ফ্রান্সে হামলাকারী ট্রাকচালক নামাজ পড়তেন না, পেটাতেন স্ত্রীকেও

ফ্রান্সের পর্যটন শহর নিস-এ হামলাকারী ট্রাক চালকের পরিচয় ও ছবি প্রকাশ করেছে দেশটির পুলিশ। হামলাকারী ট্রাক চালক তিউনিসিয়ান বংশোদ্ভূত ফরাসি নাগরিক মোহাম্মদ লাহৌআইজ বৌহলেল। ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৌহলেলকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকেই পুলিশ নজরদারিতে রেখেছে। অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে তাকে সন্দেহ করা হচ্ছিল। ৩১ বছরের বৌহলেল মুসলমান হলেও ইসলামি কোনও বিধান ও রীতি তিনি পালন করতেন না।

বৃহস্পতিবার রাতে বাস্তিল দিবস উদযাপনের সময় রাস্তায় ভিড়ের মধ্যে ট্রাক চালিয়ে ৮৪ জনকে হত্যা ও ২০২ জনকে আহত করেন বৌহলেল। পরে পুলিশ গুলি করে তাকে হত্যা করে।

ট্রাক চালকের স্ত্রীর এক জ্ঞাতি ভাই জানান, বৌহলেল কখনও নামাজ পড়তেন না, মসজিদে যেতেন না এবং স্ত্রীকে মারধর করতেন। তার তিন সন্তান রয়েছে। স্ত্রীর সঙ্গে তার আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া চলছিল।

ডেইলি মেইলের খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, গাড়ি চালানো অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়ে এর আগে দু্র্ঘটনায় পড়েছিলেন বৌহলেল। ওই দুর্ঘটনায় চারটি প্রাইভেট কার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এরপর তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

বৌহলেলের স্ত্রী হাজের খালফাল্লাহ জ্ঞাতি ভাই ওয়ালিদ হামউ মেইল অনলাইনকে বলেন, বৌহলেল ধার্মিক ছিল না। মসজিদে যেত না, নামাজ পড়ত না ও রোজা রাখত না। সে মদ্য পান করত, শুকরের মাংস খেত ও মাদক গ্রহণ করত। ইসলামে এসবই নিষিদ্ধ। সে মুসলমান ছিল না। এমনকী সে তার স্ত্রীকে মারধর করত।

বৃহস্পতিবার ট্রাকচাপায় হত্যাযজ্ঞ চালানোর কয়েক ঘণ্টা আগে পুলিশ ট্রাকসহ তাকে থামিয়েছিল। এ সময় বৌহলেল পুলিশকে জানান, তার ট্রাকে আইসক্রিম রয়েছে এবং ওয়াটার ফ্রন্টের কাছে তাকে ট্রাক পার্কিংয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, শুক্রবার সকালে তার স্ত্রীকে পুলিশ কাস্টডিতে নেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দারা তাদের ১২ তলায় অ্যাপার্টমেন্ট ও আরেকটি ভাড়া বাসায় তল্লাশি চালিয়েছেন ভোরেই।

বৌহলেল একটি ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানের চালক হিসেবে কাজ করতেন। বৌহলেলের তিউনিসিয়ার একই গ্রামের উইসাম নামের আরেক চালক দাবি করেছেন, বৃহস্পতিবার রাতেই মদ্যপান করে মাতাল অবস্থায় কয়েকজন সহকর্মীদের সঙ্গে তর্ক করেছেন বৌহলেল। এ সময় বৌহলেল এর এক সহকর্মী বলেছিলেন তুমিতো কিছুই না। জবাবে বৌহলেল বলেন, একদিন তোমরা আমার কথা মনে করবে। তিনি বলেন, বৌহলেল হচ্ছেন তেমন মানুষ যে মদ্যপান করেন ও গাঁজা সেবন করেন।

বৌহলেলের আরেক প্রতিবেশী হান্নান তাকে সম্পর্ক ও যোগাযোগ রাখার অযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন। তার ওপরের তলাতেই বৌহলেল বাস করতেন। হান্নান বলেন, তিনি সব সময় খারাপভাবে আমাদের দিকে তাকাতেন। বাঁকা চোখে তাকানোর ফলে আমরা তাকে এড়িয়ে চলতাম।

হামাউ জানান, তার বোন পুলিশের কাছে রয়েছেন। সকাল দশটায় পুলিশ তাকে নিয়ে যায় নিরাপত্তার স্বার্থে। দু’বছর আগেই স্ত্রীর কাছ থেকে আলাদা ছিলেন বৌহলেল।

আরেক প্রতিবেশী নাসিম বলেন, বৌহলেল স্ত্রী ও পরিবার নিয়ে নিসের এই ব্লকের ফ্ল্যাটে থাকতেন। আমি তার কাছের ফ্ল্যাটেই বাস করতাম। তিনি মৌলবাদী মুসলিম ছিল না। মদ পান করতেন, মেয়েদের পেছনে লেগে থাকতেন, নাইটক্লাবে যেতেন। কখনোই মসজিদে যেত না। তিনি কোনোভাবেই ধার্মিক ছিলেন না। দু’বছর আগে চমৎকার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছে।

স্ত্রীর সঙ্গে বেশ কয়েক বার বাকবিতণ্ডার ও সহিংসতার পর দু’বছর আগে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। বিবাহবিচ্ছেদ চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকেই হতাশ ছিলেন বৌহলেল। বিচ্ছেদের পর একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন তিনি।

বৌহলেলের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও চুরির অভিযোগে নজরদারিতে রেখেছে পুলিশ। গত ২৭ জানুয়ারিতে তাকে একবার গ্রেফতারও করেছিল পুলিশ।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) রাতে বাস্তিল দিবস উদযাপনের জন্য ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর নিসের প্রমেনাদে দেজ অ্যাংলেইসে আতশবাজি প্রদর্শনী দেখতে জড়ো হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। এ সময় ২০ টনের একটি ভারী ট্রাক নিয়ে বৌহলেল বেপরোয়াভাবে ওই জমায়েতের দিকে ছুটে যান। এ সময় আতঙ্কিত লোকজন এদিক-সেদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। এ পর্যন্ত বৌহলেলের ট্রাকচাপায় ৮৪ জন নিহত ও ২০২ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন অন্তত ৫০ জন। পরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে বৌহলেলের মৃত্যু হয়। সূত্র: মেইল অনলাইন।



মন্তব্য চালু নেই