বেলআউট গণভোটে দ্বিধাবিভক্ত গ্রিস
আর্থিক পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক ঋণ চুক্তি নবায়ন (বেলআউট) সংক্রান্ত গণভোটের পক্ষে-বিপক্ষে দ্বিধাবিভক্ত গ্রিসবাসী।
রোবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে ভোট দিতে কেন্দ্রে হাজির হন লাখো মানুষ। সন্ধ্যা ৭টায় শেষ হবে ভোটগ্রহণ। এর কিছুক্ষণের মধ্যে প্রথমপর্বের ফল ঘোষণা করা হবে। চূড়ান্ত ফল রোববার রাত ৯টার মধ্যে প্রকাশ করা হবে যাতে, গ্রিস আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের শর্ত মেনে ইউরোজোনে থাকবে, না এর থেকে বেরিয়ে আসবে।
গ্রিসের বামপন্থি সরকার ইউরোজন থেকে বেরিয়ে এসে আলাদা আর্থিক নীতি গঠনের ওপর জোর দিচ্ছে। ফলে তারা বেলআউট গণভোটে ‘না’ পক্ষে প্রচরণা চালাচ্ছে। আর ইউরোজোনের সঙ্গে থাকার পক্ষের সিদ্ধান্ত ‘হ্যাঁ’ ভোট।
বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্যাংক ও অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলার হুমকির মুখে এ গণভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ঋণদাতাদের প্রস্তাব গ্রহণ করবেন না প্রত্যাখ্যান করবেন তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত পুরো গ্রিসবাসী।
জনমত জরিপে দেখা গেছে, বিষয়টিতে দ্বিধাবিভক্ত গ্রিসবাসী। শুক্রবার প্রকাশিত গণভোটপূর্ব চারটি জরিপে ‘হ্যাঁ’ ভোটের পক্ষে জনমত কিছুটা এগিয়ে আছে বলে দেখা গেছে। অন্য একটি জরিপের ফলে ‘না’ পক্ষ দশমিক পাঁচ পয়েন্টে এগিয়ে ছিল।
এক সপ্তাহ ধরে দুপক্ষের তুমুল প্রচারণার কারণে ভোটারদের উপস্থিতির হার ব্যাপক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সকালে ভোটারদের বড় লাইন সেটাই প্রমাণ করেছে।
ক্ষমতাসীন কট্টর বামপন্থি সিরিজা পার্টির নেতারা এ গণভোটকে জাতির জন্য ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সি সিপ্রাস ঋণদাতাদের দেওয়া প্রস্তাবকে ‘অপমানজনক’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
গণভোটের শেষ প্রচারণা সমাবেশে হাজার হাজার গ্রিসবাসীর উপস্থিতিতে ‘না’ ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সিপ্রাস বলেছেন, ‘আমাদের উচিত রোববার বিশ্বের কাছে গণতন্ত্রের ও আত্মসম্মানের বার্তা পাঠানো। কেউ জনগণের নিজের হাতে গড়া ভাগ্য উপেক্ষা করতে পারে না।’
অপরদিকে ইউরোপীয় বিনিয়োগকারী ও নীতি নির্ধারকরা বলছেন, ‘না’ ভোটের পক্ষে মত দিলে গ্রিসের ব্যাংকগুলোর অর্থায়ন একবারে বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং এটা গ্রিসকে একক মুদ্রা ইউরো থেকে বের হয়ে যাওয়ার পথে নিয়ে যেতে পারে, ফলে বিশ্ব অর্থনীতি ও পুঁজি বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে।
এমনকি সেরা সময়েও যে কোনো দেশের মানুষই কর বাড়ানো ও পেনশনে কাটছাঁটের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। তারমধ্যে গ্রিসের মানুষ গত পাঁচবছর ধরে কঠোর ব্যয় সংকোচনের মধ্যে থেকে ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে দেশের আর্থিক খাতকে বাঁচাতে সপ্তাহজুড়ে পুঁজি নিয়ন্ত্রণের বিধান চালু করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতেই তারা দাতাদের শর্ত অনুযায়ী আরো ব্যায় সংকোচন প্রস্তাবের পক্ষে, না বিপক্ষে ভোট দেবে- সে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে। এ প্রশ্নে গ্রিসের নাগরিকরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন, তারা ভীত- আগে এমনটি কখনোই দেখা যায়নি।
বেলআউটের সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ার পর ব্যাংকগুলো বন্ধ থাকা অবস্থায় শুক্রবার রাজধানী অ্যাথেন্সে দুপক্ষই সমাবেশ-র্যা লি করে।
‘হ্যাঁ’ পক্ষের সমর্থকদের ধারণা, দাতাদের প্রস্তাব মেনে না নিয়ে ব্যাংক ব্যবস্থার পতনের মধ্যদিয়ে পুরনো ড্রাকমা মুদ্রায় ফিরে যাওয়া তাদের আরো বেশি বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেবে।
এখন দেখার বিষয় গণভোটে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ কোনটি জয়যুক্ত হয়।
তথ্যসূত্র : বিবিসি।
মন্তব্য চালু নেই