ফোন নম্বর স্পোফিং করে প্রতারণা, গ্রেপ্তার ৯
সিম ক্লোনিং জালিয়াতির পর এবার নম্বর স্পোফিং জালিয়াতি করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রতারক চক্র।
প্রতারক চক্রটি সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নম্বর স্পোফিং করে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের টার্গেট করে কাজ করছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিএসইসি ভবনে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-৪ এর কমান্ডিং অফিসার অ্যাডিশনাল ডিআইজি লুৎফর কবির।
এর আগে বুধবার রাত ১০টার দিকে উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর এলাকায় এক অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-৪। এই অভিযানে নম্বর স্পোফিং চক্রের মূল হোতা মো. আশরাফুল ইসলাম ওরফে আপেলসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যরা হলেন মাহমুদুল হাসান ওরফে হৃদয় চৌধুরী, মো. রকিবুল ইসলাম, মো. মাহিদুল ইসলাম ওরফে মিলন, মো. আবু কাউছার ওরফে সাবু, মো. নজমুল হাসান, মো. আমান উল্লাহ আমান, মো. সাগর হোসাইন ওরফে সাগর ও বিল্লাল হোসাইন ওরফে সাগর।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ২২টি মোবাইল ফোনসেট, ৫৩টি সিম কার্ড, দুটি ল্যাপটপ, চারটি মনিটর, একটি মডেম ও প্রতারণা করে নেওয়া নগদ ১৭ হাজার ২৫ টাকা উদ্ধার করা হয়।
লুৎফর কবির বলেন, ‘নাম্বার স্পোফিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে যে কারো মোবাইল ফোন নম্বর তৈরি করে সেই নম্বর দিয়ে যে কাউকে ফোন দেওয়া যায়। এতে বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ অতি সহজে বিভ্রান্ত হয়ে প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে দেয়। সম্প্রতি ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বর স্পোফিং করে ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে ফোন দিয়ে সরকারি প্রকল্প বরাদ্দের কথা বলে বিকাশের মাধ্যমে ৭০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। এ রকম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানের মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করে ওই জেলার ডিসির কাছে ব্যক্তিগত সমস্যা দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর পর চেয়ারম্যানের নম্বরে ফোন দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করতে গিয়ে বোঝা যায় প্রতারণা করা হয়েছে। পরে প্রতারণার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি ও মামলা হয়।
‘শুধু এ দুজন নন, এ প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে ডিসি, ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যানসহ কমপক্ষে ৪০ জন ব্যক্তি প্রতারিত হয়েছেন। সারা দেশে এ ধরনের আরো কয়েকটি চক্র রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করা গেলে প্রতারিতদের সংখ্যা কেমন তা বোঝা যাবে।’
লুৎফর কবির বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, ‘আইটিইএল মোবাইল ডায়ালার’ নামের সফটওয়ারকে প্রতারক চক্রটি ডেভেলপ করে ‘ইয়েস কার্ড মোবাইল অ্যাপ’ বানিয়েছে। ইয়েস কার্ড অ্যাপ মোবাইল ফোন সেটে ইনস্টল করে সেখানে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করতে হয় এবং ফোন করার জন্য মিনিট কিনতে হয়। ওই মিনিট ব্যবহার করে চক্রের সদস্যরা টার্গেট ব্যক্তিকে ফেন দেয়। যদি টার্গেট ব্যক্তি ফোন ব্যাক করেন তবেই তিনি বুঝতে পারবেন এটি প্রতারণা ছিল, তা না হলে তিনি প্রতারণার ছক কিছুতেই বুঝতে পারবেন না।
প্রতারণায় ব্যবহৃত অ্যাপসের নিয়ন্ত্রণকারী সার্ভার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকায় চক্রটিকে আইনের আওতায় আনা সময়সাপেক্ষ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আশা করি পরিচিত নম্বর থেকে ফোন দিয়ে কেউ টাকা চাইলে নিরাপত্তার স্বার্থে ওই নম্বরে ফোন ব্যাক করে বিষয়টি নিশ্চিত হবেন সবাই।’
মন্তব্য চালু নেই