জগতের চেয়ে, বড় বিচিত্র মানুষ!

সৃষ্টি জগত ধর্মীয় বিশ্বাসে সাত দিনেই সৃষ্টি নাকি। জগত সৃষ্টি করে জগতের উপাদান সৃষ্টি করলেন পরে। বড় বিচিত্র জগত। প্রতিদিনই আবিঃষ্কার হচ্ছে নতুন নতুন তথ্য, যত তথ্যই আবিঃষ্কার হোক তা কোরআনের পাতায় ১৪০০শত বছর পুর্বেই লিখিত দলিল।

যা পারেনি তাও পারবে তবে না বুঝলে অনেকে বলে কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক। আসলে বড় রহস্যঘেরা প্রতিটি পাতা। ২৩ বছরে যেটি হজম করেছে প্রিয় নবী সাঃ রন্ধ্রে রন্ধ্রে। পৃথিবীতে আসা কোন মহামানব যদি সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দার্শনিক আর কোরআন বিশেষজ্ঞ হহন সে মহামানব হলেন মুহাম্মদ সাঃ।

পৃথিবীর বুকে মহান আল্লাহ কতৃক আবিঃষ্কৃত আজব প্রানীটির নাম মানুষ। আর মাটির পৃথিবীতে মানুষের বড় আবিঃষ্কার টাকা। জগতের ভেতরে যত সমস্যা তার সমাধান বিষয়ক বস্তুটি টাকা। আবার সবচেয়ে অশান্তি আর প্রানের অনবরত ছুটাছুটির টার্গেট বা সেন্টার হলো টাকা।

আজব পৃথিবীতে মানুষের দৃষ্টিকোণ ও বাহ্যিক ব্যবহারটা জীবনের ঘটনার সাথে এমনকি বসবাস করা দুনিয়ার জিনিসের সাথে ব্যাপক পার্থক্য। একদিন কবি নজরুলের কবিতায় রক্ত মানে মৃত্যু এমন চিন্তা মানতে রাজি হয়নি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সত্যিই আজব চিন্তা কবিদের।

আমাদের বর্তমান সময়ে বসবাস করা মানুষের চিন্তা ও অদ্ভুদ বদলে গেলো। যেমন কোন কোন ক্ষেত্রে এই মসজিদ,মন্দির কি অপুর্ব জায়গা। তবে এখানে গরিব মানুষ বাইরে বসে ভিক্ষা করে আর ধনী ব্যক্তি ভিতরে ভিক্ষা চায়। বিচিত্র এই দুনিয়ার কঠিন সত্য এটি।

বরযাত্রার সময় বর সবার পিছনে থাকে,আর সমস্ত মানুষ আগে আগে যায়। সমাজ রীতি আমাদের কেমন জানি নিয়মে ফেলেছে। অথচ কবর যাত্রায় মৃতদেহ সবার আগে থাকে,আর বাকি মানুষজন পিছনে পিছনে চলে আর মৃদুস্বরে বলে আল্লাহু রাব্বি মুহাস্মদ নবী।

কোন মানব শিশু জম্ম নেওয়ার সাথে সাথে কাঁদছে আর যাদের ঘরে আসলো তারা হাসতেছে,কি আজব। কারো কান্নাও আমাদের আনন্দের হচ্ছে। সমস্ত দুনিয়া সুখের দিন আগে থাকে আর দুঃখের দিনে পিছনে। অথচ কতো সুখেই ছিলাম বেহেশতে সৃষ্টিকর্তার সুকৌশল আর মানবের অপরাধে মাটির পৃথিবীতে ট্রান্সফার হলাম আমরা মানবজাতি।

অপরাধের বুঝা বইতে বইতে আজ কতো লক্ষ বছর গেলো । তারপরেও শাস্তি কমে না বাড়েওনা। শেষ দিনেই চলবে গাড়ি চালানো মানব শরীরের। অপুর্ব তুমি স্রষ্টা বড় বিচিত্র রুপ তোমার। অনেক কবি স্রষ্টার এমন সৃষ্টি খেলায় মেতে থাকাকে বহুরূপী বলে আখ্যা দিয়েছিলো। অনেকে এসবকে নাস্তিক বলেছিলো।

হে খোদা,কি অদ্ভুত তোমার লীলা। তারচেয়ে বড় বিচিত্র নিয়ম তোমার সৃষ্টি মানুষের। শেষকৃত্য বা প্রিয় মানুষের স্মরণে মোমবাতি জ্বালিয়ে মৃত মানুষকে স্মরণ করা হয়। আবার মোমবাতি নিভিয়ে জীবিত মানুষের জম্মদিন পালন করা হয়। কে বেশি বিচিত্র খোদা।তুমি না তোমার সৃষ্টি মানব।

মানুষের বারান্দায় দেয়ালে স্মৃতিচারণ মানুষের ছবি। সারাটা জীবন বোঝা বৈলো দেওয়ালের পেরেকটা। আর মানুষ সুনাম করল পেরেকে টাঙ্গালো ছবিটার সাথে মানুষটির। পাল্টে গেলো আমাদের মানবআত্বা।
পাশে থাকা ধর্মান্ধ মানুষের কজন নুনের মতো তীতকুটে জ্ঞান দেয়। অবসরে ঢেঁকুর তোলে মানুষের চরিত্র বর্নানায় সেই আসল বন্ধু হয়। অথচ মিষ্টি কথার আড়ালে থাকে চতুর অভিসন্ধির ভয়। সে খবর নেই কারো কারন চেহারা কখনো চরিত্র মাপে না।চরিত্র এক অদৃশ্য বস্তু,হিয়ার মাঝে বসবাসরত নরম আত্বা সে।

অন্যদিকে ইতিহাস সাক্ষী আছে আজ পর্যন্ত নুনে কখনো পোকা ধরেনি। আর মিষ্টিতে তো প্রতিদিনই পোকা। পিপড়ারা ও সুযোগ পেলে ছাড়েনি। সঠিক পথে মানুষ চলতেই চায়না। আর বাঁকা পথে সবাই যেতে চায়। বাঁকা পথেই যেনো তার আসল সত্য লুকানো। সে বার বার চলে সে পথে। জগতের বস্তুগত জিনিসের চেয়ে, দুনিয়ার মানুষ বড় বিচিত্র।

আমাদের মনমানসিকতা পরিবর্তনের পাশাপাশি পরিবর্তন হয়েছে দৃষ্টিকোণ,দৃষ্টিভঙ্গি আর একে অপরের ত্রুটিপূর্ণ মন্তব্য সমালোচনায়। আমাদের চিন্তাটা একটা গন্ডির ভেতরে মারপ্যাচ খাচ্ছে। অনিয়মটি নিয়ম হিসাবে মানতে মানতে আমরা এতোটাই বোকা বনে সিংহাসনে বসে রয়েছি। ট্রাক ঝাপিয়ে দিলেও উঠতে চায়না কেহ।

আর এই কারনে মদ বিক্রেতাকে কোথাও যেতে হয়না। অন্দরমহলে সে দেদারছে মদ নামক বিষ বিক্রি করতে করতে কোটিপতি হয়। অথচ দুধ বিক্রেতা পাড়ায় পাড়ায়, লোকের দরজায় দরজায় যেতে হয় কটা দুধ বিক্রি করতে। বড় আজব সত্য নয় কি। ভালো জিনিস বাসায় বাসায় গিয়ে বিক্রি করেও ক্রেতা পাওয়া যায় না,অথচ মদের দোকানে ভরপুর।

অন্যদিকে দুধ বিক্রেতাকে সর্বদা বলে জল মেশান নিতো । জল মিশালে কিন্তু দামে কম দেবো বা ভেজাল দুধ কিনবেনা বলে হুংকার। অথচ বড় বিচিত্র, মদে নিজে হাতে জল মিশিয়ে খাচ্ছে মানুষ। কি আজব পৃথিবী।
আজ বলতে ইচ্ছা করে, একই গ্রন্থগারে গীতা আর কোরআন এক সাথে থাকে । নিজেদের মধ্যে কখনোই লড়াই করেনা। যারা এদের নিয়ে লড়াই করে, তারা গীতা আর কোরআন কোনদিন ও পড়েনা। শুধু বাহ্যিকতা নিয়ে তারা সকলে ধর্মপ্রান সেজেছে, বড় বিচিত্র নয় কি এসব মানুষ। কেউ বলে জগতটা নাকি বড় বিচিত্র আমি বলি জগত নয় মানুষেই আজব আর বিচিত্র।

মানুষের ব্যবহারেও আজব পরিবর্তন এসেছে, কোন মানুষকে জানোয়ার বল্লে ক্ষেপে যায়। কিন্তু সিংহ বল্লে খুশি হয়। এমনকি বাঘের বাচ্চা বল্লেও মহাখুশি। বড় বিচিত্র মানুষ,দেশ বা জগত বিচিত্র নয়।কেননা জগতটা নিয়মের সুত্র দিয়ে মহান আল্লাহর ঈশারায় ঘুর্ণয়মান পিন্ড।

কোন একদিন জগত বিখ্যাত দার্শনিক সেক্সপিয়র বলেছিলেন,পৃথিবী একটি নাট্যশালা এ ছাড়া কিছু নয়। আমার ও মাঝে মাঝে তা মনে হয়। জগতের চেয়ে বড় বিচিত্র মানুষ হয়।

লেখক: জামাল জাহেদ সাংবাদিক ও কলাম লেখক
জাতীয় দৈনিক ও জাতীয় অনলাইন।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্ত নিজস্ব। আওয়ার নিউজ বিডি’র সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আওয়ার নিউজ বিডি আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না)



মন্তব্য চালু নেই