আজ হুমায়ূন আহমেদের তৃতীয় প্রয়াণ দিবস

হুমায়ূন আহমেদ এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি এমন এক সৃষ্টিশীল মানুষ, যিনি সৃজনশীলতার প্রায় সব শাখায় নন্দিত হয়েছেন। তিনি ছোটগল্প লিখে আলোড়ন তুলেছেন, উপন্যাস লিখে মোহগ্রস্ত করেছেন, চলচ্চিত্র নির্মাণ করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন- পাঠক, দর্শক সব মিলিয়ে তার বিশাল সাম্রাজ্য! সেই সাম্রাজ্য আজও আছে, পাঠপ্রিয়, চলচ্চিত্রমোদি প্রজারা আছে, নেই শুধু রাজা। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই হুমায়ূন আহমেদ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন চিরঅন্তরালে। দিনপঞ্জির হিসেবে আজ তার তৃতীয় প্রয়াণ দিবস।

মানুষকে মুগ্ধ করার এক অদ্ভুত ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। তার লেখার মতো বলা কথাগুলোও ভক্ত, পাঠকের জন্য ছিল বিশেষ কিছু। একবার পশ্চিমবঙ্গের প্রয়াত কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে ব্যক্তিগত আড্ডায় অভিভূত হয়ে বলেছিলেন, ‘ওর কথাগুলো রেকর্ড করে রাখা উচিত।’ বলতে দ্বিধা নেই সে চেষ্টাও হয়েছিল। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ বিষয়টি পছন্দ করেননি। শুধু তাই নয়, যিনি (স্বনামখ্যাত এক প্রকাশক) এই চেষ্টা করেছিলেন, তাকে তিনি কিছুদিনের জন্য তাদের ওল্ড ফুলস ক্লাবের আড্ডা থেকে বহিষ্কারও করেছিলেন। হুমায়ূন আহমেদ নেই, রয়ে গেছে তার অজস্র স্মৃতি এবং লেখনী।

নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর হুমায়ূন আহমেদ জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। মায়ের নাম আয়েশা ফয়েজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক হিসেবে শুরু হয় তার পেশাজীবন। যদিও এখানে তিনি আর থাকেননি। শুধু ‘লেখক’ হবেন, এই স্বপ্ন নিয়ে তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে দেন। কতটা আত্মবিশ্বাস থাকলে একজন মানুষ এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে ভেবে অবাক হতে হয়। পাঠকও তাকে সাদরে গ্রহণ করেছিল। ‘নন্দিত নরকে’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘গৌরিপুর জংশন’ ‘বহুব্রীহি’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘জোছনা ও জননীর গল্প’- এমন অনেক সফল সাহিত্যস্রষ্টা তিনি। তার হাতেই প্রাণ পেয়েছে বাংলা সাহিত্যের দুটি অসম্ভব পাঠকপ্রিয় চরিত্র মিসির আলী এবং হিমু।

হুমায়ূন আহমেদ প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরকে (১৯৭২) লিখে সাড়া ফেলে দেন। এরপর যা-ই লিখেছেন পাঠক সাগ্রহে লুফে নিয়েছে। একুশে বইমেলায় লম্বা সারিতে দাঁড়িয়ে পাঠক তার বই কিনেছে, প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য অপেক্ষায় থেকেছে। প্রকাশকেরাও তার পাণ্ডুলিপি পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকতেন। একটা সময় ছিল, যখন তার লেখা ছাড়া ঈদসংখ্যা পূর্ণতা পেত না। পাঠকেরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেন হুমায়ূন আহমেদ এরপর কী লিখেছেন পড়ার জন্য। বাংলা সাহিত্যে এমন আর কবে দেখা গেছে!

হুমায়ূন আহমেদের নাটক টেলিভিশনে প্রচারিত হবে- এটা জানার পর শহরের রাস্তা ফাঁকা হয়ে গেছে! আবার যখন তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন, তখনও দর্শক আগ্রহ দেখিয়েছেন। তিনি শুধু চলচ্চিত্রকার নন, চলচ্চিত্র বা নাটকের জন্য গান লিখেছেন, আবার সুরও দিয়েছেন, তা সমাদৃতও হয়েছে। ‘যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো’, ‘ও আমার উড়াল পঙ্খীরে’, ‘এক যে ছিল সোনার কন্যা’, ‘আমার ভাঙা ঘরে ভাঙা বেড়া ভাঙা চালার ফাঁকে’, ‘চাঁদনী পসর রাইতে যেন আমার মরণ হয়’- হুমায়ূন আহমেদের লেখা এই গানগুলো আজ নিশ্চয়ই রেডিও, টেলিভিশনে আবার শোনা যাবে। ২০১২ এর ২৪ জুলাই নুহাশপল্লীর যে লিচুতলায় তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়, ভক্তদের ফুলে ফুলে জায়গাটি আজ ভরে উঠবে। কেননা তিনি বেঁচে আছেন লাখ পাঠকের হৃদয়ে। নুহাশপল্লীসহ হুমায়ূন স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো আজ জীবন্ত হয়ে উঠবে ভক্তের পদচারণায়।



মন্তব্য চালু নেই