেন রোমেই। এই প্রচলিত বিশ্বাসের কারণেই বহু পর্যটক মার্বেল পাথরের ভাষ্কর্যযুক্ত এই ঝরনায় কয়েন ফেলেন। বছরে প্রায় ৬ লক্ষ পাউন্ড মূল্যের কয়েন পাওয়া যায় এই ঝরণা থেকে। পুরো টাকাটাই দিয়ে দেয়া হয় চ্যারিটিকে।
জুলিয়েটস ওয়াল, ইতালি
উইলিয়াম শেক্সপিয়ার বিখ্যাত রোমান্টিক উপন্যাস রোমিও জুলিয়েট তো নিশ্চয়ই পড়েছেন তাই না? গল্পের সেই রোমিও জুলিয়েটের অস্তিত্ব সত্যিই ছিলো। আর তাই ইতালির ভেরেনায় রোমিও জুলিয়েটের নায়িকা জুলিয়েটের বাড়িটি হয়ে উঠেছে প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য একটি তীর্থ স্থানের মত। বিশ্বের নানান দেশ থেকে হাজারো প্রেমিক-প্রেমিকা যুগল, দম্পতিরা বেড়াতে আসেন ইতালির ভেরেনায় জুলিয়েটের বাড়িটিতে। জুলিয়েটের বাড়িটির মূল ফটকের দেয়ালে পর্যটকরা অসংখ্য চিঠি ও চিরকুট লাগিয়ে রেখে যান। কেউ কেউ আবার দেয়ালের গায়েই ভালোবাসার কথা লিখে রেখে যান ভালোবাসার স্মৃতি হিসেবে। এই প্রচলনটি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে ‘এ লেটার টু জুলিয়েট’ সিনেমাটি তৈরীর পর থেকে। প্রেমিক প্রেমিকাদের চিঠিতে দেয়াল ঢাকা পড়ে গিয়েছে প্রায়। প্রেমের নানান সমস্যা, প্রিয় মানুষটিকে না পাওয়ার বেদনার কথা কিংবা সম্পর্কের সুখ শান্তি কামনা করে প্রতিদিন অসংখ্য চিরকুট জমা হয় এই দেয়ালে। মানুষের বিশ্বাস এতে তাদের সমস্যার সমাধান হবে এবং প্রেম অটুট থাকবে।
মন্তব্য চালু নেই