বাবার জন্য গরু সেজে ভিক্ষা!
মা-বাবার বিপদের সময় সন্তান পাশে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। বাবার চিকিৎসার জন্য অর্থ জোগাড় করতে গিয়ে চীনের এক কিশোরীর চেষ্টার গল্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে। মাত্র ৫ ইউয়ানের বিনিময়ে রাস্তায় গরু সেজে লোকজনকে তার পিঠে চড়ে বসার সুযোগ দিচ্ছে ওই কিশোরী।
১৫ বছরের হাও ডংডংয়ের বাবা হাও সিনলাই কৃষি কাজ করতেন। তবে পিঠে ব্যথার কারণে ২০০০ সালে তিনি ওই কাজ ছেড়ে দিয়ে ছোট্ট একটি মুদির দোকান দিয়ে বসেন। গত বছর সিনলাই ও তার স্ত্রী হিফেই শহরে গিয়েছিলেন কেনাকাটা করতে। এসময় তার রাস্তার অপর পাশে একটি ভ্রাম্যমাণ দোকানে প্রোমোশনাল অফার হিসেবে স্বস্তায় কিছু জিনিস বিক্রি করতে দেখে ছুটে যান। সিনলাই ও তার স্ত্রী যতটুকু পারছিলেন দোকান থেকে জিনিসপত্র সংগ্রহ করছিলেন। কিন্তু এক পর্যায়ে দোকানের বিক্রিয় কর্মীর সঙ্গে সিনলাইয়ের তর্ক বেধে যায়। দোকান কর্মচারীরা সিনলাইকে মারধর শুরু করলে গুরুতর আহত হন তিনি। মেরুদণ্ডের হাড়ে ভাঙ্গন ও ঘাড়ে আঘাতের কারণে তার দেহের উপরের অংশ অচল হয়ে যায়। তবে এ ঘটনায় ওই দোকানের পক্ষ থেকে কোনো ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়নি। সংসারের চাপ নিতে অনিচ্ছুক সিনলাইয়ের স্ত্রী তিন মাস আগে তিন সন্তানকে ফেলে চলে যায়। টাকার অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় তিনজনেরই। সেই থেকে সংসারের খরচ ও বাবার চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে ভিক্ষা শুরু করেন হাও ডংডং।
প্রথমদিকে হাও রাস্তার পাশে হাটু মুড়ে বসে ভিক্ষা করতেন। একদিন এক অপরিচিত পথচারী তাকে লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য ভিক্ষার সময় মুখোশ পরার পরামর্শ দেয়। তখন থেকেই প্রতিদিন গরুর মুখোশ পরে ভিক্ষা করেন হাও। রাস্তার পাশে যেখানে হাও ভিক্ষা করেন, সেখানে একটি সাইনবোর্ডও ঝুলিয়েছেন হাও। এতে লেখা রয়েছে, ‘ কেউ চাইলে আমার পিঠে চড়তে পারেন। প্রতিবার চড়ার জন্য ৫ ইউয়ান।’
অনেকেই সন্দেহ করেন, এটা হয়তো প্রতারণার কোনো কৌশল হবে। সেই সন্দেহ দূর করতে হাও মাঝে মাঝে ভিক্ষার সময় তার বাবাকে হুইল চেয়ারে পাশে বসিয়ে রাখে।
হাও বলেন, প্রতিদিন ভিক্ষা করলে এখন দুই থেকে তিনশ ইয়ান আসে। তবে বৃষ্টির দিনে তাকে বাসায় বসে থাকতে হয়। সেদিন কোনো আয় হয় না। অথচ তার বাবার জন্য মাসে ৫ হাজার ইউয়ান প্রয়োজন।
এভাবে ভিক্ষা করতে গিয়ে অনেক দুর্বব্যবহারও সইতে হয় হাওকে। তিনি জানান, প্রায়ই লোকজন তার সঙ্গে দুর্বব্যবহার করে। দোকানদাররা তাকে ব্যবসার জন্য অপয়া হিসেবে দেখে। একদিন এক মাতালতো তাকে চড়ই মেরে বসেছিল। পরে এক সহৃদয় নারী তাকে উদ্ধার করে।
এতো অবহেলা আর কষ্টেও কিন্তু দমে যাননি হাও। তিনি বলেন, ‘ আমার বাবা যদি সুস্থ্য হয়ে ওঠে তাহলে কে কী বললো তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি আশা করি সহৃদয়বান ব্যক্তিরা আমার পরিবারকে সহযোগিতা করবে। আমি আমার ভাই-বোনদের ফের স্কুলে পাঠাতে চাই।’
মন্তব্য চালু নেই