বঙ্গভবনে যাচ্ছে ২০ জনের নাম
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটির কাছে ২৫টি রাজনৈতিক দল ১২৫ জনের নাম প্রস্তাব করেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ নামগুলো ছয় সদস্যের সার্চ কমিটির কাছে দেয়া হয়। কমিটির সদস্যরা নামগুলো যাচাই-বাছাই করতে গতকালই বিকেলে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে তারা প্রস্তাবিত ১২৫ জনের নাম যাচাই-বাছাই করে ২০ জনের নামের খসড়া তালিকা প্রস্তুত করেন। ইসি গঠনের জন্য এই ২০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেবে সার্চ কমিটি। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সার্চ কমিটির বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব শফিউল আলম।
এদিকে গতকাল বেলা পৌনে ১টার দিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ সচিবালয়ে গিয়ে পাঁচজনের নাম জমা দেন। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তাবিতরা হলেন- সাবেক মুখ্য সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান, সাবেক আইজিপি নূর মুহাম্মদ, সাবেক মুখ্য সচিব এমএ করিম, সাবেক সচিব মঞ্জুরুল হোসেন, সাবেক তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।
অন্যদিকে, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী ও চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পাঁচ সদস্যের একটি নামের তালিকা জমা দেন। সূত্র জানায়, বিএনপি যাদের নাম দিয়েছে তারা হলেন- সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক এবং পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জেড এম তাহমিদা বেগম।
এদিকে বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান জানান, নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে তাদের দলের পক্ষ থেকে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. সা’দত হুসাইন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নাসিম আখতার হোসাইনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ চেয়ারম্যান বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী সংবাদ প্রতিদিনকে বলেন, তার দলের পক্ষ থেকে শুধু একজন নারী সদস্যের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি হলেন নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি।
রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে নাম প্রস্তাবের জন্য গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত সময় নির্ধারিত ছিল। এ সময় শেষে অতিরিক্ত সচিব আবদুল ওয়াদুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি মোট ৩১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সাক্ষৎ করেন। পরে রাষ্ট্রপতির গঠন করা সার্চ কমিটি ওই ৩১টি দলের কাছে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য নামের তালিকা চেয়ে চিঠি দেয়। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে ২৫টি দল সচিবালয়ে এসে নামের তালিকা জমা দেয় এবং আমরা এগুলো সার্চ কমিটির কাছে পৌঁছে দিয়েছি।’
নামের তালিকা জমা দেয়নি- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ এবং গণফোরাম।
রাজনৈতিক দলগুলো সার্চ কমিটিকে সাচিবিক সহযোগিতা দেয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল ওয়াদুদের কাছে প্রস্তাবিত নামের তালিকা জমা দেন। সময়সীমার পর আবদুল ওয়াদুদ বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবিত নামের চিঠি পেয়েছি সিলগালা খামে। সেগুলো সার্চ কমিটির কাছে জমা দিয়েছি। ভেতরে কী আছে তা আমাদের জানার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ৩১টি রাজনৈতিক দলকে নাম চেয়ে চিঠি দেয়া হলে তাদের মধ্যে ২৭ দলের সিলগালা করা চিঠি আমরা পাই।
এই ২৭ দলের মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি (রব) চিঠি পাঠালেও সেখানে নির্বাচন কমিশনের সদস্য বাছাইয়ে কারও নাম দেয়া হয়নি। কেন নাম দেয়া হয়নি, সে বিষয়টি জানিয়েই তারা চিঠি দিয়েছে।
নাম প্রস্তাবকারী দলগুলো হলো- আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), ইসলামী ঐক্যজোট, জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), সাম্যবাদী দল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), জাসদ (আম্বিয়া), বাসদ, গণতন্ত্রী পার্টি, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, গণফ্রন্ট, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) ও জাকের পার্টি।
সার্চ কমিটির আহ্বানে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়ে নাম জমা দিয়েছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, এলডিপি, জাসদ, ইসলামী ঐক্যজোটসহ ২৭টি রাজনৈতিক দল। দুটি দল কারণ ব্যাখ্যা করে নাম জমা দেয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পাওয়া নামগুলো ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটিকে দেয়া হলে তারা যাচাই-বাছাই করতে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে বৈঠকে বসেন।
বেলা পৌনে ৪টার দিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম ও অতিরিক্ত সচিব আবদুল ওয়াদুদ সচিবালয় থেকে নাম নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জের উদ্দেশে রওনা হন।
মন্তব্য চালু নেই