বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চার কানাডীয় তরুণ আবার আইএসে

উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে মাতৃভূমি বাংলাদেশ ছেড়ে কানাডায় এসে থিতু হয়েছিলেন তারা। কিন্তু সেই স্বপ্নের দেশ কানাডায় তাদের জীবন পরিণত হয়েছে দুঃস্বপ্নে। প্রতিনিয়ত নিজেদের লোক চক্ষুর আড়ালে রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টা, কিন্তু যেই সন্তানের জন্য তাদের এই দুর্বিসহ পরিণতি- সেই সন্তান বেঁচে আছে কি-না তাও তারা জানেন না, জানার কোনো উপায়ও নেই।

কানাডার স্কারবোরোর চার বাংলাদেশি বাবা- মা জানেন, তাদের সন্তান বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। তারা এও জানেন, সন্তানেরা পালিয়ে গিয়ে সিরিয়ায় চরমপন্থি ইসলামি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে যোগ দিয়েছে। কিন্তু তারা বেঁচে আছে কি-না সেই তথ্য কারো কাছেই নেই। চলতি সপ্তাহে কানাডার প্রভাবশালী মিডিয়া সিবিসি নিউজ এই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণদের ইসলামি স্টেটে যোগ দেওয়ার তথ্য প্রকাশ করলেও পরিবার এ নিয়ে আরো আগ থেকে ‘ঝামেলা’ পোহাচ্ছে।

সিবিসি’র নিউজে যে চারজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণের আইএনে যোগ দেওয়ার তথ্য উঠে এসেছে তারা হলো তাবিরুল হাসিব, আবদুল মালিক, আদিব এবং নুরু। এই চারজনের মধ্যে তাবিরুল হাসিব স্কারবোরোর মোনার্ক পার্ক কলেজিয়েট থেকে গ্র্যাজুয়েশন করে সেন্টেনিয়াল কলেজে ভর্তি হয়েছিল। স্কুল এথলেট টিমের নিয়মিত খেলোয়াড় ছিল সে। কিন্তু আবদুল মালিক প্রাতিষ্ঠানিক কোনো স্কুলে পড়াশুনা করেনি। যে বাবা উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন, তিনি সন্তানকে কোনো স্কুলে দিলেন না কেন?- এই প্রশ্নের জবাব নেই। মালিককে পাঠানো হয়েছিল মসজিদে কোরআন মুখস্থ করার জন্য। সেখানেই সে দীক্ষা নেয় আইএসের জঙ্গি হওয়ার। আদিব এবং নুরু সম্পর্কে কোনো তথ্য জানতে পারেনি সিবিসি নিউজ।

২০১২ সালের শেষের দিকে চারজন মিলে মধ্যপ্রাচ্যের বিমানে বুকিং দেয়। তারপর একদিন বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। উদ্বিগ্ন বাবা- মা পুলিশের কাছে সন্তান নিখোঁজ হওয়া নিয়ে রিপোর্ট করে। আরসিএমপির ইন্টিগ্রেটেড ন্যাশনাল সিকিউরিটি এনফোর্সমেন্ট টিমের সদস্যদের আনাগোনা শুরু হয় বাড়িতে, চলে জিজ্ঞাসাবাদ।

বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর মালিক বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা লেবাননে আছে, সিরিয়ায় পৌঁছার চেষ্টা করছে- এই তথ্য বাবাকে জানিয়েছে মালিক। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মালিক এবং নুরের বাবা লেবাননে গিয়ে বুঝিয়ে-সুজিয়ে চারজনকেই ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। ফিরে আসার পর আরসিএমপি একাধিকবার তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করেছে। কিন্তু গত ৬ জুলাই আবার উধাও হয়ে যায় চারজন। এবার আর তারা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি।

তারা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখলেও কানাডার গোয়েন্দাদের যোগাযোগের ছেদ ঘটেনি। ‘সন্তান আইএসে যোগ দিয়েছে’- এই ধারণায় মা-বাবারাও নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন সমাজ থেকে। একদিকে সন্তানের জন্য বেদনাবোধ, অন্যদিকে লোকলজ্জা- উদ্বেগ, দুর্বিসহ পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে চার পরিবারকে।

সূত্র : সিবিসি নিউজ।



মন্তব্য চালু নেই