ভারতের ৯ রাজ্যসহ বাংলাদেশের নদনদীতে পানি আরও হ্রাস পাবে

ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের ফলে বাংলাদেশের নদ-নদীর ওপর প্রভাব নিরূপণের লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করবে সরকার। ভারতের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের পদ্মা-যমুনার পানিপ্রবাহ আরও হ্রাস পাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের বিষয়ে দুই দেশের কূটনৈতিক আলোচনার লক্ষ্যে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রয়োজন বলে মনে করে নয়াদিল্লীর বাংলাদেশ হাইকমিশন। সে কারণে হাইকমিশন থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি একটি চিঠি দিয়ে উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠির প্রেক্ষিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে।

সূত্র জানায়, ভারত আগামী ৫০ বছরের ক্রমবর্ধমান পানি ও খাদ্যের চাহিদা মেটানের লক্ষ্যে দেশের ছোটবড় ৩৮ নদীকে ৩০ সংযোগকারী খালের মাধ্যমে জুড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ৩৮ নদীর মধ্যে ১৮ নদী হিমালয় অঞ্চলের এবং ২০ পেনিনসুলার। পরিকল্পনার মূল দিক হচ্ছে এক নদীর বেসিন থেকে পানি অন্য নদী বেসিনে স্থানান্তর করা। পরিকল্পনা অনুযায়ী বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি সঞ্চিত রাখার জন্য ৭৪ বিশাল-বিশাল জলাধার ও বেশকিছু বাঁধ তৈরি করা হবে। ফলে শুকনো মৌসুমে ওই সব জলাধারের পানি কৃষি ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে দেশের ৩৫ মিলিয়ন হেক্টর জমি সেচের আওতায় আসবে। ৩৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নতুন করে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা যাবে এবং অনেক প্রদেশে বন্যা নিয়ন্ত্রণও সহজ হবে।

১৯৮০ সালে ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় একটি জাতীয় পানি পরিকল্পনার কাজে হাত দেয়। সেই পরিকল্পনার আলোকে ২০০২ সালের ১৪ আগস্ট ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম সংযোগকারী খাল তৈরি আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের নদীগুলোকে জুড়ে দেয়ার ঘোষণা দেন। ভারত সরকার প্রকল্পের ব্যয় ধরে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি রুপী বা ১১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে ২০০৪ সালে দুই দেশের পরিবেশবাদীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন স্থগিত হয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে ২০১২ সালে ভারতের সুপ্রীমকোর্ট আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নে একটি নতুন নির্দেশনা জারি করে। সেই নির্দেশনায় এ প্রকল্প বাস্তবায়নে একটি সময় নির্দিষ্ট করার জন্য বলা হয়। তবে সুপ্রীমকোর্টের এই রায়ের পর ভারতের অনেক প্রখ্যাত ব্যক্তি নদী সংযোগ প্রকল্পের বিরুদ্ধে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কারণ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ ও ভারতের নয়টি রাজ্যে নদীর ব্যাপক পানি হ্রাস ও পরিবেশ দুর্যোগের সূত্রপাত করবে।

আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প নিয়ে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি খোদ ভারতেও এর বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ২০০৩ সালের ১ এপ্রিল ভারতে অনুষ্ঠিত জাতীয় পানি সম্মেলনে ভারতের সুশীল সমাজ এই প্রস্তাবকে অবাস্তব বলে প্রত্যাখ্যান করে। ওই বছরের ২৩ এপ্রিল ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে লিখিত এক আবেদনে ভারতের শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী ও আমলাদের একটি বড় অংশ জানায়, নদী সংযোগ প্রকল্প কেবল ভয়াবহ সামাজিক ও মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে না, পরিবেশ ও প্রতিবেশগতভাবেও মারাত্মক পরিণতি হবে।



মন্তব্য চালু নেই