বাবাকে পুলিশ মারলে ছেলেরা জঙ্গিই হবে, জঙ্গিবাদ একটি প্রতিবাদ

জঙ্গিবাদকে ‘এক ধরনের প্রতিবাদ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। পুলিশের অত্যাচারের কারণেই জঙ্গিবাদের মাধ্যমে এ প্রতিবাদের সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছেন তিনি।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘তবে এই প্রতিবাদের ধারাটি গ্রহণযোগ্য নয়, অবিবেচনা প্রসূত। এটি ভুল পদ্ধতি। এটাকে আমরা মেনে নিতে পারি না।’

শনিবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) গোলটেবিল মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন ডা. জাফরুল্লাহ। ‘সন্ত্রাস প্রতিরোধে জাতীয় ঐক্য, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘জঙ্গিবাদও একটি প্রতিবাদ। তবে এই প্রতিবাদের ধারাটি গ্রহণযোগ্য নয়, অবিবেচনা প্রসূত। এটাকে আমরা মেনে নিতে পারি না। এটি ভুল পদ্ধতি, পদ্ধতিগত ভুল। কিন্তু এটাও একটি প্রতিবাদ। আর এই প্রতিবাদের জন্ম হয়েছে পুলিশের অত্যাচার থেকে।’

তিনি দাবি করে বলেন, ‘আমাদের পুলিশ তো এই ধরনের ছিল না। আমাদের দেশে দারোগা-পুলিশ আছে বহু বছর ধরে। তারা এটা-সেটাতে দু-চারটি টাকা ঘুষ-ঠুষ যে খেতো না, তা নয়। কিন্তু এ দেশে পুলিশের বিরুদ্ধে কখনো অভিযোগ ছিল না যে, নিরপরাধ-নিরীহ লোককে ঠেকিয়ে (ধরে নিয়ে) পয়সা খেয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘এখন কী হচ্ছে, কোনো মামলায় তারা (পুলিশ) অজ্ঞাত পাঁচশজনের নাম দিয়ে দেয়। তারপর সুবিধামতো ডেকে এনে ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ করে টাকা নেয়। ডেকে আনার কারণ জানতে চাইলে বলেন, উপরের নির্দেশ আছে। তবে সত্যিই উপরের নির্দেশ আছে কি না, সেটা আমরা জানি না। পুলিশের বড় কর্মকর্তারাই তা বলতে পারবেন।’

‘টাকা না দিলে পুলিশ এখন মামলার ভয় দেখায়। ধরে এনে বলেন, কোন মামলা দেব? অস্ত্র মামলা দেব, না বোমা ফেলার মামলা দেব? এভাবে তারা ধরে এনে মামলার ভয় দেখায়।’ বললেন জাফরুল্লাহ।

এ প্রসঙ্গে পুলিশি অত্যাচারের শিকার নয়ন হাজরার উদাহরণ টেনে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘২২ বছরের ছেলে নয়ন হাজরা। সে সম্ভবত এখনো ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ তাকে ধরে বলছে- “তুই শিবির?” তখন সে বলছে- “আমি কেন শিবির হবো? আমি তো নয়ন হাজরা।” কিন্তু তখনো পুলিশ বলছে- “না, তুই শিবির।” প্রত্যুত্তরে নয়ন হাজরা বলছে- “স্যার, বিশ্বাস না হলে কাপড় খুলে দেখেন।” কখন একটা মানুষ কাপড় খুলে দেখাতে চায়। একাত্তর সালে আমাদের দেশে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।’

তিনি দাবি করে বলেন, ‘কিন্তু তাতেও (কাপড় খুলে দেখানো) মাফ পায়নি নয়ন হাজরা। তার হাঁটুতে গুলি করে দিয়েছে। আমাদের দেশে এটিই একমাত্র ঘটনা নয়। প্রতিনিয়ত এ রকম শত শত, হাজার হাজার ঘটনা ঘটছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, পুলিশের এই অত্যাচার কোথা থেকে এসেছে? এটা ভারত থেকে আমদানি হয়েছে।’

ক্ষোভ থেকে উগ্রবাদের সৃষ্টি হচ্ছে উল্লেখ করে এ বুদ্ধিজীবী বলেন, ‘যখন ছেলে দেখে, আমার বাবাকে ধরে নিয়ে গেছে। যিনি নিরীহ মানুষ ছিলেন, নিয়মিত নামাজ পড়তেন, রোজা রাখতেন। ছোট একটা দোকানদারি করতেন। তাকে জঙ্গি বলে আখ্যায়িত করা হলো। বলা হয়, উপরের হুকুম আছে।’

ডিএমপি কমিশনারের সমালোচনা করে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আছাদুজ্জামান মিয়াদের মতো লোকেরা হুকুম দিয়ে বলেন- ১০ জন করে ধরো। ১০ জন করে ধরতে হলে ওসি সাহেব কোথা থেকে তাদের আবিষ্কার করবেন?’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এ প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি বলেন, ‘আজকে ইউনিয়ন পর্যায়ে পুলিশের উপস্থিতিতে (ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন) ১৫০ জন লোককে মেরেছে। এতবড় ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আমরা কোনো আলাপ-আলোচনা করতে রাজি নই। ইউনিয়ন পর্যায়ে যার বাবাটা মারা গেছে, তার ছেলেটা জঙ্গিই হবে। তার কোনো প্রতিকারের পথ নেই। সে প্রতিকার খুঁজে বেড়ায় ক্ষোভের মাধ্যমে।’

ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক ডা. একেএম আজিজুল হকের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ। এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন- ঢাবির সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, ড্যাব সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু প্রমুখ।বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই