ব্রিটিশরাই বেশি বেকায়দায়

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বিদায় নিয়ে ব্রেক্সিটপন্থীদের বিজয় উৎসব ঠিক জমতে পারল না। ব্রেক্সিট নিয়ে ফের গণভোটের দাবিতে যে সই সংগ্রহ শুরু হয়েছিল, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাতে ১০ লক্ষেরও বেশি সই পড়েছে। সঠিক হিসেব, শনিবার দুপুর পর্যন্ত ১২ লক্ষ ৭৪ হাজার ৩২১টি সই। সংখ্যাটা ক্রমশ বাড়ছে। এমনই প্রবল জনমত যে ব্রিটিশ সংসদে বিষয়টি নিয়ে আলাদা আলোচনা না করে কোনও উপায় নেই। ওদিকে স্কটল্যান্ড যেহেতু ই ইউ–তে থেকে যাওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছিল, ব্রিটেন থেকে আলাদা হয়ে ইউরোপীয় জোটে সংযুক্ত থাকার সম্ভাবনা নিয়ে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করতে যাচ্ছেন স্কটিশ প্রধানমন্ত্রী নিকোলা স্টার্জন। উত্তর আয়ারল্যান্ডও ই ইউ–তে থাকতে চেয়ে ভোট দিয়েছিল। সেখানেও সিন ফেন এদিন বলেছে, গণভোটের এই ফলের পর উত্তর আয়ারল্যান্ডের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষার অধিকার খুইয়েছে ব্রিটেন। ডেভিড ক্যামেরন অক্টোবরে যদি প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দেন, তাহলে ব্রেক্সিট নেতা, লন্ডনের প্রাক্তন মেয়র বরিস জনসন নতুন প্রধানমন্ত্রী হবেন বলে যে উল্লাস, তাও শনিবার অনেক স্তিমিত। কারণ রক্ষণশীল টোরি দলের প্রথম সারির নেতারা জনসনের এই হঠাৎ উত্তরণে ক্ষুব্ধ, বিরক্ত। দলে তাঁরা সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন, বরিস জনসন ঠিক কী কারণে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হয়ে গেলেন!‌ বেকায়দায় পড়েছেন লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনও। দলেরই দুই সাংসদ তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনে বলেছেন, ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে প্রচারে করবিন যথেষ্ট উদ্যোগী হননি। তবে সবথেকে অপ্রস্তুত হতে হয়েছে ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজ–কে। ব্রেক্সিটের পক্ষে এত প্রচার করার পরেও ব্রিটেনের ই ইউ থেকে বিযুক্ত হওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করতে যে সর্বদলীয় কমিটি, তাতে ফারাজকে রাখা হয়নি। ক্ষিপ্ত ফারাজ এখন যে করে হোক এই প্রক্রিয়ায় সামিল থাকতে মরিয়া। এদিন ব্রিটেনের ইউরোপীয় কমিশনারের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন লর্ড জোনাথন হিল। তিনিই ছিলেন ব্রাসেলসে ব্রিটিশ সরকারের সবথেকে পদস্থ প্রতিনিধি। ক্যামেরন–অনুগত লর্ড হিল বলেছেন, গণভোটের এই দুর্ভাগ্যজনক রায়ের পর তাঁর ব্রাসেলসে করার মতো কোনও কাজ নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়নে মূলত ব্রিটেনের অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষার কাজ করতেন তিনি।

শুক্রবার ব্রেক্সিট নিয়ে গণভোটের ফল ঘোষণার খবরের সঙ্গে আরও একটা খবর ছড়িয়ে পড়েছিল সংবাদমাধ্যমে। ব্রিটেনের ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী ভোটার যাঁরা, তাঁদের ৭৫ শতাংশই রায় দিয়েছিলেন ইউরোপীয় জোটে থেকে যাওয়ার পক্ষে। ইন্টারনেট সার্চ এঞ্জিন গুগল এদিন জানিয়েছে, শুক্রবার মাঝরাত থেকে ভোররাত পর্যন্ত ব্রিটেনে সবথেকে বেশি যে প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে, তা হল— ই ইউ ছেড়ে বেরিয়ে গেলে কী হতে পারে?‌ আর শনিবার সকাল থেকে উত্তর আয়ারল্যান্ডে বেড়ে গেছে আয়ারল্যান্ডের পাসপোর্টের আবেদনপত্রের চাহিদা। এতটাই, যে বেলফাস্টের সদর ডাকঘরে দুপুরেই নোটিস পড়ে যায়, ‘‌হঠাৎ বেড়ে যাওয়া চাহিদা সামাল দিতে গিয়ে আবেদনপত্র নিঃশেষিত!‌’‌‌-আজকাল



মন্তব্য চালু নেই