ভারত-চীন হাত মেলালে সারা বিশ্ব স্যালুট করবে: নরেন্দ্র মোদি

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের তিন দিনের সফরে ভারতে এসেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বৈঠকের আগেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জিনপিংকে জানান, ভারত-চীন হাত মেলালে সারা বিশ্ব স্যালুট করবে। জিনপিংয়ের এই সফরে দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনাই প্রাধান্য পাবে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বুধবার আহমেদাবাদ পৌঁছান। কৌশলগত কূটনীতি যাই হোক, এজেন্ডার শীর্ষে থাকছে অর্থনীতি। পাশাপাশি বিবদমান সীমান্ত নিয়েও আলোচনা করবে এশিয়ার শক্তিশালী দুই দেশ। এশিয়ার এই দুটি শক্তিশালী দেশের শীর্ষ বৈঠক যাতে সফল হয়, তার জন্য উভয় দেশ সচেষ্ট। পাশাপাশি ভারতের পক্ষ থেকে এটাও স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে- অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি সীমান্ত সমস্যা, সীমান্তে চীনা অনুপ্রবেশের মতো কৌশলগত ইস্যুগুলোও বৈঠকে উঠবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ভারত যেমন ‘এক ও অখণ্ড’ চীন নীতিতে বিশ্বাসী, তেমনি চীনকেও মনে রাখতে হবে ভারতের অখণ্ডতা।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অরুনাচলপ্রদেশ এমন একটি অঙ্গরাজ্য যার চূড়ান্ত ভৌগোলিক সীমা চিহ্নিতকরণ আজও অমীংমাসিত। এটাই ভারত-চীনের সম্পর্ক উন্নয়নের বড় কাঁটা হয়ে আছে। এছাড়া অরুনাচল ও ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জন্য চীনের ‘স্টেপল’ ভিসা, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের অতি সক্রিয়তার প্রসঙ্গ আলোচনায় উঠতে পারে।

ভারত-চীনের সম্পর্ক (অতীত ও বর্তমান)
১৯১৪ সালে স্বাধীন তিব্বত ও ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘ম্যাক মোহন লাইন’ স্বীকার করে না চীন। মানতে চায় না তিব্বত এক সময়ে স্বাধীন দেশ ছিল। ১৯৫০’র দশকে মাও সেতুং চীন দখল করে। তিব্বতের সর্বময় ধর্মীয় গুরু দালাইলামা পালিয়ে আসেন ভারতে। গঠন করেন নির্বাসিত তিব্বতি সরকার, যার সদর দফতর হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায়। মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে নির্বাসিত তিব্বতি সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানোয় বেইজিং ক্ষুব্ধ হয়। সেই ক্ষোভ প্রশমিত করতে এবং সৌহার্দ্যরে বাতাবরণ বজায় রাখতে ওই সময়ে দালাইলামার ডাকা একটি ধর্মীয়সভা পিছিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেছে মোদি সরকার। নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, চীনের প্রেসিডেন্টের দিল্লিতে থাকাকালীন তিব্বতিদের প্রতিবাদ বিক্ষোভের ওপর। বছর তিনেক আগে দ্বিপাক্ষিক সীমান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে চীনের বিশেষ কূটনীতিক দাই বিনগুয়ো তার দিল্লি সফর বাতিল করেছিলেন ওই সময়ে দিল্লিতে বিশ্ব বৌদ্ধ শীর্ষ সম্মেলন বসার কারণে।

চুক্তিতে যা অগ্রাধিকার পাবে
সীমান্ত সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সম্পর্কের জটিলতায় আছে ভারত-চীন। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের তিন দিনের ভারত সফরে সীমান্ত সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে আবদ্ধ হবে এশিয়ার দুই পরাশক্তি। অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রধান ১০টি দিক এখানে তুলে ধরা হলো-

১. ভারতের ৫০টি শহরজুড়ে মেট্রোরেল যোগাযোগে বুলেট ট্রেন ও উচ্চগতিসম্পন্ন ট্রেনে চীনের বিনিয়োগ, ম্যাস র‌্যাপিড ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম (এমআরটিএস) পরিকল্পনার আলোকে এই বিনিয়োগ করবে চীন।
২. ভারতে, বিশেষত গুজরাটে চীনের ৪০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ।
৩. গত বছরে চীন-ভারতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ছিল ৬৬.৪ বিলিয়ন ডলার। এবার তা আরও বাড়ানোর চেষ্টা।
৪. ভারতে চীনের রেল যোগাযোগের প্রধান স্টেশনগুলোর উন্নয়ন।
৫. সাশ্রয়ী গৃহনির্মাণে চীনের বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ও সহায়তা।
৬. গুজরাটের কারজান ও সনান্দে চীনা ইলেকট্রনিক্স ও মোবাইল কোম্পানির বিনিয়োগ।
৭. ভারতে কয়েকটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণে চীনের সহায়তা।
৮. দুই দেশের সংস্কৃতি বিনিময়ে একটি সার্বজনীন প্লাটফর্ম গঠন।
৯. ভারতে চীনের কয়েকটি শিল্পপার্ক প্রতিষ্ঠা।
১০. শুধু বিনিয়োগ খাতে চীনের ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি গ্রহণ।

উল্লেখ্য, জিনপিংয়ের সফরে দুই দেশের ‘স্বার্থ ও সমস্যা’ নিয়ে আলোকপাত করা হবে বলে আশা করছে ভারত। একইসঙ্গে সীমান্তের মতো বিতর্কিত বিষয়ও আলোচনায় উঠে আসবে বলে আশা করছে দেশটি। অন্যদিকে, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নে ইচ্ছুক চীন এরই মধ্যে জিনপিংয়ের এই সফরে ভারতের রেলওয়ে, উৎপাদন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ইঙ্গিত দিয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই