বাংলাদেশি এক ছাত্রের সততায় মুগ্ধ মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কন্যা

মালয়েশিয়ার নাগরিকদের কাছে বাংলাদেশিদের বেশ সুনাম রয়েছে। সেদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের সততা ও নিষ্ঠা সম্পর্কে তারা ভালভাবেই অবগত।

বাংলাদেশিদের সুনাম ও বিশ্বাসের পাল্লাটা এবার ভারী করেছেন বাংলাদেশি এক ছাত্র। তবে এবার এ সাধুবাদ এসেছে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী খোদ মাহথির মোহাম্মদের মেয়ের কাছ থেকে।

মনির হোসেন নামে ওই ছাত্র মাহাথির কন্যার লক্ষাধিক টাকার বেশি জিনিস কুড়িয়ে পেয়ে তা ফেরত দিয়ে গড়েছেন নতুন এ সততার দৃষ্টান্ত।

২০১৩ সালে স্বপ্নের মালয়েশিয়ায় পড়তে আসেন মনির। তিনি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চরলক্ষ্মী গ্রামের আব্দুল মোতালেবের একমাত্র ছেলে। মালয়েশিয়ার সেরেম্বান নাইটিঙ্গেল কলেজের ডিপ্লোমা ইন বিজনেসের ছাত্র তিনি।

মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ায় আর দশটা বাংলাদেশির মতো তাকেও কাজ করে পড়াশোনা খরচ চালাতে হয়। তাই মনির পার্ট টাইম কাজ করেন বুকিত বিনতানের লয়াত প্লাজায় রেস্টুরেন্ট কাবাব তুর্কিতে।

সপ্তাহে চারদিন তার কাজ। রেস্টুরেন্ট কাবাব তুর্কিতে প্রতিদিন প্রচুর কাস্টমার আসেন। কখনো কখনো মনিরদের তাই বিশ্রামেরও সময় থাকেনা।

একদিন কাজ শেষে মনির দেখেন কারো একটা ব্যাগ পড়ে আছে। ব্যাগ খুলে ভেতরে মালয়েশিয়ার মুদ্রায় ৩ হাজার রিঙ্গিত মূল্যের একটা আইপ্যাড, একই মূল্যের একটা আই মোবাইল ফোন, ২টা ব্যাংক কার্ড ও কিছু কাগজপত্র। ব্যাগে তিনি একটা নেইম কার্ডও পান, যাতে লেখা মারিয়ানা মাহথির।

বাংলাদেশি ছাত্র মনির কার্ড থেকে নম্বর নিয়ে ফোন দেন মারিয়ানাকে। অপর প্রান্ত থেকে ফোন রিসিভ করে মারিয়ানার নিরাপত্তা কর্মী। মনির তাকে বিষয়টি জানালে তারা চলে আসেন রেস্টুরেন্টে। মনির এ সময় মারিয়ানার পরিচয় পেয়ে বিস্মিত হলেও উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া ব্যাগসহ দামি জিনিসপত্র ফেরতি দিতে অনীহা জানান।

পরে নিরাপত্তা কর্মীরা মারিয়ানার সঙ্গে কথা বলে ও তার ছবি দেখিয়ে ব্যাগ ফেরত নেয়। এ সময় তারা মনিরকে আর্থিক পুরস্কার দিতে চাইলেও মনির তা নিতে অস্বীকার করেন। পরে তারা মনিরের ছবি তুলে নিয়ে চলে যান।

এরপর মারিয়ানা তার ফেসবুকে ওয়ালে মনিরের ছবি আপলোড করে মনিরের সততার বিবরণসহ স্ট্যাটাস দেন। তিনি লেখেন, মনির এক জন সৎ ছেলে। শত পরিশ্রম করেও তার কোনো লোভ জাগেনি। সত্যি বাংলাদেশিরা অনেক সুন্দর।

মুহূর্তের এ খবর সেদেশের নাগরিক সহ বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়ে। মনিরকে অভিনন্দন জানান মালয়েশিয়ান নাগরিকরাও।

মনিরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে মনির বলেন, প্রতিটি মানুষকে নিজের জায়গা থেকে সৎ থাকা উচিত। পরের কিছুতে লোভ করে কখনো বড় হওয়া যায় না। বড় হতে হলে সততা থাকতে হবে। আমাদের কাজেই বিদেশিরা আমাদের ভালবাসবে।



মন্তব্য চালু নেই