বছরজুড়ে মজার কাণ্ড রাষ্ট্রনায়কদের

২০১৫ সাল পুরোটা ছিল বিশ্বনেতাদের জন্য একটি বহুমুখী চ্যালেঞ্জের বছর। জঙ্গিবাদের বিস্তার, শরণার্থী সংকট, ঘরোয়া রাজনীতিতে টানপোড়েন, অর্থনীতি, জলবায়ু ইস্যুসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিশ্বনেতাদের একের পর এক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে।  এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দৌড়ঝাঁপের ফাঁকফোকড়ে কিছু মজার কান্ডও ঘটিয়েছেন তারা। এসব ঘটনার মধ্যে আটটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা তুলে ধরা হলো রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য।

চিৎপটাং মুগাবে : সপ্তমবারের মতো নির্বাচিত হয়ে দেশ চালাচ্ছেন জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে। বোঝাই যাচ্ছে দেশটিতে মুগাবের জনপ্রিয়তা ও প্রতাপ দুটাই ব্যাপক। তবে ব্যাপক ক্ষমতার দাপট থাকলেও বছরের শুরুতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল মুগাবেকে। আর তার এই ব্রিবতকর পরিস্থিতির ছবি বিরোধী শিবিরতো বটেই ইন্টারনেট দুনিয়ায় বেশ হাস্যরসের সৃষ্টি করেছিল। ফেব্রুয়ারিতে ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিসআবাবায় পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর সম্মেলন শেষে দেশে ফেরেন মুগাবে। বিমান থেকে নামার সময় একটি সিড়ি বাকি থাকতেই পা ফসকে যায় তার। এতে ভারসাম্য হারিয়ে সামনের দিকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যান তিনি। এ সময় দ্রুত প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ছুটে আসে। তবে তাদের কারো সাহায্য ছাড়াই মুগাবে উঠে সোজা তার গাড়িতে উঠে চলে যান। প্রেসিডেন্ট চলে যাওয়ার পরপরই হুশ ফেরে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের । মুগাবের বিব্রতকর এই ছবিটি যাতে প্রকাশ না পায় সেজন্য সেখানে উপস্থিত ফটো সাংবাদিকদের ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ছবিগুলো নষ্ট করার চেষ্টা করেন তারা। তারপরও বার্তা সংস্থা এএপির কাছে ছবিগুলি পৌঁছে যায়।

কোনো রকমে নিজেকে রক্ষা করলেন রবার্ট মুগাবে
কোনো রকমে নিজেকে রক্ষা করলেন রবার্ট মুগাবে

মের্কেলের মাছ খাওয়া: জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেলের বড় হয়েছেন সাবেক পূর্ব জার্মানিতে। সমাজতান্ত্রিক পূর্ব জার্মানিতে খাদ্য সংকট থাকায় নাগরিকদের খাবার সংগ্রহের জন্য লাইন ধরতে হতো। তাই খাবারের প্রতি একরকম আকর্ষণ এখনো মের্কেলের মধ্যে রয়ে গেছে। মের্কেল নিজে পাঁকা রাধুনি। এখনো তিনি স্বামীর সকালের নাস্তাটা নিজেই তৈরি করেন। গত ২৬ মে মের্কেল এক অনুষ্ঠান উপলক্ষে জার্মানির সসেনটিজের মৎসখামারে গিয়েছিলেন। সেখানে অতিথিদের জন্য রান্না করা হয়েছিল হেরিং মাছ। মের্কেল মাছের একটি টুকরা নিয়ে পুরোটাই মুখে পুরে দেন। তার এই ছবি প্রকাশের পর অনেকেই মন্তব্য করেছিলেন, বিশ্বনেতাদের এভাবে জনসম্মুখে খাওয়া উচিৎ নয়।

হেরিং মাছের টুকরা পুরোটাই মুখে পুরছেন মের্কেল
হেরিং মাছের টুকরা পুরোটাই মুখে পুরছেন মের্কেল

ওবামা অপেক্ষায় থাক : বছরের শুরুতে ইরান ইস্যুতে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্কের বেশ টানপোড়েন যাচ্ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার। যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পুরনো বন্ধু সৌদি আরব বেশ ক্ষুব্ধই ছিল। সৌদি আরবের সঙ্গে  এ বিষয়ে আরব উপসাগরীয় দেশগুলিও একাত্মা প্রকাশ করেছিল। গত ১৩ মে হোয়াইস হাউজে গিয়েছিলেন গালফ কো অপরাশেন কাউন্সিলের মহাসচিব আব্দুল লতিফ বিন রশিদ আল জায়ানি। সেখানে তাকে স্বাগত জানান প্রেসিডেন্ট ওবামা। ওবামা যখন করমর্দনের জন্য  হাত  বাড়িয়েছিলেন, জায়ানি তখন উপস্থিত সমর্থকদের দিকে হাত নাড়ছিলেন। বিব্রত ওবামাকে শেষ পর্যন্ত হাত গুটিয়েই নিতে হলো। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট ছবির নিচে মন্তব্যে লিখেছে এই ছবিটিই প্রমাণ করে ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও উপসাগরীয় দেশগুলির বিপরীতমুখী অবস্থান।

হাত বাড়িয়েই রইলেন ওবামা
হাত বাড়িয়েই রইলেন ওবামা

অবাক করমর্দন : হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের সঙ্গে ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জিন ক্লড জাঙ্কারের সম্পর্কটা বোঝা মুশকিল। গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্বাঞ্চলীয় দেশগুলির সঙ্গে সম্মেলনে জাঙ্কার রসিকতাচ্ছলে, ‘হ্যালো ডিকটেটর’ সম্বোধন করে রীতিমতো স্যালুট ঠুকেছিলেন অরবানকে। অনেকের ধারণা হাঙ্গেরির ডান ঘেঁষা নীতির কারণেই জাঙ্কার এ রসিকতা করেছিলেন। চলতি বছরের শুরুতে এক সংবাদ সম্মেলনে জাঙ্কারের সঙ্গে করমর্দন করছিলেন অরবান। জাঙ্কার হাত না ছেড়েই অরবানকে টেনে নিয়ে তিনি চলে গেলেন সম্মেলনের বাইরে। জাঙ্কারের এই কাণ্ড উপস্থিত সাংবাদিকদের মধ্যে বেশ হাস্যরসের সৃষ্টি করে।

ভিক্টর অরবানকে টেনেই নিয়ে চললেন ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জিন ক্লড জাঙ্কার
ভিক্টর অরবানকে টেনেই নিয়ে চললেন ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জিন ক্লড জাঙ্কার

মোদির কোলাকুলি : চলতি বছর বিভিন্ন কারণেই বিশ্বমঞ্চে আলোচিত ব্যক্তি ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা থেকে শুরু করে বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতাই ভারত সফর করেছেন। মোদিও দেশের বাইরে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। এছাড়া চলতি বছর তিনি ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গের সঙ্গেও দেখা করেছেন। দেশে হোক কিংবা বিদেশে সবখানেই মোদি যে কাজটি করেছেন সেটি হচ্ছে  কোলাকুলি। ভারতীয় ঢঙের মোদির এ কোলাকুলি থেকে কেউই রেহাই পাননি।

মোদির কোলাকুলি থেকে রেহাই পেলেন না ওবামাও
মোদির কোলাকুলি থেকে রেহাই পেলেন না ওবামাও

জারিফের হাসি : প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় পরে ইরানের ওপর থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ সরিয়ে নিচ্ছে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। এর সবই সম্ভব হয়েছে গত জুলাইয়ে পরমাণু কর্মসূচি সীমিতকরণের শর্তে ইরানের সঙ্গে ছয় জাতির চুক্তির বদৌলতে। গত ৩০ জুন ছিল চুক্তি সম্পাদানের শেষ সময়। কিন্তু বেশ কিছু ইস্যুতে সমঝোতা না হওয়ায় জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত আলোচনা চলে। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় চলছিল শ্বাসরুদ্ধকর এই আলোচনা। তবে এই আলোচনায় সবকিছু ছাপিয়ে যে ছবিগুলো সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, সেগুলি হচ্ছে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাবেদ জারিফের হাস্যময় ছবি। হোটেল থেকে শুরু করে সম্মেলন কেন্দ্র যেখানেই জাবেদের দিকে ক্যামেরা তাক হয়েছে তার মুখভর্তি হাসি ফ্রেমবন্দী হয়েছে।

হাসতে হাসতে যেন পড়েই যাচ্ছেন জারিফ
হাসতে হাসতে যেন পড়েই যাচ্ছেন জারিফ

পেঁয়াজখোর অ্যাবট : টনি অ্যাবট আর অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে নেই। গত সেপ্টেম্বরে দলীয় প্রধানের পদ হারানোয় প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকেও তাকে সরে যেতে হয়েছে। গত মে মাসে অ্যাবট অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়ায় একটি কৃষি খামার পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন। সেখানে থাকা বাদামি রঙের সম্পূর্ণ খোসাসহ কয়েকটি পেঁয়াজ কাঁচাই খেয়ে ফেলেন তিনি। এ সময় অ্যাবট বলেন, ‘এটা অন্য পেঁয়াজের তুলনায় ভালো। আমি দীর্ঘদিন ধরে পেঁয়াজ খাচ্ছি।’ তবে পেঁয়াজ খাওয়ার পরে অ্যাবটের চেহারায় তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এমনকি তার চোখে পেঁয়াজের ঝাঁঝের কোনো চিহ্নও দেখা যায়নি।

আস্ত কাঁচা পেঁয়াজটাই খেয়ে ফেললেন অ্যাবট
আস্ত কাঁচা পেঁয়াজটাই খেয়ে ফেললেন অ্যাবট

প্রধানমন্ত্রীকে কোলে তুললো সাংসদ : বিশ্বের অনেক দেশের পার্লামেন্টে সাংসদদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তবে এসব ক্ষেত্রে সাংসদরা নিজেরা হাতাহাতি করলেও দূরে থাকেন প্রধানমন্ত্রী। তবে ইউক্রেনের পার্লামেন্টে সেই রেকর্ডও ভঙ্গ হলো। গত ১১ ডিসেম্বর পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী আর্সেনেই ইয়েৎসেনিউক সরকারের সাফল্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখছিলেন। বক্তব্যের মাঝামাঝি সময়ে প্রেসিডেন্ট পেত্রো পেরশেঙ্কোর সলিডারিটি দলের সদস্য ওলেগ বার্না ফুলের তোড়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যেখানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন, সেখানে যান। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফুলের তোড়াটি দেন। প্রধানমন্ত্রী তোড়াটি ধরার সঙ্গে সঙ্গে বার্না তাকে পাঁজাকোলা করে তুলে বক্তব্য দেওয়ার স্থান থেকে বের করে নিয়ে আসেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আর্সেনেইয়ের দলের পার্লামেন্ট সদস্যরা ছুটে এসে বার্নাকে কিল-ঘুষি দেওয়া শুরু করেন। একপর্যায়ে উভয় দলের সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। বেশ কয়েক মিনিট পর উভয় পক্ষের জ্যেষ্ঠ পার্লামেন্ট সদস্যদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে অবশ্য এ ঘটনার জন্য দুই দলের সদস্যরাই ক্ষমা চেয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী আর্সেনেই ইয়েৎসেনিউককে কোলেই তুলে নিলেন সাংসদ ওলেগ বার্না
প্রধানমন্ত্রী আর্সেনেই ইয়েৎসেনিউককে কোলেই তুলে নিলেন সাংসদ ওলেগ বার্না


মন্তব্য চালু নেই