বলধা গার্ডেনের এই কুকর্ম থামবে কবে?

বলধা গার্ডেন। নামটি সবার কাছেই বেশ পরিচিত। ব্যস্ত রাজধানীর বুকে সবুজের সমারোহে শান্তির প্রশ্বাস ফেলে দু’দণ্ড বসে থাকার মতো সবকিছুই একসময় এখানে ছিল। বসার মতো জায়গা ছিল, ছিল ছায়া-সুনিবিড় শান্ত পরিবেশ। পুরান ঢাকার মানুষজন স্বপরিবারেই ঘুরতে যেতেন সেখানে।

তবে বাগানের কিছু অসাধু কর্মচারীর কারণে এর পরিবেশ এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, পরিবারে নিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা, শিক্ষিত কোনো মানুষের একা যেতেও সেখানে রুচিতে বাঁধে, সঙ্গে ক্ষতির ভয় তো আছেই। আর কর্তৃপক্ষ এর সবটাই জেনেও নীরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে। এসব মিলিয়ে দিন দিন বলধা গার্ডেন অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হচ্ছে।

একটা সময় ছিল, ঢাকার বুকে প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে সবুজপ্রেমীরা ছুটে যেতেন এই বলধা গার্ডেনে। ছেলে থেকে বুড়ো সব বয়সের মানুষই অবসরে চলে যেতেন সেখানে। সবুজ গাছগাছালি, পাখির ডাক, নির্মল বাতাস, নানা রঙের ফুল, পুকুরের পানি, বিভিন্ন প্রজাতির গাছ দেখে মুগ্ধ হতেন সবাই। নতুন বিয়ে করে এখানের রেস্ট হাউজে উঠে মধুচন্দ্রিমার স্বাদও নিতেন অনেকে। ঠিকভাবে চলতে যা কিছুর প্রয়োজন তার সবকিছুই সেসময়ে ছিল বলধা গার্ডেনে। কিন্তু সেসব এখন শুধুই গল্প।

দুই অংশে বিভক্ত এই বাগানটি দেখভালের জন্য এখন রয়েছেন মাত্র ১০ জন কর্মচারী। ঠিকঠাক দেখভাল করতে আরো লোক নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন হলেও তা করা হচ্ছে না। ফলে বাগানটিতে যেসব উদ্ভিদ রয়েছে, সেগুলোর পর্যাপ্ত পরিচর্যা করা হচ্ছে না।

পরিচর্যার অভাবে ইতোমধ্যে অনেক উদ্ভিদ মারাও গেছে। লোহার খাঁচার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের যে গুল্মগুলো সংরক্ষরেন ব্যবস্থা করা হয়েছে সেগুলোও বেহালে উঠেছে। এগুলো পরিচর্যার জন্য যে পানির লাইন ছিল সেগুলোও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চারপাশে ময়লা-আবর্জনা তো রয়েছেই, নষ্ট হয়েছে ল্যাম্পপোস্টগুলো, ছাউনির লাইটগুলো হয়েছে অচল।

গার্ডেনের মধ্যে লাল, নীল, হলুদ, সাদা শাপলা সংরক্ষণের জন্য যে কয়টি হাউজ রয়েছে, সেগুলোতে ময়লা জমেছে। পানিও শুকিয়ে গেছে। অনেক হাউজে কোনো শাপলার গাছই নেই। আর যেগুলোতে শাপলা ফোটে সেগুলোও খোয়া যায় প্রেমিকযুগলের হাতে।

এই গার্ডেনের ভেতরে এক সময় প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন রঙের গোলাপ ফুল ফুটতো। কিন্তু এখন সেখানে ঘাস ছাড়া আর কিছু নেই। অযতœ আর অবহেলাতেই গোলাপ গাছগুলো মরে গেছে।

ব্যস্তু জীবনের কোলাহল থেকে একটু মুক্তি পেতে আগে যে বলধা গার্ডেনে আসতেন সব বয়সের মানুষ এখন সেই নিড়িবিলি পরিবেশের সুযোগ নিচ্ছেন মূলত তরুণ-তরুণীদের একটা অংশ; যারা অনেক সময় তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত পোশাক পরেই অবলীলায় করছেন যা ইচ্ছা তাই। বাগানের ভেতর ঢুকে গাছের আড়ালে বসে তারা এতটাই অন্তরঙ্গ হয়ে ওঠেন যে অনেকে সেদিকে তাকিয়ে লজ্জায় নিজ দায়িত্বে চোখ নামিয়ে নেন।

এ বিষয়টি মাথায় রেখে গার্ডেনের একটি দেয়ালে কর্তৃপক্ষ লিখেও রেখেছে- এখানে অসামাজিক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকুন। তবে তা লেখাতেই শেষ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে গার্ডেনের একজন কর্মচারী বলেন, ‘এখানে যারা আসেন, তাদের বেশিরভাগই অসামাজিক কাজকর্ম করার জন্যই আসেন। খুব সহজে ও নির্দ্বিধায় কুকর্ম করতে পারে তার জন্য কিছু কর্মচারীরাই তাদের নিরাপত্তা দিয়ে থাকেন। তবে এজন্য অতিরিক্ত কিছু গুনতে হয়।’

কখনও কখনও অন্তরঙ্গ অবস্থায় এই যুগলদের ধরে গার্ডেনের কর্মচারীরা নিজেদের মতো করে ‘শাস্তি’ দেন; আসলে যা নিজেদের পকেট ভারি করা ছাড়া আর কিছুই নয়। এমন শাস্তির মধ্যে থাকে জরিমানা ও মোবাইল ফোন হাতিয়ে নেয়া। এমন অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেল সেখানে বেড়াতে আসা রাফি নামে এক তরুণের কাছ থেকে। তিনি বললেন, ‘কয়েকদিন এখানে বেড়াতে এসে এক তরণ-তরুণী অন্তরঙ্গ হওয়ার মুহূর্তে ধরা খেয়ে যায়। পরে তাদের কর্মীচারীরা টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়।’

এ গার্ডেনে হিন্দু ধর্মাবম্বীদের অনেকে আসেন পূজা সংক্রান্ত কাজে। ধর্মীয় কাজ করতে আসলেও তারা সেখানে বেশিক্ষণ থাকতে পারেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। পূজা দিতে আসা শ্রী পল্লব দে নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘এখানে আমরা আসি শুধুমাত্র পূজার উপকরণগুলো ভাসিয়ে দিতে। পরিবেশ তেমন ভাল নয় বলে সবাই এখানে আসে না।’

বলধা গার্ডেনে নিজেদের মতো করে অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন মাদকাসক্তরাও। মূলত বিকেলের দিক থেকে এখানে আস্তানা গাড়েন তারা।

তবে এসব বাস্তবতার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন বলধা গার্ডেনের পরিচালক ফরিদ হোসেন। তার দাবি, বলধা গার্ডেনের পরিবেশ অত্যন্ত ভালো। এখানে সবাই স্বপরিবারে বেড়াতে আসেন। পরিবেশ আগের চেয়ে অনেক ভালো। তবে গার্ডেন পরিচর্যায় কর্মচারীর অপ্রতুলতার বিষয়টি মেনে নেন তিনি।

ফরিদ হোসেন বলেন, ‘কর্মচারীর সংখ্যা অত্যন্ত কম হওয়ার কারণে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে হিমসিম খেতে হয়। এখানে যাতে কোন ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ না হয় তার জন্য কর্মচারীর কড়া নজর রাখেন।’ খুব শিগগিরই আরো কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।


 

বোটানিকেল গার্ডেনে দিনের বেলার একটি দৃশ্যঃ

https://youtu.be/aghtjGUmhXA



মন্তব্য চালু নেই