ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি : প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়

শাহাদাত হোসাইন স্বাধীন : দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা জুড়ে সার্কাস চলছে। চরম সার্কাস। শিক্ষামন্ত্রী কতকদিন আগে সৃজনশীল নামক এক পদ্ধতি নিয়ে দিনে দিনে বিপ্লব সাধনের ঘোর নিয়ে হাজির হলেন । তার দুর্বল পরিকল্পনা ও অদূরদর্শী চিন্তার ফলে অভিভাবকদের রাস্তায় নামতে হলো । যে পদ্ধতি শিক্ষকরা বুঝে না সেটা শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দেয়া হলো। শিক্ষকরা পাঠ্যপুস্তক ছেড়ে বাজারের গাইড বই থেকে প্রশ্ন করা শুরু করলো। কিছু বুঝার আগে পিএসসি জেএসসির গজব তুলে দেয়া হলো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাধে। সকাল –বিকাল নতুন নতুন ফমূলা বের করে মহাজ্ঞানী শিক্ষামন্ত্রী ছাত্র-ছাত্রীদের হাপিত্যেস তুলে ছাড়লেন । এই ভদ্রলোক শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন দিনের সূচনা করলেন । এখন পরীক্ষায় পাসের জন্য টেক্সবুক পড়তে হয় না ,ফেসবুকে উত্ত্রসহ প্রশ্ন পাওয়া যায়।’আশা করি আপনাদের দেওয়া লাইক বিফলে যাবে না, শতভাগ কমন ইনশাআল্লাহ’। এমনই নিশ্চয়তা দিয়ে ফেসবুকে ফ্যান পেজ খোলে পরীক্ষার প্রশ্ন প্রকাশ হয় । যার সাথে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মিলে যায় মূলপ্রশ্ন । পিএসসি ‘জেএসসি ও এসএসসির প্রশ্ন মেলে ফেসবুকে। সদ্য সমাপ্ত এই এইচসির প্রশ্ন ও বেশ ঘটা করে প্রকাশিত হয় ফেসবুক,হোয়াটঅ্যাপস ,ভাইবারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ।পরীক্ষা শুরুর আগে শিক্ষামন্ত্রী দাম্মিকতার সাথে বলেছিলেন, ‘প্রশ্নফাঁস একদমই ‘অসম্ভব’’ । কিন্তু আলোচিত আহমেদ নিলয় নামক আইডি থেকে পরীক্ষার আগে ফাঁস করা হয় পদার্থ বিজ্ঞান,তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি, জীববিজ্ঞান ও হিসাব বিজ্ঞান পরীক্ষার প্রশ্ন । পরীক্ষা শুরু হলে দেখা যায়, ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে তার হুবহু মিল।ফাঁস হওয়ার তালিকায় যুক্ত হলো মেডিকেল ও সরকারী কর্মচারী পরীক্ষার প্রশ্ন ।

ফাঁসকৃত প্রশ্ন পেয়ে জিপিএর বন্যা নিয়ে পাশ করা শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে চান্স পাওয়ার কথা ভাবতে পারে না।
তাইতো এবারের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির হিড়িক পড়েছে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ইউনিটে জালিয়াতির অভিযোগে অন্তত ২৭ জনকে গেপ্তার করা হয়। ক ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ১৩ জন,খ ইউনিটে ১ জন এবং ঘ ইউনিটের পরীক্ষায় আটক করা হয় ৯ জনকে । একই সময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ইউনিটের পরীক্ষা থেকে আটক করা হয় ৫ জন ভর্তি ইচ্ছুককে । চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বর্তমান শিক্ষার্থীসহ আটক করা হয় ৮ জনকে । আটককৃতদের মধ্যে একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ থেকে পাস করে ৩৫ বিসিএস (প্রশাসনিক) ১৩৯ তম স্থান অধিকারী এবং ৯ম তম জুডিশিয়াল সম্ভাব্য ম্যাজিস্ট্রেট । সবচেয়ে নির্লজ্জ এবং ভয়ংকর কাজটি হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে । সি ২ ও সি ৩ ইউনিটের প্রশ্নের উত্তর গুলো সুকৌশলে ঝাপসা করে দেওয়া হয় । রেজাল্ট প্রকাশিত হলে দেখা যায় মেধা তালিকার প্রথম ১৫ জন ১০০ তে ১০০ পেয়েছেন। এই সব জালিয়াতির সাথে প্রশাসন, শিক্ষার্থী ও কোচিং সেন্টারের চক্র জড়িত । এই কোচিং সেন্টার এবং বড় ভাইয়েরা নাহিদ সাহেবের মত মন্ত্রীদের চেয়েও বেশী শক্তিশালী । ফার্মগেটের এক একটা কোচিং সেন্টারের আয় কোটি টাকা ছাড়িয়ে । সারা দেশে যখন কোচিং সেন্টার বন্ধের দাবি উঠল নাহিদ সাহেবরা পিএসসি-জেএসসি নামক উদ্ভূদ পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করে উল্টো কোচিং সেন্টারের বিজ্ঞাপনের পাত্র হলেন ।

তথাকথিত কোন কোচিং সেন্টারে না পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছিলাম আমি । কিন্তু নিস্তার পায়নি । বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর বেশ কয়েকটা কোচিং সেন্টার ২০০০-৫০০০ টাকার বিনিময়ে অমার ছবি তাদের সাফল্য পাতায় ছাপানোর প্রস্তাব দেয়।

একজন ছাত্র বা ছাত্রী সারা বছর পরিশ্রম করছে ভালো রেজাল্টের জন্য। অথচ তার আরেক বন্ধু প্রশ্ন পেয়ে রাতারাতি আই এম জিপিএ ৫ এর অধিকারী হয়ে বসে আছে। শিক্ষাব্যব¯’ার ্্্্এই সার্কাস যুগে পড়–য়ারা হতাশায় ভুগছে।আর আই এম জিপিএ ৫ এর দল জালিয়াতির পিছনে ছুটছে।
আমার ভাগিনা তাদের দলের একজন। সে আমার কাছ থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন চায় । সাজেশন্স নয় ,প্রশ্ন । সে একা নয় ,তাদের দলে ২০/৩০ জন। যারা ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের জন্য লাখ টাকা খরচ করতে প্র¯‘ত। তাদের গ্রুপও একটি নয় ,এমন শত শত গ্রুপ আছে অমাদের অগোছরে। তাদের কিবা দোষ। ফেসুবক থেকে পিএসসি,জিএসসি,এসএসসি ও এইচএসসির প্রশ্ন পেয়ে পাশ করেছে । তারা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন চাইতে ই পারে, স¦াভাবিক।

মহাগুরু শিক্ষামন্ত্রী একজন প্রগতিশীল লোক। তিনি আগে কথায় কথায় বিপ্লবের ডাক দিতেন। বিপ্লবকে ত্বরাণি¦ত করতে তিনি এখন নৌকায় উঠেছেন ,খুব পাকাপোক্তভাবে উঠেছেন। শিক্ষা ব্যবস্থায় ও শিক্ষার্থীদের মন মানসিকতায় তিনি যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছেন তাতে অনুমেয় তিনি কতটা বিকারগ্রস্ত বিপ্লবিক।এই তামাশার খোর লোকের পাশে এমন কেউ নেই যে তাকে বলবে শিক্ষা মন্ত্রাণালয় কোন তামাশার জায়গা নয় ।

বর্তমানে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থায় যে পচন ধরেছে তাতে পুরো জাতির ধংস অনিবার্য । মেধাহীন,অশালীন ও চিন্তাবিবেকহীন জাতিতে পরিণত হবো আমরা । তাই দেশের প্রগতিশীল ছাত্র নেতা,শিক্ষাবিদ ও দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবি মহলকে এহন ক্রান্তি মুহুর্তে এগিয়ে আসতে হবে। । সেটা অনতি বিলম্বে,দয়া করে আমাদের বাচাঁন,শিক্ষা ব্যব¯থা বাচানঁ।

লেখক : শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।


(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্ত নিজস্ব। আওয়ার নিউজ বিডি’র সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আওয়ার নিউজ বিডি আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না)



মন্তব্য চালু নেই