ফেরার আকুতি থাইল্যান্ডে উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশীর

দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন থাইল্যান্ডের সঙ্খলার সাদাও জেলায় গণকবরের পাশ থেকে জীবিত উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশের নাগরিক তুনুসার (২৮)। থাইল্যান্ডের রোহিঙ্গা এসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল কালামের কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ আকুতি জানিয়েছেন তিনি।

ব্যাংকক পোস্টের সোমবারের এক প্রতিবেদনে আব্দুল কালামের সাক্ষাৎকারের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে তিনি থাই-মালয়েশিয়া সীমান্ত সংলগ্ন স্থানে অন্তত ৬০টি গোপন নির্যাতন শিবিরের (ডিটেনশন ক্যাম্প) অস্তিত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। এ সময় তিনি সাদাওয়ের পাদং বেসারের বান তালোর বনাঞ্চল থেকে উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশী তুনুসারের রেকর্ড করা সাক্ষাৎকার শোনান।

পাদাং বেসার হাসপাতাল থেকে গত শনিবার তুনুসারের সাক্ষাৎকার নেন আব্দুল কালাম। সাক্ষাৎকারে নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা তুলে ধরেছেন তুনুসার।

তুনুসার জানান, তিনি নয়মাস ধরে শিবিরটিতে বন্দী ছিলেন। তাকে বাংলাদেশের নিজ এলাকা থেকে অপহরণ করে নৌকায় করে থাইল্যান্ডের এই নির্যাতন শিবিরে আনা হয়।

তিনি জানান, তাকে নিয়মিত মারধর করা হত। বাংলাদেশে তার মায়ের কাছে ফোন করে টাকা চাওয়া হয়। কিন্তু তার মা তা দিতে না পারায় তাকে আরও বেশি নির্যাতন করা হতো বলে জানান তুনুসার।

তুনুসার বলেন, ‘আমি শিবিরটিতে থাকার সময় অন্তত ৪০ জনকে মরতে দেখেছি। এর মধ্যে ১০ জন ছিল বাংলাদেশী। বাকিরা মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা। তারা পুষ্টিহীনতা, ক্ষুধা ও প্রহারের কারণে মৃত্যুবরণ করেন।’

ফেরার আকুতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে ফিরতে চাই।’

তুনুসার জানান, হায়ী, আমার্তালি, অরনুয়া, স’লিম, রানা ও হেইদ্রা এলাকায় আরও নির্যাতন শিবির রয়েছে। মানবপাচারকারীরা এখানে লোকদের এনে নির্মম অত্যাচার চালিয়ে অর্থ আদায় করে থাকে।

গণকবরের পাশ থেকে জীবিত উদ্ধার হওয়া অপর ব্যক্তি মিয়ানমারের নাগরিক। তিনি থাই পুলিশের কাছে নির্যাতিত হওয়ার কাহিনী বর্ণনা করেছেন।

জানা গেছে, গ্রামবাসীর খবরের ভিত্তিতে থাই পুলিশ গত শুক্রবার সাদওয়ের পার্বত্য অঞ্চলে গোপন অভিযান চালিয়ে ৩০টি গণকবরের সন্ধান পায়। অবৈধভাবে থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়া যাওয়ার ক্ষেত্রে এ অঞ্চলটি অন্যতম রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর আগেও থাই কর্তৃপক্ষ ওই অঞ্চল থেকে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন অবৈধ অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে।

থাইল্যান্ডের নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, গণকবরের সন্ধান পাওয়া স্থানটি একটি গোপন নির্যাতন শিবির। মানবপাচারকারীরা প্রথমে অবৈধ অভিবাসীদের ওই ক্যাম্পে আটকে রাখত। পরে সুবিধামতো তাদের অন্য জায়গায় পাঠাত। আর সুযোগ না হলে ওখানেই শেষ হতো অনেকের জীবন।



মন্তব্য চালু নেই