বাংলাদেশে অন্যায়ের প্রতি গ্রহণযোগ্যতার বিস্তার হয়েছে

বাংলাদেশের অনেক গুলো সমস্যার মধ্যে একটা বড় সমস্যা হচ্ছে, সমাজের ভেতরে অন্যায়ের প্রতি গ্রহণযোগ্যতার একটা বিস্তার, যেইটা আমরা ভ্যালু বলি।

এখন সহজেই একজন আরেক জনের টাকা মেরে দিচ্ছে। ইতিহাসের অনেক গুলো রেফারেন্স থেকে দেখা যায়, বাঙালি সব সময়েই অন্যের টাকা মেরে খেতে ওস্তাদ ছিল। কিন্তু, এইটার কিছুটা প্রতিরোধ ছিল লোকলজ্জার ভয়। এখন সব চেয়ে ভয়ঙ্কর যেইটা হচ্ছে, সেইটা হলো এই লোকলজ্জার ভয়টাও এখন নাই হয়ে যাচ্ছে। টাকা পয়সা মেরে খাইতে এখন আর কেউ শরমিন্দা হইতাছে না।

লোকলজ্জার ভয় উঠে যাওয়াটা খুব খারাপ একটা চেঞ্জ। এই অবক্ষয়টা চোখের সামনে হইছে মাত্র ২০ বছরে। ঘুষ, দুর্নীতি, টাকা পয়সা মারা এক সময় লজ্জার বিষয় ছিল। ধরা খাইলে মানুষ শরম পাইত। আমার মনে আছে, আমার বন্ধুদের মধ্যে যাদের পিতা মাতা কাস্টমসে ছিল বা যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কথা শোনা গ্যাছে আমরা তাদের খোটা দিতাম, ওরা লজ্জা পাইত।সরকারি চাকরি করা সম্ভাব্য জামাইয়ের খবর নেয়া হইতো, টাকা পয়সা খায় কিনা। যদি সেই রকম দুর্নাম থাকতো, তাইলে পাত্র বাতিল হইত। গণআন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদের পতন হইছিল কারণ, শুধু সে স্বৈরশাসক ছিল তা কিন্তু নয় সমাজে এই ধারণা ছিল লুচ্চা এরশাদ দুর্নীতিবাজ ফলে তাকে ক্ষমতা থেকে নামাইতে হবে। তার শাসন আমরা অবৈধ মনে করতাম।

এখন উলটা। এখন যদি দুর্নীতির অভিযোগ থাকে কন্যার পিতাই বলে, এইটা ব্যাপার না। সবাই খাচ্ছে কিছু না খাইলে, সংসার চলবে কেমনে। মেয়ে আমার সুখে থাকবে, আমি রাজী।

এইটা সরকারের শীর্ষ থেকে আসছে। কারণ, আমরা দেখি দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরেও, মন্ত্রীদেরকে দেশপ্রেমিক সার্টিফিকেট দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে । সরকারের এমপি মিনিস্টারদের আয় ৪ বছরে ৪০০ গুন থেকে ৩৪০০০ গুন বৃদ্ধি পায়, শাস্তি হয়না, কেউ পাত্তাও দেয় না যেন এই দুর্নীতি আর লুটপাট আর চোরের দলের হাতে শাসন আমাদের ভবিতব্য। এবং দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত রাজনীতিবিদদের দ্বারা স্বৈরতন্ত্র থেকে মুক্তি পাওয়ার অপেক্ষায় আমরা তীর্থের কাকের মত বসে থাকি। এখন টাকা পয়সা মেরে যারা চলে তাদের আমরা শ্রদ্ধা করি। ওদের সাথে বন্ধুত্ব এবং কানেকশান কামনা করি। আবার দেখা যায়, যে নিজে মেরে খায়, সেই সকাল বিকাল আওয়ামী লিগ, বিএনপিকে গালি দেয়।

ফলে সমাজের মধ্যে টাকা পয়সা লুটপাট আর দুর্নীতির একটা গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি হইছে। সমাজের মধ্যে অন্যায় এর প্রতিরোধের এই সংস্কৃতি যদি এই ভাবে ভেঙ্গে পরে, আমরা কিভাবে ইন্ডিয়ান আগ্রাসনের মুখে, নদী ধ্বংস হয়ে পুরো দেশের পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মুখে, বিদেশযাত্রা কমে এসে কর্মসংস্থান সংকুচিত হওয়ার সময়ে, রাজনীতিবিদদের হাতে সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যাওয়ার এই বাস্তবতায়, বলিউডী আগ্রাসনে নিজস্ব সাংস্কৃতিক স্বত্বা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কালে, জিপিএ সিস্টেমে চিপ চিপ ভালো মার্ক্স দিয়ে ছাত্রছাত্রী মেধাকে ডাম্বিফিকেসান করার সময়ে, লোভের কারণে পুরো জনপদের মানুষকে খাদ্যর বদলে প্রতিদিন বিষ খাওয়ার এই বিপণনে ব্যবস্থায় এবং শিক্ষক, ডাক্তার সহ সকল পেশাজীবীদের পেশাগত মানের চরম অধঃপতন এবং সার্ভিসের বানিজ্যিকিকরনের মুখে কিভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের এই ১৬ কোটি মানুষ টিকে থাকবে আমি বুঝতে অক্ষম।

শুধু শুশিলিয়ও আশার বানী আর প্রত্যাশাকে ছাড় দিয়ে দিয়ে?

এর পরিণতি গৃহযুদ্ধ, মারামারি, অধঃপতন, বিদেশী হস্তক্ষেপ এবং পরিবারের মধ্যে যাতনা এবং দীর্ঘশ্বাস আর ব্যক্তি হিসেবে অসম্পূর্ণ, অপূর্ণ, অতৃপ্ত রোগে ভুগা জীবন যাপন, যার প্রতিটা চিহ্ন আমরা ইতিমধ্যেই ঘরে ঘরে দেখতে পাচ্ছি।



মন্তব্য চালু নেই