বর্ধমান বিস্ফোরণ তদন্তে

বাংলাদেশ আসছে এনআইএ

পশ্চিমবঙ্গের বর্দমানে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের তদন্তে এবার বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল তদন্তকারী দলকে বাংলাদেশে আসার অনুমতি দিয়েছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র চেয়ে আবেদন করেছে সংস্থাটি। আবেদনটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই মন্ত্রণালয় ঢাকার সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

মঙ্গলবার আনন্দবাজার ও দৈনিক বর্তমান পত্রিকায় এ খবর প্রকাশ করা হয়।

বর্ধমানের ওই বিস্ফোরণে বাংলাদেশের রাজশাহী ও সাতক্ষীরার জেবএমবি সদস্যদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দাবি করে আসছেন ভারতের তদন্তকারীরা। আনন্দবাজারের প্রতিবেদন মতে, প্রাথমিকভাবে ঢাকা ছাড়া ওই জায়গাগুলোতেও যেতে চায় এনআইএ।

তবে বাংলাদেশে আসার চূড়ান্ত ছাড়পত্র পাওয়া নির্ভর করছে ঢাকার ইচ্ছার ওপর। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৯ অথবা ১০ নভেম্বর দিল্লি থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছবে চার-পাঁচ সদস্যের তদন্তকারী দলটি।

বর্ধমান বিস্ফোরণের তদন্তে শুরু থেকেই উঠে এসেছে বাংলাদেশের জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাচ্ছে তদন্তকারীরা। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, বাংলাদেশের জঙ্গি গোষ্ঠী জামাআ’তুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) এর সদস্যরাই পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলিতে বিস্ফোরক বানানোর কাজে সক্রিয় ছিল। পরে বাংলাদেশে শীর্ষ নেতাদের হত্যার কাজে এসব ব্যবহার করার পরিকল্পনা ছিল বলে ভারতীয় গোয়েন্দা দাবি করছেন। ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে একটি প্রাথমিক রিপোর্ট বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলেও দিয়েছে ভারত।

আনন্দবাজরের প্রতিবেদনে বলা হয়, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা মনে করছেন, এই গোটা চক্রান্তের মূল শিকড় রয়েছে বাংলাদেশের মাটিতে। তাই বাংলাদেশে যেতে চায় এনআইএ। সম্প্রতি ঢাকার সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে দু’জন হরকাতুল জিহাদ (হুজি) সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। তাদের সঙ্গে খাগড়াগড়ের যোগাযোগ থাকতে পারে বলে সন্দেহ ভারতীয় গোয়েন্দাদের।

গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সঙ্গে যে বাংলাদেশের যোগ রয়েছে, তা মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে যায় বিস্ফোরণের পরেই। বিস্ফোরণে মৃত শাকিলের পরিচয় খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় সে আসলে বাংলাদেশের নাগরিক। ঢাকায় তার বাড়ি। ওই ঘটনায় ১২ জন জেএমবি জঙ্গিকে খুঁজছে এনআইএ। এদের  মধ্যে চার জনই বাংলাদেশের বাসিন্দা। বিস্ফোরণের পর তারা বাংলাদেশেই ফিরে এসেছে বলে সন্দেহ গোয়েন্দাদের।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার জানায়, খাগড়াগড় মডিউলের মূল কুচক্রী সাজিদ পলাতক। তিনি বাংলাদেশের বাসিন্দা। গত দেড় বছর ধরে মুর্শিদাবাদের লালগোলার কাছে মুকিমনগরের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জেহাদি প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সীমান্তবর্তী এলাকার সবক’টি জঙ্গি ঘাঁটির সঙ্গে যোগাযোগ রাখারও দায়িত্ব ছিল তার।

গোয়েন্দাদের বক্তব্য, ওই মডিউলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কওসর। বীরভূমের বোলপুর ও বর্ধমানের বাবুরগড়ে তার অস্থায়ী ডেরা ছিল। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিস্ফোরক পৌঁছে দেয়া ও সেগুলি বানানোর প্রশিক্ষণ দেয়ার দায়িত্ব ছিল তার। গোয়েন্দারা জেনেছেন, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরেও প্রথমে বর্ধমান ও পরে বীরভূমে তিন দিন লুকিয়ে ছিলেন কওসর। পরে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হলে নদিয়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন তিনি।

প্রতিবেদনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের বরাতে বলা হয়, বেলডাঙাসহ সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে মাদরাসার জন্য জমি কেনার দায়িত্ব ছিল হাতকাটা নাসিরুল্লার। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা-হাতপাড়ায় তার আস্তানা থাকলেও তিনি বাংলাদেশের বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা। তাদের বক্তব্য, এই মডিউলের চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক তালহা শেখ। বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে এসে বীরভূমের কীর্ণাহার ও নদীয়ার দেবগ্রামে আস্তানা গাড়েন তিনি। কওসরের পাশাপাশি তিনিও বাংলাদেশে বোমা পৌঁছে দেয়ার দায়িত্বে ছিলেন। ফলে বাংলাদেশে গেলে এই চার জনের সম্পর্কেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলতে পারে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।

বিস্ফোরণে নিহত শাকিল গাজী ও সুভান মণ্ডল বাংলাদেশের নাগরিক- শুরু থেকেই এমন দাবি করছে ভারত।  এ প্রসঙ্গে বর্তমান পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, এই দুই জঙ্গি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য জোগাড় করা হবে বাংলাদেশ থেকে। পাশাপাশি আসিফ আদনান ফজলে এলাহী তাঞ্জিল নামে দুই জঙ্গির বিষয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের কাছ থেকে তথ্য চেয়েছিল এনআইএ।

প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, বর্ধমানের জঙ্গিরা এ পর্যন্ত আটটি কনসাইনমেন্টের মাধ্যমে একশটিরওবেশি ইমপ্রোভাইজ এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। এই আইইডি সংগ্রহ করেছে এমন বেশ কয়েকজন জঙ্গির নামও পেয়েছে এনআইএ। এবারের বাংলাদেশ সফরে সেই নামগুলো  ঢাকাকে জানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে পশ্চিমবঙ্গে গা-ঢাকা দেয়া ১৮০ জন জঙ্গির বিষয়েও খোঁজখবর নেবে এনআইএ।



মন্তব্য চালু নেই