ভারতের ১০টি ব্যতিক্রমী গ্রাম, যা আপনাকে বিষ্মিত করবে

সামগ্রিক অর্থে জীবনমানের প্রশ্নে খুব একটা ভালো নয় প্রতিবেশি ভারতের বাস্তবতা। দেশটিতে শিক্ষার হার বলার মতো কিছু না। স্যানিটেশন ব্যাবস্থা নিতান্তই অপ্রতুল। দেশটির ৬০ শতাংশ মানুষ এখনো স্যানিটেশন ব্যবহার করে না। তবে এই সামগ্রিক বাস্তবতার বিপরীতেই দাঁড়িয়ে আছে ভারতের ১০টি ব্যতিক্রমী গ্রাম সম্পর্কে বলা হচ্ছে, যেগুলো একেবারে অনন্য। এসব গ্রাম সম্পর্কে জানলে অবাকই হতে হয়।

home

১.মাওলিনং: এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম
মেঘালয়ার একটি ছোট্ট গ্রাম এই মাওলিনং। ২০১৩ সালে ‘ডিসকোভার ইন্ডিয়া ম্যাগাজিন’ এই গ্রামকে এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রামের মর্যাদা দিয়েছে। গ্রামটি শিলং থেতে ৯০ কিলোমিটার দূরে। পরিচ্ছন্ন প্রকৃতির সাথে খোলা আকাশ দেখার সাধ মেটাতে এই গ্রামে যেতে পারেন। গ্রামটিতে যারা ভ্রমণ করেছেন তারা বলেছেন, গ্রামের কোথাও একটি সিগারেটের ফিল্টার খুঁজে পাওয়া যাবে না।

in2

২. পুনসারি: ওয়াইফাই, সিসিটিভি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ক্লাসরুমসহ আরো অনেক সুবিধা
গুজরাটের এ গ্রামটির সুযোগ সুবিধা অনেক উন্নত শহরের চেয়েও বেশি। বলা হয় এ গ্রামের দিকে তাকালে অনেক উন্নত শহরও লজ্জায় চোখ নামিয়ে রাখবে। ভারতীয় সরকার এবং গ্রামের মানুষের নিজস্ব অর্থায়নে পুরো গ্রামে ফ্রি ওয়াইফাই, সিসিটিভি এবং এসি ক্লাসরুমের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। গ্রামটিতে ছোট ছোট কমিউটার বাস সার্ভিসও চালু আছে।

in3

৩. হাইওয়ার বাজার: ভারতের সবচেয়ে ধনী গ্রাম
মহারাষ্ট্রের আহমেদনগরে অবস্থিত এ গ্রমাটি ভারতের সবচেয়ে ধনীদের গ্রাম হিসেবে পরিচিত। তা হবেই বা না কেন? এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষের সম্পদের পরিমানই যে ৬০ মিলিয়নের উপরে। তাই এ গ্রামটিকে ‘সিক্সটি মিলিওয়ানিরজ ভিলেজ’ ওবলা হয়। গ্রামটিতে গরিব মানুষ খুঁজে পেতে আপনাকে বেগ পেতে হবে। এ গ্রামে অস্বাভাবিক এ উন্নতির অন্যতম কারিগর হচ্ছেন পপাত্র পাওয়ার নামে এক ব্যক্তি। বৃষ্টির পানির মাধ্যমে ফসল উৎপাদন, দুগ্ধবতী গাভী পালনের ধারণা তিনিই প্রথম গ্রামবাসীকে দিয়েছিলেন। গ্রামটিতে এখন তিনজন মাত্র গরিব আছে। কিন্তু গ্রামবাসীর স্বপ্ন এমন একদিন আসবে, যেদিন এখানে একজনও গরিব থাকবে না।

in4

৪. ধর্নাই: ভারতের প্রথম সম্পূর্ণ সোলার পাওয়ার গ্রাম
সোলার পাওয়ারের মাধ্যেমেই বিহারের এ গ্রামটি প্রায় ৩০ বছরের অন্ধকার থেকে আলোর মুখ দেখতে সক্ষম হয়েছে। গ্রিনপিসের সহায়তায় গত জুলাইতে গ্রামটি নিজেদেরকে শক্তি উৎপাদনে পুরোপুরি সক্ষম বলে ঘোষণা দিয়েংছে। শিক্ষার্থীদেরকে এখন দিনের বেলাতেই তাদের সব পড়া শেষ করতে হয় না। সন্ধ্যার পর নারীরা জরুরী কাজে বাইরে বের হতে পারন।

in5

৫.চাপ্পার: কন্যা শিশুর জন্মে মিষ্টি বিতরণ করা হয় যে গ্রামে
ভারতে যেখানে কন্যাশিশু হত্যা ও এর ফলে পারিবারিক বিবাদের অহরহ খবর পাওয়া যায়, সেখানে এ গ্রামটি সম্পূর্ণ উল্টো। এখানে কণ্যাশিশুর জন্মকে আশির্বাদ হিসেবে দেখা হয়। এমনকি কন্যাশিশুর জন্ম হলে গ্রামে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। গ্রামটি ভারতের হরিয়ানায় অবস্থিত।

in6

৬.কোকরেবুলার: পাখিপ্রেমী গ্রামবাসী
ভারতের অন্যান্য জায়গায় পাখিদের ফসলের জন্য ক্ষতিকর মনে করা হয়। কিন্তু কনার্টকের এ গ্রামসটির মানুষ পাখিকে প্রকৃতির অন্যতম বড় হাতিয়ার জ্ঞান করে দীর্ঘদিন ধরে পাখিদের সাথে সখ্য বজায় রেখে চলছে। এ গ্রামের মানুষদের পাখিরা এতই বন্ধুভাবাপন্ন মনে করে যে, মানুষজনের উপস্থিতি তারা খুব একটা আমলে নেয় না। গ্রামবাসীও পাখিদেরকে তাদের পরিবারের সদস্যই মনে করে।

in7

৭. বালিয়া: ভিন্ন উপায়ে আর্সেনিক প্রতিরোধ করে সফল যারা
সরকার যখন কম মূল্যে কিছু হস্তচালিত পাম্প দিলো, তারপরই ঘটনার সূত্রপাত। গ্রামবাসী দেখলো তাদের ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এসব পাম্প মাটির যে স্তর থেকে পানি তুলতে সক্ষম সেখানে আর্সেনিক তাকে। আর্সেনিকের ফলেই তাদের এসব সমস্যা হচ্ছে। সমস্যা বুঝতে পেরে সরকারের জন্য বসে না থেকে নিজেরাই কূপ থেকে পানি তোলা পুরোনো পদ্ধতিতে ফিরে যায়। এমনকি ৯৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ ধানিক্রম ভার্মাও এ কাজে যোগ দিয়েছেন।

in8

৮. পতানিক্কড়: এ গ্রামের একশ’ শতাংশ মানুষই শিক্ষিত
কেরালার এ গ্রামটির শতকরা একশ ভাগই শিক্ষিত। ভারতের এটিই একমাত্র গ্রাম যেখানে শিক্ষার হার শতভাগ। গ্রামটিতে শহুরে মানের কোনর বিদ্যালয় নেই বটে, কিন্তু বেশ কিছু সংখ্যক সরকারী বেসরকারী স্কুল আছে। ভাবছেন, গ্রামের মানুষ সংখ্যা নিশ্চয়ই কম। আপনার জন্য জানাচ্ছি, গ্রামের লোকসংখ্যা ১৭ হাজার ৫’শ ৬৩ জন।

in9

৯. বেক্কিনাকেরি: খোলা জায়গায় মলত্যাগ ঠেকাতে ‘গুড মর্নিং’ থেরাপি!
ভারতে এখনো ৬০ শতাংশ মানুষ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে। বেক্কিনাকেরি গ্রামের মুরুব্বিরা প্রথমে গ্রামবাসীকে সচেতন করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু তাতে যখন কাজ হচ্ছিলো না তখন ভিন্ন পন্থা নিলেন। মানুষতো সকাল বেলায় একজন আরেকজনকে গুড মর্নিং বলেই। এ গুড মনিং কথাটারই ভিন্ন ব্যাবহার শুরু করলেন তারা। গ্রামের যেসব জায়গায় মানুষ মলত্যাগ করতে যায়, সেখানে আগে থেকেই কেউ না কেউ গিয়ে দাঁড়িয়ে তাকে। কেই আসলে তাকে গুড মর্নিং বলে। ব্যা, ফলাফলতো হাতে হাতেই। গ্রামের কেউই এখন খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে না।

in10

১০. শানি শিংনাপুরে: যেখানে বাসায় কোন দরজা নেই
মহারাষ্ট্রের শানি শিংনাপুর ভারতের সবচেয়ে নিরাপদ গ্রাম। এতই নিরাপদ যে, এ গ্রামের অধিকাংশ বাসাবাড়িতেই কোন দরজা নেই। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়ও গ্রামটিকে নিয়ে বিভিন্ন মজাদার গল্প ছাপা হয়েছে। অন্য এক দিক দিয়েও এ গ্রামটি রেকর্ড করেছে। ভারতের (মনে হয় বিশ্বেরও) একমাত্র দরজাহীন ব্যাংকের শাখা (উইসিও) এই গ্রামেই।



মন্তব্য চালু নেই