বড় বিনিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশে আসছে সৌদি আরব

সৌদি আরবের বড় কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। এ জন্য দেশটির আল-রাজি ও আল-জামিল গ্রুপসহ কয়েকটি ব্যবসায়িকপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা নিয়মিত ঢাকা সফর করছেন। সৌদি বিনিয়োগকারীদের জন্য আলাদাভাবে দুটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা এগিয়ে নিতে ঢাকায় আসছেন দেশটির তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন ইব্রাহিম আল সুয়াইল।

জানা গেছে, সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ করবে আল-রাজি গ্রুপ। কালিয়াকৈর বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে তারা জায়গা চেয়েছে। এ ছাড়া ঢাকায় সৌদি-জিসিসি আইটি ব্লক নির্মাণের জন্য ১০ একর জমি চেয়েছে। বাংলাদেশ বিমানের সঙ্গে তাদের এয়ারফ্রেইট সার্ভিস পরিচালনার বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সৌদি আরবের এ গ্রুপ বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) অধীনে কর্ণফুলী পেপার মিলসের যৌথ উদ্যোগে একটি কারখানা এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে চায়। ছাতক সিমেন্ট কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে একটি সিমেন্ট কারখানা ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে অনেকদূর অগ্রগতি হয়েছে। এরই মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকও সই হয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মধ্যপ্রাচ্য উইংয়ের হিসাবে সৌদি আরবের অর্থায়নে তারা চলমান পাঁচটি প্রকল্পে ২৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার বা এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। নির্মাণাধীন মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার এবং শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, শীতলক্ষ্যা সেতু, তিস্তা সেতু এবং চক্ষু হাসপাতাল নির্মাণে সৌদির অর্থায়ন রয়েছে।

গত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সৌদি বিনিয়োগ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে গত জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি সফর নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সফরে সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের জন্য চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মূল্য সমন্বয়ক এবং সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত জুনে প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফরে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপকভিত্তিক বিনিয়োগের আগ্রহ দেখায়। এর আগে দেশটির বেসরকারি খাত থেকে এত বড় বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। এসব প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় নির্ধারণে বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। দেশটি এবার বেসরকারি খাতে বেশি বিনিয়োগ করবে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষসহ সবাইকে বিনিয়োগ প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, অর্থনৈতিক অঞ্চলে সৌদি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ আহ্বান করা হয়েছে। স্থান নির্ধারিত না হলেও রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে দেশটিকে আলাদা অর্থনৈতিক অঞ্চলের এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আল-জামিলসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে।

জানতে চাইলে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, সৌদি আরবকে দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল দিতে সরকার প্রস্তুত। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সৌদি সফরে আলোচনা হয়েছে। দেশটির ব্যবসায়ীদের চূড়ান্ত প্রস্তাব পেলে ব্যবস্থা নেবে সরকার।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি আবদুল মাতলুব বলেন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের জন্য আগামী ফেব্রুয়ারি ও মার্চে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা আসার জন্য যোগাযোগ করেছেন। এবার সৌদি আরব বিনিয়োগের বিষয়ে খুব আগ্রহী। দেশটি এত দিন পেট্রোলিয়াম জাতীয় পণ্য উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ করেছে। এখন তারা অবকাঠামো ও বিদ্যুতে বিনিয়োগ করবে। এ জন্য প্রাথমিক কার্যক্রম শেষ হয়েছে।

তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য গত কয়েক বছর কম থাকায় বিনিয়োগে ভিন্নতা আনছে। তাদের বিনিয়োগকারীরা বড় স্যাটেলাইট শহর নির্মাণও করতে চায়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জনশক্তি আমদানির খালেদ মাশুর আল-গারনি রিক্রুটমেন্টের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে গেছে। এর বাইরে দেশটির শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংগঠন জেদ্দা চেম্বার ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ঢাকায় পাঠাচ্ছে। বিনিয়োগের জন্য তারা শিল্প মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিডার সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। সূত্র: অনলাইন



মন্তব্য চালু নেই