বাড্ডায় পুড়ে যাওয়া মেসবাড়িটি আ’লীগ নেতার

রাজধানীর মধ্যবাড্ডায় একটি ফুচকার দোকান থেকে লাগা আগুনে ‘ভাই ভাই বোর্ডিং’য়ের অন্তত আড়াইশ ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

সোমবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানিয়েছে দমকল বাহিনী। এরপর দমকল বাহিনীর ১৪টি ইউনিট দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে দুপুর ২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততোক্ষণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওসমান গণি ও তার ভাইদের মালিকানাধীন বোর্ডিংটি পুরোপুরি পুড়ে যায়। আগুনে ওই বোর্ডিংয়ের পাশে তিনটি বিল্ডিংয়ের জানালার কাচ এবং কাঠের দরজা আগুনের তাপে ফেটে যায়।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, এই বোর্ডিংটি ওসমান গণির পৈত্রিক সম্পত্তি। বোর্ডিংটির নিচে রয়েছে জলাশয়। এই জলাশয়ের উপরই বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে দোতলা বোর্ডিং। এই বোর্ডিংয়ের নিচেই ছিল কয়েকটি মুদি দোকান, ফুচকার দোকান, সেলুন এবং খাবার হোটেল। সবই পুড়ে গেছে।

ওই বোর্ডিংটিতে স্থায়ী এবং অস্থায়ীভাবে লোকজন থাকতো। তবে ঈদের সময় হওয়ায় বোর্ডিংয়ের অধিকাংশ ঘর ছিল খালি। এখানে যারা স্থায়ীভাবে বসবাস করে তারা অধিকাংশই নিম্নবিত্ত পরিবার।

এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত কোনো হতাহতের সংবাদ পাওয়া যায়নি। তবে অনেকেই জানিয়েছে, বেশ কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছে। অবশ্য নিশ্চিত করেও তারা কিছু বলতে পারছেন না।

এদিকে আগুনের সূত্রপাত নিয়ে ভিন্ন মত থাকলেও স্থানীয়রা নিশ্চিত করেই জানিয়েছে, আগুনের সূত্রপাত হয় বোর্ডিংয়ের নিচের একটি ফুচকার দোকান থেকে। ওই দোকানের কেরসিনের পাম্পের চুলায় বিস্ফোরণ ঘটলে প্রথমে দোকানটিতে আগুন লাগে। এরপরই সেই আগুন দ্রুত বোর্ডিংটিতে ছড়িয়ে পড়ে। তবে দমকল বাহিনী এই আগুনের কারণ সম্পর্কে এখনো কিছুই জানায়নি।

বোর্ডিংটিতে ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন শরীয়তপুরের জুলহাস মোল্লা। তিনি জানান, ফুচকার দোকানের চুলার বিস্ফোরণ হলে বিকট শব্দ হয়। এরপর ঘর থেকে বের হয়ে দেখেন ওই দোকানে আগুন লেগে গেছে। পরে তা পুরো বোর্ডিংয়ে ছড়িয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, ‘এতো দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল যে, ঘর থেকে কোনো মালামাল বের করা সম্ভব হয়নি। আমার অন্তত পাঁচ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে।’

ওই বোর্ডিংয়েই থাকতেন হোটেল বয় সজীব। তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে ঘরের কিছু আসবাবপত্র কিনেছিলাম। সবই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’

বোর্ডিংয়ের পাশের একটি বিল্ডিংয়ের মালিক মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমি তখন বারান্দায় ছিলাম। ফুচকার দোকানে চুলার বিস্ফোরণের পরপরই আগুন লেগে যায়।’

এদিকে দমকল বাহিনী জানিয়েছে, আশেপাশে পানির উৎস না থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দেরী হয়েছে। তাছাড়া ওই বোর্ডিংয়ের রাস্তা ছোট হওয়াতেও দমকল বাহিনীর ঢুকতে দেরী হয়েছে। তবে তারা ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখনো কিছু জানায়নি।

দমকল বাহিনীর পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ বলেন, ‘এলাকায় পানির সমস্যা আছে। দমকল বাহিনী কাজ করার সময় পানি পেতে সমস্যা হয়েছে। এই কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লেগেছে।’

হতাহতের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো কোনো হতাহতের বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি নিশ্চিত করে বলতে একটু সময় লাগবে।’

দমকল বাহিনীর মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘এখনো ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি জানা সম্ভব হয়নি।’ ওই বোর্ডিংয়ে ঢুকার রাস্তা সরু হওয়ায় ঘটনাস্থলে যেতে দেরী হয়েছে বলেও তিনি জানান।

স্থানীয় সংসদ সদস্য রহমত আলী ঘটনাস্থল ঘুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি একটি দুর্ঘটনা। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবো।’

তবে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে ওই বোর্ডিংয়ের মালিক ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওসমান গণিকে ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি।



মন্তব্য চালু নেই